December 23, 2024, 12:30 am
জহির রায়হান সোহাগ চুয়াডাঙ্গা/
সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গায় হঠাৎ বেড়েছে করোনাভাইরাসের সংক্রমন। আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশের বাড়ি দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী কার্পাসডাঙ্গা এলাকায়। দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে ভারত ফেরতদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত ১১ জনের মধ্যে ৭ জনের বাড়িও দামুড়হুদা উপজেলায়।
ভারত সীমান্তবর্তী হওয়ায় ওই উপজেলার হরিরামপুর ও শিবনগর গ্রামের সাধারণ মানুষের করোনা পরীক্ষা করছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। আজ বুধবার সকাল ১০ টা থেকে শিবনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোভিড-১৯ র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হচ্ছে। দুপুর পর্যন্ত ৮৭ জনের করোনা পরীক্ষায় ৮ নারীসহ ১৮ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন। সকালে ওই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান আলী মুনছুর বাবু। এসময় দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা রহমান, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) সুদীপ্ত কুমার সিংহ, দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল খালেকসহ কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত দামুড়হুদা উপজেলা কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে বেলা ১১টার দিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমন বাড়ায় দামুড়হুদা উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী কার্পাসডাঙ্গা এলাকা আংশিক লকডাউন করেছে উপজেলা প্রশাসন। লকডাউনকৃত এলাকাগুলো হলো- কার্পাসডাঙ্গা-ঠাকুরপুর সড়ক, কার্পাসডাঙ্গা-কুতুবপুর সড়ক, কার্পাসডাঙ্গা মিশনপাড়া সড়ক, তালসারি মোড়, নাটুদহের গোচিয়ারপাড়া মোড় ও ফকিরপাড়া মোড়। ওইসব স্থানে বাঁশ ও গাছের গুড়ি ফেলে সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া ওই এলাকার চুল ব্যবসায়ীদের সকল কার্যক্রম এক মাসের জন্য স্থগিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল জানান, দামুড়হুদা উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী হরিরামপুর ও শিবনগর গ্রামে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনার উপসর্গ থাকলেও তা পরীক্ষা করাতে অনীহা প্রকাশ করেছে এখানকার মানুষ। তাই আজ সকাল থেকে তাদের র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হচ্ছে। দুপুর পর্যন্ত ৮৭ জনের করোনা পরীক্ষায় ৮ নারীসহ ১৮ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের শরীরে করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট আছে কিনা তা পরীক্ষার জন্য তাদের নমুনা আইইডিসিয়ারে পাঠানো হবে। সংক্রমন বাড়লে পর্যায়ক্রমে বাকী গ্রামের মানুষেরও করোনা পরীক্ষা করা হবে।
এদিকে, গত ২৪ ঘন্টায় এ জেলায় নতুন করে ১৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১ হাজার ৯৯৯ জনে। এরমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৮১৯ জন ও মারা গেছেন ৬৮ জন। এছাড়া জেলার যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার পর ৫১ জনকে ছাড়পত্র দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা রহমান জানান, গেল সোমবার করোনার সংক্রমনরোধে জরুরী সভার আয়োজন করে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত দামুড়হুদা উপজেলা কমিটি। সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তারই অংশ হিসেবে আজ কার্পাসডাঙ্গা এলাকার ৬ টি স্থান লকডাউন করা হয়েছে। ওই এলাকাগুলো নিয়মিত তদারকি করা হবে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে করা হবে জরিমানাও। এছাড়া ওই এলাকার চুল ব্যবসায়ীদের সকল কার্যক্রম এক মাসের জন্য স্থগিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সেদিন উপজেলা কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সভায় যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়-
দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী প্রতিটি ইউনিয়নের ওয়ার্ডভিত্তিক করোনা বিস্তার প্রতিরোধ সংক্রান্ত মনিটরিং কমিটি গঠন করা হবে। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির শতভাগ হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে। হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তি ও তার পরিবারকে খাদ্য, ঔষধসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী তার বাড়ীতে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। উপজেলা পরিষদ এবং স্বাস্ব্য বিভাগের সমন্বয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩৪ শয্যা বিশিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি যদি সঠিকভাবে হোম কোয়ারেন্টিন পালন না করেন তবে তাকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন পালনে বাধ্য করা হবে। কোন ব্যক্তির মধ্যে করোনা উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত নমুনা পরীক্ষা করাবেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। শিবনগর, হরিরামপুর এলাকায় করোনা সংক্রমণের মাত্রা অধিক হওয়ায় আগামী ২ জুন সকাল ৯ টায় জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, পুলিশ বাহিনী সকলের সমন্বয়ে নমুনা সংগ্রহ ক্যাম্প করা হবে। এসময় জনসচেতনতামূলক প্রচারণাও চালানো হবে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ সার্বক্ষণিক মাইকিং এর মাধ্যমে করোনা সংক্রান্ত জনসচেতনতামূলক প্রচারণা অব্যাহত রাখবেন।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়- ঝাঁঝাঁডাঙ্গা, নাস্তিপুর, কামারপাড়া মোড়, বড়বলদিয়া মোড়, ফুলবাড়ী, চাকুলিয়া, ঠাকুরপুর, কুতুবপুর, মুন্সীপুর, জাহাজপোতা, শিবনগর, হরিরামপুর, জগন্নাথপুর বাজার অর্থাৎ যেসব এলাকা একদম সীমান্তবর্তী এবং করোনা সংক্রমণেরর হার বেশি সেসব এলাকায় উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ বাহিনী, বিজিবি, আনসার সকলের উপস্থিতিতে পর্যায়ক্রমে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি মাস্ক, সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণের ব্যবস্থাও করা হবে। সীমান্ত এলাকায় ভারত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর আগমন বন্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে বিজিবির পাশাপাশি পুলিশ বাহিনী, আনসার, গ্রাম পুলিশের টহল জোরদার করতে হবে। সংশ্লিষ্ট বাহিনীর পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী তরুনরাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর তথ্য, করোনা সংক্রমণের তথ্য, করোনায় মৃত ব্যক্তির তথ্যসহ করোনা সংক্রান্ত যেকোন তথ্য ০১৭১৮৮৯৭৫৮৮ এই মুঠোফোন নম্বরে প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়। প্রতিদিন স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত চলমান থাকবে। এছাড়া, সরকারী বিধি লঙ্ঘন করে করোনা সংক্রমণ বিস্তারে সাহায্যকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply