December 27, 2024, 4:24 am
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক/
চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক প্রকাশ্য দিবালোকে ব্যাংক ডাকাতির টাকা আজও উদ্ধার হয়নি। গ্রেফতারও হয়নি কেউ। ইতোমধ্যে পার হয়েছে ১০ দিন। পুলিশ বলছে তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে।
প্রকাশ্য দিবালোকে এই ডাকাতির ঘটনার পর উঠে এসেছে যে ঐ পুরো উপজেলা সহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন অর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার লেনদেন ঘটে তা সবই অরক্ষিত অবস্থায় হয়ে থাকে। আধুনিক আর্থিক ব্যব¯’াপনা যে সুরক্ষিত উপায়ে হবার কথা সেখানে তা একেবারেই হয় না। নিরাপত্তার অন্যতম ব্যবস্থা যে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) সেটিও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই নেই। একই সাথে খ্বু সাধারন যে নিরাপত্তা কর্মী ব্যব¯’ানা সেটিও ত্রæটিপূর্ণ।
গত ১৫ নভেম্বর জীবননগরের উথলীতে ঘটে যাওয়া রাষ্ট্রায়াত্ত সোনালী ব্যাংক ডাকাতির তদন্তকালে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসব বিষয়গলো সামনে এনেছেন। দূবৃত্তরা প্রকাশ্য দিবালোকে মাত্র খেলনা পিস্তল ও দেশীয় চাকু জাতিয় জিনিস প্রদর্শন করে ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টার থেকে প্রায় ৯ লাখ টাকা লুটে নিয়ে যায়।
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলছেনয় তাদেরকে একেবারে ম্যানুয়াল পদ্ধদিতে এগুতে হচ্ছে এবং পদে পদে বাঁধার সন্মুখীন হতে হচ্ছে।
বিভিন্ন সুত্র বলছে এলাকাটি কৃষি-ব্যবসা এলাকা হওয়াতে ব্যাংকিং কার্যক্রম এখানে বেশ জোড়দার। এখানে কৃষপণ্যের মধ্যে রয়েছে ধান, পান, নানা ধরনের সবজি, গুড় প্রভৃতি। প্রতিদিন দুরদুরাস্ত থেকে এখানে ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট লোকজন এসে থাকেন। তারা বিভিন্ন ব্যাংক ও অন্যান্য মাধমে লেনদেন করে থাকেন। এছাড়া কৃষকরা বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিপুল পরিমাণ মৌসুমী লোন নিয়ে থাকেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জীবননগর উপজেলায় সরকারী বেসরকারী মিলিয়ে মোট ১২টি ব্যাংক শাখা রয়েছে। এছাড়া সেখানে রয়েছে ১৩টি এজেন্ট ব্যাংক এবং দুই শতাধিক মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম।
এর মধ্যে আন্দুলবাড়িয়া বাজারে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখাসহ চারটি এজেন্ট ব্যাংক, উথলী গ্রামে দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখাসহ তিনটি এজেন্ট ব্যাংক, রায়পুর বাজারে একটি এজেন্ট ব্যাংক, হাসাদাহ বাজারে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখাসহ দুটি এজেন্ট ব্যাংক এবং জীবননগর পৌর শহরে চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখাসহ তিনটি এজেন্ট ব্যাংক রয়েছে। এছাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে প্রায় দুই শতাধিক মোবাইল ব্যাংকিং ইউনিট কার্যক্রম চালু রয়েছে। রয়েছে একাধিক ক্ষুদ্র লোন বাস্তবায়নকারী এনজিও।
উপজেলার আটটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখাসহ মোট ১২টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখায় এবং চারটি বেসরকারি ব্যাংক শাখায় ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) লাগানো আছে। বাকি ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখায় কোনো ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা নেই (নাম উল্লেখ করা হলো না)।
কোথাও কোথাও ব্যাংকের শাখাগুলোতে নিরাপত্তাপ্রহরী থাকলেও বেশিরভাগ নিরাপত্তাপ্রহরীই নিরস্ত্র। এছাড়া প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে এসব নিরাপত্তা প্রহরীর ব্যবস্থাই নেই।
এনজিও পল্লী সেবা সংস্থার শাখা ব্যবস্থাপক এরাদুল হক জানান তার শাখা থেকে প্রায় ১০ কোটি ক্ষুদ্র লোন বিতরন করেছেন যার অধিকাংশ গ্রাহক কৃষক। তার শাখাতে কিস্তি আদায় হয়ে থাকে প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। দিন শেষে এ অর্থ তারা বিভিন্ন ব্যাংকে জমা দিয়ে এনজিও’র জোনাল ও হেড অফিসে রির্পোট করে থাকেন। তিনি জানান পুরো কার্যক্রমের কোথাও নিরাপত্তার বিষয়টি প্রধান্য পায় না।
বেসরকারী একটি ব্যাংকের বেশ কটি এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা রয়েছে সেখান থেকে জানা গেল এসবগুলোতে নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষিত।
“এজেন্ট শাখা নেয়ার সময় ব্যাংক কর্তৃপক্ষের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা লাগানোর বিষয়ে কোনো নির্দেশনা ছিল না তাই লাগানো হয়নি,” জানান উথলী বাজারের ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকের স্বত্বাধিকারী সাইফুল হোসেন।
সম্প্রতি ডাকাতির শিকার রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের উথলী শাখার ব্যবস্থাপক আবু বকর সিদ্দিক বলেন তারা অনেকসময় বললেও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে আনেনই না। অবিলম্বে নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে আনা উচিত বলেন মনে করেন এই কর্মকর্তা।
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মুনিম জানান এসব ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং সম্ভব হলে বাসাবাড়িতেও নিরাপত্তার জন্য ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা লাগানো উচিত।
চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম জানান ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা ঘটে যাওয়ার এসব বিষয়গুলো সামনে এসেছে। তিনি জানান ইতোমধ্যে পুলিশ বিভিন্ন এসব আর্থিক কাযক্রমে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
Leave a Reply