December 23, 2024, 6:30 am
দৈনিক কুষ্টিয়া আর্ন্তজাতিক ডেস্ক/এএফপি, দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে/
আরো এখনো অপেক্ষা। তবে হোয়াইট হাউসের দরজায় জো বাইডেন। ওদিকে ট্রাম্প নানাভাবে বিশেষ করে টুইট-হামলা-মামলা সব দিক দিয়েই এগিয়ে থাকলেও ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছেন শুধু ভোটে।
এত উত্তেজনার মধ্যেও ফলাফল পূর্ণ প্রকাশ না হলেও ফলের গতিপ্রকৃতি বোঝা যাচ্ছে। ছয় রাজ্য—আলাস্কা (৩), আরিজোনা (১১), নেভাডা (৬), নর্থ ক্যারোলাইনা (১৫), জর্জিয়া (১৬) ও পেনসিলভানিয়া (২০) থেকে এখনো ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। চূড়ান্ত বিচারে কোন রাজ্য কে পাচ্ছেন তা এখনো স্পষ্ট নয়। প্রাপ্ত ফল অনুসারে দুটি রাজ্যে (নেভাডা ও আরিজোনা) এগিয়ে আছেন বাইডেন। বাকি চারটিতে ট্রাম্প। বাইডেন যদি শুধু নেভাডায় জয় পান তাহলেই তিনি পৌঁছে যাবেন ২৭০-এ। তাঁর নামের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের সিলমোহর পড়ে যাবে। অন্যদিকে হোয়াইট হাউস ধরে রাখতে গেলে ফলাফল ঘোষণা হয়নি এমন ছয়টি রাজ্যে অবশ্যই জয় পেতে হবে ট্রাম্পকে। বাস্তবতা বিবেচনায় যা প্রায় অসম্ভব। এ পর্যন্ত বাইডেন পপুলার ভোট পেয়েছেন রেকর্ড পরিমাণ সাত কোটির বেশি। ট্রাম্পও ছাড়িয়েছেন ছয় কোটি। ২০১৬ সালের নির্বাচনের চেয়েও ট্রাম্পের ভোট ৪০ লাখ বেড়েছে।
তবে ওদিকে থেমে নেই ট্রাম্প। এক টুইটে তিনি দাবি করে বসেছেন জর্জিয়া, পেনসিলভানিয়া ও নর্থ ক্যারোলাইনায় জয় পেয়েছেন। যদিও এই রাজ্যগুলোতে এখনো ভোটগণনা চলছে। গতকাল দিনভর প্রায় চুপচাপই ছিলেন ট্রাম্প। বিকেলের দিকে দেওয়া এক টুইটে বলেন, ‘ইলেকটোরাল ভোটের স্বার্থে আমরা দাবি করছি, কমনওয়েলথ অব পেনসিলভানিয়া, অঙ্গরাজ্য জর্জিয়া ও অঙ্গরাজ্য পেনসিলভানিয়াতে আমরা জয় পেয়েছি। এই রাজ্যগুলোতে আমরাই এগিয়ে আছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘মিশিগানে বিপুল পরিমাণ অবৈধ ব্যালট মূল গণনায় শামিল হয়েছে। এ রাজ্যেও আমরাই জয়ী হয়েছি।’ গত বুধবার দেওয়া আরেক টুইটে ট্রাম্প বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং এই পুরো প্রক্রিয়ার যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে। আমাদের আইনজীবীরা কাজ করছেন। আর এটা নিয়েই এখন আলোচনা করা উচিত।’
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুধু টুইট করেই বসে আছেন এমন নয়। তার প্রচার শিবির থেকে এরই মধ্যে মিশিগান, পেনসিলভানিয়া ও জর্জিয়ায় ভোটের স্বচ্ছতা নেই বলে অভিযোগ করে রাজ্যগুলোর আদালতে মামলা করেছে। যদিও অস্বচ্ছতার কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। উইসকনসিনে ভোট পুনর্গণনার দাবিও করেছে ট্রাম্প শিবির। যদিও পেনসিলভানিয়ার মামলা পরিচালনার জন্য এরই মধ্যে ট্রাম্প তাঁর ব্যক্তিগত আইনজীবী রুডি গিলিয়ানিকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। ডেমোক্রেটিক পার্টি ভোটে জালিয়াতি করার সমন্বিত চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
এ অবস্থায় সামনে দাঁড়িয়ে বাইডেন জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেন এটা শুধু আমার জয় নয়, এটা আমেরিকার মানুষের জয়, আমেরিকার গণতন্ত্রের জয়।’ সব ভোটগণনা সম্পন্নের পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। ৭৭ বছর বয়সী এ রাজনীতিবিদ বলেন, ‘আমি এখানে বিজয় ঘোষণা করতে আসিনি। জানাতে এসেছি, গণনা শেষ হওয়ার পর আমরাই জয়ী হব।’ তিনি আরো বলেন, তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন।
ইতিহাসে এমন ভোটগণনা নজিরবিহীন। নির্বাচনের তিন দিন পার করেও কোটি কোটি ভোট গোনার কাজ চলছে। এর মূল কারণ আগাম ভোট। যুক্তরাষ্ট্রের মোট ভোটারসংখ্যা প্রায় ২৩ লাখ। ১২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হারে ভোট পড়েছে এবার, ৬৭%। সংখ্যায় অনুবাদ করলে যা দাঁড়ায় ১৬ কোটির বেশি। এর একটা বড় অংশ এসেছে আগাম ভোট থেকে। গত মার্চ মাস থেকে বিশ্বজুড়ে যে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ে তার বড় আঁচড় পড়ে যুক্তরাষ্ট্রেও। দুই লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ এই ভাইরাস সংক্রমণে মারা যায়। আক্রান্তের সংখ্যাও কোটি পেরিয়ে যায়। শুধু গতকালই এই ভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রের এক লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়। এই ভাইরাসের কল্যাণে স্বাস্থ্যবিধি মানতে গিয়েই এবার রেকর্ডসংখ্যক আগাম ভোট পড়ে। ১৬ কোটি ভোটের ১১ কোটি ব্যালটই এসেছে আগাম ভোট হিসাবে। এর মধ্যে সাড়ে ছয় কোটি মেইল ইন ব্যালট বা ডাকযোগে আসা ভোট। বাকিগুলো কেন্দ্রে গিয়ে দেওয়া।
মূলত এই ডাকের ব্যালটগুলো গুনতেই সময় লেগে যাচ্ছে। এক হিসাবে দেখা গেছে, প্রতি ঘণ্টায় মাত্র তিন হাজার ডাকের ব্যালট খোলে, বৈধতা পরীক্ষা করে গোনাগুনতির কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। এ কাজও আবার সব রাজ্যে একভাবে করা হয় না। যেমন নর্থ ক্যারোলাইনায় আগামী ১২ নভেম্বর পর্যন্ত ডাকের ব্যালট গ্রহণ করা হবে। পেনসিলভানিয়ার ক্ষেত্রে এ মেয়াদ আজ ৬ নভেম্বর পর্যন্ত। আবার ব্যালটের বৈধতার ক্ষেত্রেও একেক রাজ্যের বিধান একেক রকম। কোনো কোনো রাজ্যে ব্যালটের সঙ্গে ভোটদাতাকে শনাক্তকারীর পরিচয়ও জুড়ে দিতে হয়।
এদিকে ট্রাম্প কারচুপির দাবি করলেও ইউরোপের একটি পর্যবেক্ষক দল জানিয়েছে, নির্বাচনে তারা কোনো অনিয়ম দেখেনি। সূত্র : এএফপি, দ্য গার্ডিয়ান।
Leave a Reply