December 22, 2024, 3:24 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
দেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে চালের দাম চলতি আমন মৌসুমে তিন দফায় বাড়ানো হয়েছে। এর প্রভাবে গত এক সপ্তাহে খুচরা বাজারে প্রায় সব ধরনের চাল কেজি প্রতি ৪ টাকা বেড়েছে।
এ নিয়ে ব্যবসায়ী ও চালকল মালিকদের যথারীতি পুরোন প্যাচাল। ধানের দাম বেড়েছে তাই চালের দামও বাড়লো। সাধারণ ক্রেতারা ও বাজার বিশেষজ্ঞরা খুচরা ব্যবসায়ী ও চালকল মালিক উভয়কেই দোষারোপ করেছেন।
এক্ষেত্রে চালকল মালিকদের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ করা হচ্ছে যে, এমনকি পুরোন দামে ধান কেনা থাকলেও ধানের চলতি বাজার দেখে তারা চালের দাম নির্ধারণ করছেন। এটা চরম অন্যায় ও বিবেক বর্জিত বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।
কুষ্টিয়া পৌর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কয়েকদিন পূর্বে ৬২ টাকায় বিক্রি করা মিনিকেট চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকায়। কয়েকদিন আগেও ৫৬ টাকায় বিক্রি হওয়া কাজললতা চাল এখন ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও মোটা চাল আটাশ কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৩ টাকা কেজি। দু’মাসের ব্যবধানে কুষ্টিয়ায় কেজিতে ৪ টাকা বেড়েছে চালের দাম
বাজারের খুচরা চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নানা অজুহাতে গত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে এই খাজানগরে চিকন চালসহ অন্যান্য চালের দাম বাড়ানো হয় দুই থেকে আড়াই টাকা। এর ফলে ঐ সময়ে খুচরা বাজারে চালের দাম বাড়ে কেজি প্রতি প্রায় ৪ টাকা। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে সেখানে আবারও সেই আড়াই টাকা হারে চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে খুচরা বাজারে আবারও সব ধরনের চাল কেজিতে ৪ টাকা পর্যন্ত ।
চলতি আমন মৌসুম শেষে এ নিয়ে তিন দফায় কুষ্টিয়ার বাজারে চালের দাম বাড়লো।
চালের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতি কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির কোষাধক্ষ্য জয়নাল আবেদীন প্রধান দাবি করেন, ডিসেম্বর মাস থেকে ধানের দাম প্রতিনিয়তই বাড়ছে। প্রত্যেকটা ধানের দাাম প্রতি মণে ১৮০-২০০ টাকা বেড়েছে। মণ প্রতি মিনিকেট যে ধান কিনেছিলাম ১ হাজার ৪২০ টাকা সেই ধান কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ৬৮০ টাকায়। সরকার যখন আমন মৌসুমে চাল সংগ্রহের ঘোষণা দিলো তখন নতুন যে ধান উঠেছিল তা ৯৮০ থেকে ১ হাজার টাকা মণ কেনা হয়। সেই ধান এখন ১ হাজার ৮০ টাকা।
তিনি জানান, চলতি মৌসুমে মোটা হাইব্রিড, স্বর্ণা, ধানি গোল্ড ও বিনা-৭ এই চার প্রকার ধান উঠেছে। । নভেম্বরের শেষের দিকে এই ধান উঠলেও ডিসেম্বর মাসে এসে ধানের দাম বেড়ে গেছে।
পুরোন দামে কেনা ধানের মজুদ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয় এড়িয়ে যেতে চান। তবে তিনি বলেন সবার আড়তে পুরোন দামে কেনা ধান আছে কিনা তিনি জানেন না। তিনি দাবি করেন ধানের মজুতদারী সরকারীভাবে নিষিদ্ধ করা আছে। তিনি বলেন সরকার চাইলে সেটিতে নজর দিতে পারে।
চালকল মালিকদের ধানের দাম কোন কারনে বাজারে একটু বেড়ে গেলেই উৎপাদিত চালের দাম বাড়িয়ে দিতে হবে এ ধরনের প্রবণতাকে অতি মুনাফা লোভ হিসেবে দেখছেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। তারা দাবি করেন ধানের চলতি বাজার পরিস্থিতি দেখে চাল উৎপাদকদের চালের দাম নির্ধারণ করার অভ্যাস চরমভাবে একটি অনৈতিক ব্যাপার। এটা হওয়া উচিত নয়।
সামাজিক সংগঠনসমুহের প্রতিনিধিত্বমূলক সংগঠন সম্মিলিত সামাজিক জোটের চেয়ারম্যান ড. আমানুর আমান বলেন একই পুরোন অভিযোগ বারবার সামনে এনে চাল উৎপাদনকারীরা মুনাফা লুট করে চলেছেন। এর প্রতিকারে কোন উদ্যোগ দেখতে পাওয়া যায় না।
তিনি বলেন, কুষ্টিয়ার এই চালের মোকামে এমন সব চালকল রয়েছে যেখানে ঘন্টায় দুই থেকে আড়াই টন চাল উৎপাদন হয়। যদি কোনভাবে চালের দাম ৫০ পয়সাও কেজি প্রতি বাড়িয়ে ধরে দেয়া যায় সেখানে ঘন্টা ধরেই কোটি কোটি টাকা মুনাফা তুলে নেয়া যায়। তিনি দাবি করেন অনেক চালকল মালিক রাজনৈতিক পৃষ্টপোষকতায়ও এমনসব কর্মকান্ড করে চলেছেন।
তিনি জানান, অনেক সময় চালের কৃত্রিম সংকটও এখান থেকেই তৈরি করা হয়। সেখানেও দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুট করা হয়।
অন্যদিকে সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারীরা বলছেন তারা খতিয়ে দেখছেন।
কুষ্টিয়া জেলার সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান স্বীকার করেন বাজারে চালের দাম বেড়েছে। তিনি বলেন বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তিনি জানান তারা মিলগুলোর ধান ক্রয় ও মাড়াইয়ের খচরের সঙ্গে বিক্রয় মূল্যের তুলনা করে দেখছেন। বৈসাদৃশ্য কিছু ঘটলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
শুভব্রত আমান
১৭/১/২০২৪
Leave a Reply