December 23, 2024, 3:51 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
আমেরিকাতে দিন দিন আত্মহত্যা প্রবণতা ভয়ঙ্কর গতিতে বাড়ছে। গত ১১ বছরের একটি পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে সেখানে আত্মহত্যা করেছে ৫ লাখ ৩৯ হাজার ৮১০ জন। তবে এর মধ্যে ২০২৩ সালের একপর্যন্তকার হিসেবটি আসেনি। সিডিসি (সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন) এই হিসেব করেছে।
এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ২০২২ সালে। যেখানে মোট সংখ্যা ৪৯ হাজার ৩৬৯ জন। জরিপকারী প্রতিষ্ঠান মনে করে ২০২৩ সালে এই সংখ্যা কমার কোন লক্ষণ নেই। বরং আরও বাড়তে পারে।
করোনা মহামারির সময় লকডাউনকালে সবচেয়ে আমেরিকান আত্মহত্যা করেছে। করোনা থেকে জেগে উঠার পরিক্রমায় মানসিক অশান্তি, স্বজন হারানোর যন্ত্রণা এবং আর্থিক অনিশ্চয়তা প্রকট আকার ধারণ করায় ২০২১ এবং ২০২২ সালে আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েছে বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেছেন।
উল্লেখ্য, মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় বাইডেন প্রশাসন গত বছরের জুলাই মাসে জাতীয় ভিত্তিক হটলাইন -৯৮৮ চালু করেছেন। এটি শুধুমাত্র মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়াদের সেবা দিচ্ছে।
সিডিসি সূত্রে আরো জানা গেছে, গত বছর আত্মহত্যাকারির মধ্যে অনেকেই বন্দুকের গুলিতে প্রাণ সংহার করেছে। গত ১১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমেরিকান নিজের বন্দুকের গুলিতে মরেছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আমেরিকান ইন্ডিয়ান এবং আলাস্কার লোকজন ছিলেন। আত্মহত্যার প্রবণতা যুব-সমাজে বেড়েছে। কৃষ্ণাঙ্গ এবং স্প্যানিশ তরুণ-তরুণীরাও নেশাগ্রস্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। এ শ্রেণির তরুণ তরুণীর আত্মহত্যার হার ১১ বছরের ব্যবধানে গত বছর বেড়েছে ৩০%।
আতœহত্যার হার কেন এত বেড়েছে ?/
আতœহত্যার হার বৃদ্ধির পিছনে একক কোন কারণ নেই বলে গবেষকরা বলছেন।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে অনেক রকম বিষয় কাজ করে আতœহত্যা করার ক্ষেত্রে। তবে বেশিরভাগ আতœহত্যার ঘটনার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়গুলো এবং অর্থনৈতিক সমস্যাকে তারা বড় কারণ হিসেবে দেখতে পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমের রাজ্য, যেগুলোতে এখনও গ্রামীণ পরিবেশ রয়েছে, সেই রাজগুলোতে অতীতের মতো এখনও আতœহত্যার হার বেড়ে চলছে। এই রাজ্যগুলোতে অর্থনৈতিক সমস্যা আছে। আর এগুলোতে বসবাসকারী মানুষ এখনও অনেকটা একঘরে হয়ে রয়েছে।
সিডিসি গবেষণায় দেখা গেছে, আতœহত্যার ৫৪ শতাংশ ঘটনার ক্ষেত্রে মানসিক অসুস্থতার কোনো বিষয় ছিল না। ন্যাশনাল অ্যাকশন অ্যালায়েন্স ফর স্যুইসাইড প্রিভেনশন এর ড: জেরি রিদ বলেছেন, গুরুতর অসুস্থতা এবং আতœঘাতী আচরণের মধ্যে একটা সম্পর্ক আছে বলে তিনি মনে করেন। তবে মানসিক অসুস্থতাই একমাত্র কারণ নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। তাঁর বক্তব্য হচ্ছে, অর্থনৈতিক অবস্থার পরিণতি এবং জীবনধারণের অবনতির সুযোগ মানুষকে আতœহত্যার ঝুঁকিতে ফেলে।
আরেকজন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সিরেল বলেছেন,অনেকে মানুষের যাদের মানসিক অসুস্থতা চিহ্নিত হয়েছে।তারা কিন্তু আতœহত্যার পথ বেছে নেয়নি। “এটা সরলীকরণ করা যাবে না যে, মানসিক অসুস্থতার কারণেই আতœহত্যা করছে।”
আমেরিকান কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক বেশি। অপরিকল্পিত গর্ভাবস্থার মুখোমুখি হওয়ার চেয়ে মেয়েদের আত্মহত্যার প্রবণতা প্রায় ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। দেশটিতে দুর্ঘটনার পর এখন ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের মৃত্যু হয় আত্মহত্যা করার কারণে। অর্থাৎ মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে আত্মহত্যার প্রবণতা।
কিশোর-কিশোরীদের মানসিক সমস্যা তরুণ বয়সে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধিতে প্রবল ভূমিকা রাখে। করোনা মহামারির আগে কম থাকলেও দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এই প্রবণতা। ২০২১ সালে প্রায় অর্ধেক আমেরিকান মাধ্যমিক পড়ুয়া বলে তারা বিগত বছরে ক্রমাগত দুঃখ ও হতাশা অনুভব করেছে, যার পরিমাণ ২০০৯ সালের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেড়েছে।
পাঁচজনের মধ্যে একজনের আত্মহত্যা করার কথা চিন্তা করে এবং এই হার প্রায় ১৪ শতাংশ। অন্যদিকে, ৬ শতাংশের চেয়ে ৯ শতাংশের জীবন শেষ করে ফেলার প্রবণতা বেড়েছে। তবে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের জন্য এই প্রবণতা অভূতপূর্ব ঘটনা নয়। তবে দশ থেকে ১৪ বছর বয়সীদের জন্য আত্মহত্যার প্রবণতার হার আগের চেয়ে অনেক বেশি।
আত্মহত্যার প্রবণতার কারণগুলো স্পষ্ট বোঝার এটি শুরু মাত্র। স্বাভাবিকভাবে ধারণা করা হয়, শৈশবে দারিদ্র্য, পিতামাতার অসুলভ আচরণ বা পিতামাতার হতাশা এসবের কারণে কিশোর-কিশোরীদের আচরণে পরিবর্তন ঘটে। যদিও প্রকৃতপক্ষে, শৈশবের দারিদ্র্যতা হ্রাস পেয়েছে। কীভাবে তাদের জীবনমান বদলে যায় সেটি একটির সঙ্গে আরেকটির নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্নতা ও একাকীত্ব মূলত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে।
Leave a Reply