December 23, 2024, 4:24 am
জহির রায়হান সোহাগ,চুয়াডাঙ্গা
চুয়াডাঙ্গায় হঠাৎ শেষ হয়েছে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের মজুদ। টিকাদান কেন্দ্রে এসে তা বন্ধ দেখে বিষয়টি জানতে পারছে মানুষ। টিকার ডোজ না নিয়েই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে দূর দূরান্ত থেকে আসা মানুষগুলোকে। এতে ভোগান্তীতে পড়েছেন তারা। এদিকে, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরছেন ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশেীরা। তাদের মধ্যে অনেকেই করোনা শনাক্ত হয়েছেন। তাদের শরীর করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট আছে কিনা তা পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সে প্রতিবেদন এখনও এসে পৌঁছায়নি চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগে। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের মজুদ শেষ হওয়ায় ও ভারত ফেরত করোনায় আক্রান্তদের নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন এ জেলার মানুষ।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি প্রথম ধাপে করোনাভাইরাসের ৫৮ হাজার টিকা চুয়াডাঙ্গায় পৌঁছায়। ফেব্রুয়ারি মাসের ৭ তারিখ থেকে প্রথম ডোজ দেয়া শুরু হয়। পরে গত ৭ এপ্রিল দ্বিতীয় ধাপে ৩৯ হাজার টিকা পাঠানো হয়। পরদিন ৮ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় ধাপের ৩৯ হাজার টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। টিকা প্রদানে জেলার তিনটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল, পুলিশ হাসপাতাল ও বিজিবি হাসপাতালে টিকাদান কেন্দ্র খোলা হয়। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের ৩১ হাজার ১০৪ জন টিকা গ্রহণ সম্পন্ন করেছেন। ২৬ হাজার ৭৬৭ জন দ্বিতীয় ডোজের টিকা গ্রহণ করেননি। দু’টি ধাপে মোট ৮৮ হাজার ৯৭৫ জন টিকার আওতায় এসেছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগ আরও জানায়, টিকা নিতে আগ্রহী ৬৬ হাজার ৫৭৫ জন মানুষ অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে আবেদন করেও টিকার আওতায় আসেনি ৮ হাজার ৭০৫ জন মানুষ। গত বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের মজুদ শেষ হয়েছে। শুক্রবার থেকে বন্ধ রয়েছে টিকাদান কার্যক্রম।
এদিকে, আজ বিকেল ৩ টা পর্যন্ত ভারতে আটকে পড়া আরও ৪২ জন বাংলাদেশী চুয়াডাঙ্গার চুয়াডাঙ্গার দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরেছেন। এ নিয়ে গত ছয় দিনে দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে মোট ৪৫৭ জন বাংলাদেশী দেশে ফিরলেন। এদের মধ্যে ৮ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের শরীরে করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট আছে কিনা ? এবং তা ছড়িয়ে পড়ছে কিনা ? এ নিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকুরি করেন জাবেদ হোসেন। তিনি জানান, আমাদের কোন ছুটি নেই। জরুরী সেবার আওতায় আমাদের হাসপাতালসহ বিভিন্ন এলাকায় ওষুধ সরবরাহ করতে হয়। এরই মধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজের টিকাও শেষ হয়েগেছে। আবার দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরছে ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশীরা। তাদের মধ্যে অনেকেই করোনায় আক্রান্ত। তাদের শরীরে করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট আছে কিনা তা এখনও স্পস্ট নয়। সব মিলিয়ে খুব দুষ্চিন্তায় দিনপার করছি।
আজ দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে করোনার দ্বিতীয় ডোজ নিতে এসেছিলেন সাব্বির হোসেন। টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ডোজ না নিয়েই বাড়ি ফিরেছেন তিনি। তিনি জানান, ভ্যাকসিনের মজুদ যদি শেষ হয়ে যায় তাহলে বিষয়টি প্রচার করে জানাতে হবে। দূর দূরান্ত থেকে এসে মানুষকে টিকা না নিয়েই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। এতে খুব ভোগান্তী পোহাতে হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান জানান, বর্তমানে স্বাস্থ্য বিভাগে করোনার কোন ডোজ নেই। বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। এমতাবস্থায় জনসাধারণকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
তিনি আরও জানান, এ পর্যন্ত ভারত ফেরত ৮ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন। তাদের সদর হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে নিবীড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তাদের শরীরে করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট আছে কিনা তা পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সে প্রতিবেদন এখনও এসে পৌঁছায়নি।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার জানান, বর্তমানে দেশেই টিকার সঙ্কট রয়েছে। এই মুহূর্তে জেলায় টিকা পাওয়া যাবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নেই। বাইরের দেশ থেকে টিকার চালান দেশে এসে পৌঁছালেই জেলার চাহিদা অনুযায়ী টিকার ডোজ হাতে পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলার টিকার চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।
Leave a Reply