December 26, 2024, 12:12 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
উদ্বোধনের পর থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পদ্মা সেতু পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ খরচ হয়েছে ১৪৩ কোটি ১২ লাখ ৮৩ হাজার ২৫ টাকা। একই সময়ে পদ্মা সেতু থেকে আদায় হওয়া টোলের পরিমাণ ১ হাজার ১৬৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
ব্যয়ের মধ্যে সেতুর টোল আদায় কার্যক্রম ব্যবস্থাপনা, সংযোগ সড়ক ও মূল সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও নদীশাসন কাজ রক্ষণাবেক্ষণ খাত রয়েছে। অন্যদিকে সেতুতে যান চলাচল শুরুর পর থেকে গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত পদ্মা সেতু থেকে আদায় হওয়া টোল থেকে সব মিলিয়ে ১৪৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করা হয়েছে।
বর্তমানে পদ্মা সেতুর পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করছে কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন (কেইসি) এবং পদ্মা সেতুর নির্মাণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের (এমবিইসি) জয়েন্ট ভেঞ্চার। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাঁচ বছরের জন্য পদ্মা সেতু পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পেয়েছে প্রতিষ্ঠান দুটি।
এর মধ্যে কেইসি লিড হিসেবে কাজ করছে এবং সেতু রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে প্রতিষ্ঠান দুটি দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছে। এর মধ্যে কেইসি সার্ভিস এরিয়া ও সংযোগ সড়ক, টোল আদায় ও পরিচালনা, ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক সিস্টেম (আইটিএস) স্থাপন এবং ট্রাফিক নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছে। অন্যদিকে এমবিইসি মেইন ব্রিজ (টোল মনিটরিং সিস্টেম ও অ্যানালাইসিস ছাড়া) ও নদীশাসন কাজ দেখাশোনা করছে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ বছর পদ্মা সেতু পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ কেইসি ও এমবিইসির জয়েন্ট ভেঞ্চার পাবে ৬৯৩ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাঁচ বছরের জন্য যে দুটি প্রতিষ্ঠান পদ্মা সেতু পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পেয়েছে, কোম্পানি গঠনের পর তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সরঞ্জাম গ্রহণ করা হবে। দুই কোম্পানির নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পদ্মা সেতু পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ স্বতন্ত্র কোম্পানির মাধ্যমে সেতু কর্তৃপক্ষ নিজেই করবে।
সরকারের অর্থ বিভাগ থেকে ঋণ নিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। অর্থ বিভাগের সঙ্গে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের ঋণ চুক্তি অনুযায়ী, ১ শতাংশ সুদসহ ৩৫ বছরে ঋণের টাকা ফেরত দেবে সেতু কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে অর্থ বিভাগ থেকে নেয়া ঋণের প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা কিস্তিও পরিশোধ করেছে সংস্থাটি। চুক্তি অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে সেতুটির ঋণ পরিশোধ শুরু হয়েছে এবং বাংলাদেশ সরকারের এ ঋণ পরিশোধের জন্য ২০৫৬-৫৭ অর্থবছর পর্যন্ত সময় পাবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ঋণ পরিশোধের শিডিউল অনুযায়ী প্রতি অর্থবছরে চারটি কিস্তি করে সর্বমোট ১৪০টি কিস্তিতে সুদ-আসল পরিশোধ করা হবে।
পদ্মা সেতুর ঋণের প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তি পরিশোধ করা হয় গত ৫ এপ্রিল। মোট ৩১৬ কোটি ৯০ লাখ ৯৭ হাজার ৫০ টাকা পরিশোধ করা হয় ওইদিন। ১৯ জুন পরিশোধ করা হয় তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির ৩১৬ কোটি ২ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩ টাকা। আর ১৮ ডিসেম্বর পঞ্চম ও ষষ্ঠ কিস্তির ৩১৫ কোটি ৭ লাখ ৫৩ হাজার ৪৪২ টাকা পরিশোধ করা হয়। এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ৯৪৮ কোটি ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৮৫ টাকা।
এছাড়া, সেতুর ডিটেইল ডিজাইনের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে ১৫ বছর মেয়াদে দুটি ঋণ চুক্তির আওতায় ২ শতাংশ সুদে মোট ১ কোটি ৭৪ লাখ ৫৩ হাজার টাকা এসডিআর ঋণ নেয়া হয়েছে, যা বছরে চারটি কিস্তি করে মোট ৬০টি কিস্তিতে সুদ-আসলসহ মোট ২ কোটি ৮০ লাখ ৯৯ হাজার ৩৩০ টাকা এসডিআর পরিশোধ করা হবে।
পদ্মা সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার কাজ ঠিকাদারদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন। তিনি বলেন, ‘সেতুতে যানবাহন চলাচলের যে পূর্বাভাস ছিল, প্রথমে আমরা তার চেয়ে আড়াই গুণ বেশি যানবাহন পেয়েছি। এখন পর্যন্ত ১ হাজার কোটি টাকার বেশি টোল আদায় হয়েছে। আমরা অর্থ বিভাগের ঋণও পরিশোধ করছি।’
Leave a Reply