December 23, 2024, 11:44 am
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক/
কুষ্টিয়া বিআরটিএ-তে লাইসেন্স করতে দালালরা সরকারি ফি-ছাড়াও নিচ্ছেন অতিরিক্ত টাকা। এই টাকার পরিমাণ কমপক্ষে ৩হাজার। বিআরটিএ দালালীর অর্থ ভাগবাটোয়ারায় গঠিত বোর্ড কর্তৃক তিন হাজার টাকাকে দালালীর স্ট্যান্ডার্ড মানি ধরা হয়। এই টাকার দুই হাজার জমা হয় অফিসে। এক হাজার পান দালাল। দালাল অবশ্য সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে সুযোগ পেলে আরো বেশি আদায় করে থাকেন। অফিসের দুই হাজার টাকার ভাগ যায় বহু দূর। আগে দালালী করতেন এমন দুজনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জেনেছে দৈনিক কুষ্টিয়া।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি, কুষ্টিয়া সার্কেল অফিসে দালালদের তৎপরতা একেবারে ওপেন সিক্রেট। এখানে প্রায় ২৫ জন দালাল কাজ করেন। তবে, এদের মধ্যে চারজনের নেটওয়ার্ক খুবই শক্তিশালী। তারা অফিসের চেয়ার-টেবিলে বসেন। কুষ্টিয়ার বেশিরভাগ মানুষই এদের বিআরটিএ-তে চাকরী করেন বলেন জানেন। ডিসি কোর্ট চত্বরে নানান ধরণের দোকানে দালালীর কারবার চলে। বিআরটিএ অফিস থেকে ফরম, কাগজপত্র, ফাইল এবং সিল নিয়ে এসে এসব দোকানে পূরণ করতে দেখা যায়। দালালরা তাদের আবেদনের ফাইলগুলো অগোছালোভাবে নিয়ে এসে দোকানে গোছগাছ করেন। সিরিয়াল মেইনটেইন করেন। কর্মকর্তাদের এবং বিআরটিএ’র সিলও মারেন। এসব দোকানের বাইরে লিখে রাখা হয়েছে এখানে বিআরটিএ’র কাজ করা হয়/ এখানে ড্রাইভিং লাইসেন্সের কাজ করা হয়।
কম সময়ে লাইসেন্স দেয়ার কথা বলে ও পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেবার শর্তে দালালরা হাতিয়ে নিচ্ছেন অতিরিক্ত অর্থ। খুব সহজে তারা এ কাজে সফলও হচ্ছে। পূর্বের তারিখে কাজ করতে অফিসের বিভিন্ন খাতায় নাম লিপিবদ্ধের সিরিয়াল ফাঁকা রাখা হয়। দালালরা অফিসের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই এসব কাজ করছেন। অর্থের ভাগ পেতে দালালরা যেমন বলছেন কর্মকর্তারা তেমনটিই করছেন। একেকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে দালাল ভাগ করে দেয় বোর্ড। লোকবল সংকটের কারণ দেখিয়ে দালালদের অফিসে বসতেও দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া আবেদন ফরমের ওপরে দালালের দেয়া চিহ্ন দেয়া থাকে যা দিয়ে নির্ধারণ করা যায় এটি কার কাজ। দালাল যদি অফিসে নাও যান এই চিহ্ন দেখেই জমা নিয়ে নেন কর্মকর্তারা।
নাম গোপন রাখার অনুরোধ করে তথ্যদাতারা বলেছেন, মূলত: অফিস প্রধানের অনুমতি সাপেক্ষে মোটরযান পরিদর্শক এবং তার সহকারী দালালচক্র নিয়ন্ত্রণ করেন। বিভিন্ন প্রভাবশালীদের বোর্ডের মাধ্যমে মাসিক চুক্তিতে দুই-চারটি লাইসেন্স ফ্রি করতে দেয়া হয়। ওইসব ব্যক্তিরা এসব লাইসেন্স করাতেও দালালের স্মরণাপন্ন হন। এক্ষেত্রে দালাল তার টাকা আদায় করেন সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে। যদি তিন হাজার টাকা নেন, তাহলে নিজে রাখেন একহাজার আর যার জন্য ফ্রি দেয়া হয়েছে তাকে দেন দুই হাজার। এই আবেদন জমা দিতে অফিসকে দুই হাজার টাকা দিতে হয় না। এটার কাজ ফ্রি করে দেন। এদিকে যে দুই হাজার টাকা অফিসের জন্য রাখা হচ্ছে প্রতি আবেদনের প্রেক্ষিতে সেটির ভাগ যায় অনেকদূর। যার ভাগে পড়া দালাল কাজ এনেছেন সেই কর্মকর্তা বা কর্মচারী একটা বড় অংশ পান। নির্দিষ্ট অংক চলে যায় অফিস প্রধানের জন্য। আর একটি ফান্ড থাকে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং দালালী বন্ধ করে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন অন্য দপ্তরের এমন কর্মকর্তাদের জন্য।
মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল বারী টেলিফোনে এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তিনি প্রতিবেদককে অফিসে দাওয়াত করেছেন।
Leave a Reply