December 22, 2024, 11:50 am
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক/
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের সদ্য পাশ করা শিক্ষার্থী উলফাত আরা তিন্নির মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় গ্রেফতার প্রধান আসামি জামিরুলকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ।
বুধবার (৭ অক্টোবর) রাতে ঝিনাইদহ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফ জানান। ঐ দিন ভোরে মাগুরা জেলার ভায়না এলাকা থেকে জামিরুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, তিন্নির মৃত্যুর পরপরই জামিরুল পলাতক ছিলো। জামিরুলকে আদালতে তুলে তিন দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হলে আদালত তা মঞ্জুর করে।
এ ঘটনায় আরো চার জন গ্রেফতার রয়েছে। এরা হলো শেখপাড়া এলাকার কনুর উদ্দিনের ছেলে আমিরুল, নজরুল, লাবিব ও তন্ময়। এদেরকে শুক্রবার গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ ও তিন্নির পারিবারিক সূত্রে জানা যায় তিন্নিরা তিন বোন। তার বাবা মৃত ইউসুফ মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার যোগীপাড়া গ্রামের তাদের স্থায়ী নিবাস। তবে মাসহ তারা দুই বোন থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী শেখপাড়া বাজার সংলগ্ন নিজস্ব দোতলা বাসায়। বড় বোনের আগেই বিয়ে হয়ে গেছে। তিন বোনের মধ্যে তিন্নি ছিলেন ছোট। মেঝ বোন মিন্নির বিয়ে হয়েছিল তাদেরই এক কাজিন জামিরুলের সঙ্গে। তবে বিভিন্ন কারণে সে ভেঙে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন তিন্নি। সদ্য পাশ করে বের হয়েছেন।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি জামিরুল আবারও মিন্নিকে ঘরে তুরে নিতে চায়। তবে এ বিষয়ে তিন্নিদের আপত্তি থাকায় উভয়পক্ষে বিবাদ চলে আসছিল। মাঝে মধ্যেই এ নিয়ে উত্তাপ চলে আসছিল। ঘটনার দিন সন্ধ্যার দিকেও জামিরুল ও তার অন্য সঙ্গীরা তিন্নিদের বাসায় যায়। আবারও কথা কাটাকাটি হয়। চলে যায় জামিরুল। প্রায় দু’ঘণ্টা পর জামিরুল আবারও ওই বাসায় আসে এবং মিন্নি ও তাদের মা হালিমা বেগমকে নিচের ঘরে আটকে রেখে দোতলায় তিন্নির ঘরে ঢোকে। সেখানে কি ঘটে সেটা উদ্ধার করা যায়নি। তবে প্রায় ২০ মিনিট জামিরুল ও তার সহযোগীরা সেখানে ছিল। তারা চলে যাওয়ার পর থেকেই ঘরের দরজা বন্ধ ছিল তিন্নির।
রাত বারোটার দিকে দোতলায় তিন্নিকে ডাকতে গেলে ভেতর থেকে ছিটকানি দেওয়া দেখতে পান তিন্নির মা ও বড়বোন। বেশ কিছুক্ষণ ডাকাডাকির পর ভেতর থেকে কোনও উত্তর না পেয়ে ছিটকানি ভেঙে তারা কক্ষে প্রবেশ করে তিন্নিকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে তারা।
শৈলকুপা থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মহসিন হোসেন জানান, ‘রাত সাড়ে বারোটার দিকে ফোন দিয়ে ঘটনাটি জানায় তার পরিবার। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই পরিবারের সদস্যরা ভিক্টিমকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে রাত দুইটার দিকে তার মৃত্যুর খবর জানা যায়।
ওদিকে সোমবার (৫ অক্টোবর) তিন্নির ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি বলে জানায় পুলিশ। তিন্নি আত্মহত্যা করেছেন এমন প্রতিবেদনই আসে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার তাপস কুমার সরকার জানান ওটি আত্মহত্যাই ছিল।
ওসি জানান, তিন্নির মৃত্যুর ঘটনায় শুক্রবার রাতে ৮ জনের নাম উল্লেখসহ আরো অজ্ঞাত ৫-৬ জনের নামে শৈলকুপা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ও আত্মহত্যায় প্ররোচনার আইনে মামলা হয়। তিন্নির মা হালিমা বেগম বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। পরে তারা অভিযান চালিয়ে ৪ জনকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় এখনও পলাতক রয়েছে তিন জন।
ওসি আশা করছেন জামিরুলকে জিজ্ঞাসাবাদে ঐ দিন রাতে তিন্নির রুমে কি ঘটেছিল সেটা জানা যাবে।
এদিকে এ ঘটনায় ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় ক্যম্পাসে মানব বন্ধন করেছে ছাত্রলীগ ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের নেতা-কর্মীরা। ছাত্রলীগ ইবি শাখার সাবেক নেতা মিজানরি রহমান লালন ও ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতের নেতৃত্বে ক্যম্পাসের মেইন গেইটে এ মানব বন্ধন হয় গত রবিবার। সেখানে তিন্নি হত্যার বিচার দাবি করা হয়।
Leave a Reply