December 22, 2024, 7:38 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক/
ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করলেন প্রফেসর ড. শেখ আব্দুস সালাম। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম উপাচার্য। প্রফেসর সালামের এই দায়িত্ব গ্রহন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বমহলে ব্যাপক আগ্রহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত চার বছরে সর্বক্ষেত্রে অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও স্বজনদের সাথে নিয়ে অনিয়মের উৎসব, আর্দশিক কিন্তু ভিন্ন মতাবলম্বীদের ধরে ধরে নির্যাতন, বনচনা ও সর্বপরি বিশ^বিদ্যালয়কে ১৬ বছর পিছিয়ে বিপথে চলে যাওয়ার পেক্ষাপটের নানা টানাপোড়েন এবং তা থেকে সৃষ্ট আন্দোলন-সংগ্রামের পথ ধরে প্রফেসর আবদুস সালামের উপচার্য হয়ে আসা এই আগ্রহের কারন। সবার দৃষ্টি তার দিকে এই যে কতটুকু নিরপেক্ষতার সাথে তিনি তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন। তার কাছে প্রত্যামা অনেক। প্রথমেই সবার প্রত্যাশা হলো তিনি এই বিপথে চলে যাওয়া বিশ^বিদ্যালয়টিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে নিয়ে আনবেন। বনচনার শিকার, নির্যাতনের শিকার আওয়ামী আদর্শের সেইসব মানুষদের রক্ষা করবেন।
এ বিষয়ে কথা বলেন ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারন সম্পাদক প্রফেসর ড. মাহবুবুল আরফিন। তিনি বলেন যে অবস্থা থেকে এই বিশ^বিদ্যালয়টিকে উদ্ধার করা হয়েছে সেখানে তাঁর উপর অনেক বেশী দায়িত্ব বর্তেছে। একানে আওয়ামী আদর্শের প্রকৃত সৈনিকদের ব্যক্তিগত কোন চাওয়া পাওয়া নেই। তারা চান এখাানে আর কোন অনিয়ম হবে না, আওয়ামী আদর্শের প্রকৃত সৈনিকদের উপর কোন নির্যাতন নেমে আসবে না। তিনি বলেন উপাচার্য মহোদয় সঠিক পথে বিশ^বিদ্যালয়টি পরিচালনা করবেন।
কথা হয় কর্মকর্তা সমিতির সাধারন সম্পাদক ও বাংলাদেশ আন্তঃ বিশ^বিদ্যালয় অফিসার্স ফেডারেশনের মহাসচিব মীর মোর্শেদের সাথে। তিনি বলেন নতুন উপচার্যের কাছে প্রত্যাশা হলো বিগত চার বছরে বিশ^বিদ্যালয়ে যে অনিয়ম, দূর্নীতি হয়েছে তার তদন্ত পূর্বক বিচার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। এছাড়া কর্মকর্তাদের ন্যায়সঙ্গত দাবি বাস্তবায়ন করে স্বচ্ছ ও জবাবদিহীমুলক প্রশাসন গঠনে সচেষ্ট হবেন।
প্রফেসর সালাম একজন কর্মঠ মানুষ। জীবনের দীর্ঘ পথে তিনি প্রচুর কাজ করেছেন। তাঁর রয়েছে বর্নাঢ্য এক একাডেমিক জীবন ; এর বাইরেও তিনি কাজ করেছেন সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে। ড. শেখ আবদুস সালাম ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার বিভাগের সিলেকশন গ্রেডের অধ্যাপক ((সদ্য এল পি আর-রত) এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস অ্যান্ড সোসাল সায়েন্স সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ (কারাএসএস) এর প্রাক্তন ডিরেক্টর। ১৯৫৫ সালে বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলায় জন্ম নেয়া ড. সালামের ক্যারিয়ারে সরকার, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সং¯’ায় প্রশাসনিক ও ব্যব¯’াপনা কাজের এক বৈচিত্রময় পটভূমি রয়েছে।
ড. সালাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৭৫ সালে অর্থনীতিতে বি এ (সম্মান) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৬ সালে অর্থনীতিতে এম এ ডিগ্রী অর্জন করেন। অত:পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় এম এ এবং এল এল বি ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি ১৯৮৬ সালে ভারতের পুনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় পিএইচ ডি ডিগ্রী অর্জন করেন।
ড. সালাম ১৯৭৭ সালে ঢাকায় টেরে ডেস্ হোমস (নেদারল্যান্ডস)-এ তাঁর চাকুরী জীবন শুর“ করেন। অত:পর বাংলাদেশ সরকারের ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও ধর্ম বিষায়ক মন্ত্রণালয়ে গবেষণা কর্মকর্তা পদে ৪ বছর চাকুরী করেন। তিনি ১৯৮৬-’৮৭ সালে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ফর ভল্যুন্টারী স্টেরিলাইজেশন (বিএভিএস)-র পরিচালক, প্রোগ্রাম এ্যান্ড আই ই সি পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি শিক্ষক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) মহাপরিচালক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এছাড়াও ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান এবং ২০০৯ সালে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীনের দায়িত্ব পালন করেন। এসময়ে তিনি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ফিন্যান্স কমিটির সদস্য এবং সাামজিক বিজ্ঞান অনুষদ থেকে প্রকাশিত ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এসময়ে তিনি বৃটিশ কাউন্সিল হায়ার এডুকেশন লিঙ্ক প্রোগ্রামের সমন্বয়ক এবং বাংলাদেশ, নরওয়ে, পাকিস্তান ও নেপাল এই ৪ দেশের সম্মিলিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নোমা (ঘঙগঅ) প্রোগ্রামের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ড. সালাম ২০০৯ থেকে ২০১১ সময়ে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এ্যান্ড টেকনোলজি (ইটইঞ)-র সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন। ২০১১ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কমিটির সদসস্যের দায়িত্ব পালন করছেন।
ড. সালাম ২০১২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন আর্টস অ্যান্ড সোস্যাল সায়েন্সেস (ঈঅজঅঝঝ)-র পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি নরওয়ের অসলো ইউনিভার্সিটি কলেজ এবং রোমানিয়ার লুসিয়ান বøাগা ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
অধ্যাপক সালাম ৯টি গ্রšে’র প্রনেতা। দেশ বিদেশের জার্নালে তাঁর ৪০টির মত গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে একজন নিয়মিত লেখক। ড. সালাম বাংলাদেশ ক্যারম ফেডারেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি প্রায় ১০ বছর যাবৎ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ক্যারম ও দাবা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ন্যাশনাল প্যারালিম্পিক কমিটি, বাংলাদেশ এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশ ফিজিক্যালী চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সভাপতি। তাঁর ৩০টির বেশি দেশ ভ্রমনের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
ড, সালাম অসংখ্য সেমিনার ও কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন। তিনি ভারত, পাকি¯’ান, নেপাল, মায়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ফিজি, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়ার , জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, জর্ডান, বাহরাইন, মিশর, নরওয়ে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, রোমানিয়ান মতো দেশ পরিদর্শন করেছেন।
Leave a Reply