December 24, 2024, 6:36 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) আইএমএফের ঋণ দেওয়ার ঘোষণায় স্বস্তি ফিরে এসেছে সব মহলে। কয়েকদিন ধরেই এ নিঢে একধরনের টানা জটলা বিরাজমান ছিল। বিশেষ করে ঋণ শর্ত নিয়ে বির্তক দেখা দেয় আইএমএফ’র একটি প্রতিনিথি দল দেশে আসার পর থেে কই।
অবশেষে অর্থনৈতিক খাতে বেশ কিছু সংস্কারের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে আইএমএফ। বুধবার (৯ নভেম্বর) বাংলাদেশ সরকার ও আইএমএফের প্রতিনিধি দলের মধ্যে এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত আলোচনা শেষ হয়েছে।
আইএমএফের দলটি ২৬ অক্টোবর থেকে গতকাল পর্যন্ত প্রায় ৩০টি বৈঠক করেছে। বেশিরভাগ বৈঠক ছিল আর্থিক খাতের সঙ্গে সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে। আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ দলটির নেতৃত্ব দেন।
আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে পাওয়া যাবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের প্রথম কিস্তি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আইএমএফ যে ঘোষণা দিয়েছে তাতে অর্থনীতিতে চলমান চাপ কমবে। স্বস্তি মিলবে সব মহলে। সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি দেখা দেবে। অর্থনীতিতে সৃষ্ট চাপ কমে আসবে। সংকট ধীরে ধীরে কেটে যাবে। আইএমএফের ঋণের কারণে বাংলাদেশকে হয়তো টাকা ছাপিয়ে ভর্তুকি দিতে হবে না। তিনি মনে করেন, টাকা ছাপিয়ে ভর্তুকি দেওয়ার কারণে অর্থনীতির খুব বেশি লাভ হয় না। আইএমএফের ঋণ পাওয়াকে উপলক্ষ করে বেশ কিছু সংস্কার হবে। এই ধরনের সংস্কার বাংলাদেশকে এমনিতেই করা জরুরি।
গবেষকরা বলছেন এই ঋণের জন্য কঠিন কোনও শর্ত আইএমএফ দেয়নি। এর ফলে সরকারের জন্য ও ব্যবসায়ীদের জন্য কোনও চাপ হবে না। তিনি উল্লেখ করেন, যদি সুদের হার বাড়ানোর শর্ত দিতো, তাহলে ব্যবসায়ীদের হয়তো সমস্যা হতো। তিনি বলেন, এই ঋণ মূলত ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট এর জন্য নেওয়া হচ্ছে। এই ঋণের ফলে ডলারের চাপ কিছুটা প্রশমিত হবে। সরকার চাপ মুক্ত হবে, একইভাবে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হবে না।
এদিকে আইএমএফ মিশন জানিয়েছে, তাদের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী তিন মাসের মধ্যে ঋণ প্রস্তাবের সব আনুষ্ঠানিকতা ও তাদের পর্ষদে চূড়ান্ত অনুমোদন হবে। ঋণ মোট সাত কিস্তিতে পাওয়া যাবে। আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ আইএমএফ প্রথম কিস্তি প্রায় ৪৬ কোটি ডলার ছাড় করবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় আশা করছে। বাকি ঋণ প্রতি ছয় মাস পরপর ছয়টি সমান কিস্তিতে (প্রতি কিস্তি প্রায় ৬৮ কোটি ডলার) ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পাওয়া যাবে। অর্থ মন্ত্রণালয় বুধবার (৯ নভেম্বর) এ তথ্য জানিয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সুদের হার আইএমএফের নিজস্ব মুদ্রা স্পেশাল ড্রয়িং রাইটসের (এসডিআর) ভাসমান বা উন্মুক্ত হারের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। তবে সব মিলিয়ে সুদের গড় হার হতে পারে ২ দশমিক ২ শতাংশ। মোট ঋণের ওপর গড় সুদের হার হবে ২ দশমিক ২ শতাংশ। এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি বা ইসিএফের প্রায় ১০৭ কোটি ডলার ঋণ হবে সুদমুক্ত। এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি বা ইইএফের সুদহার হবে ভাসমান (ফ্লোটিং) এসডিআরের সঙ্গে ১ শতাংশ। অন্যদিকে রেজিলিয়েন্স ট্রাস্ট ফ্যাসিলিটি বা আরসিএফের ১০০ কোটি ডলার ঋণের সুদহার হবে এসডিআর রেটের সঙ্গে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ যোগ করে যা দাঁড়ায়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার এবং বিভিন্ন ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টিকারী উপাদান ঠেকাতে নতুন এ ঋণ দেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। একইসঙ্গে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়নে সহায়তা দিতে কাঠামোগত পরিবর্তনেও জোর দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, মহামারি কাটিয়ে উঠে বাংলাদেশ জোর কদমে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে এগিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ব্যাহত হয়। এতে একদিকে চলতি হিসাবের ঘাটতি বাড়তে থাকে, অন্যদিকে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকে। একই সঙ্গে, মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধি পায় এবং প্রবৃদ্ধির গতি কমে যায়।
বাংলাদেশ এসব তাৎক্ষণিক সমস্যা বেশ ভালোভাবে সামলে নিলেও দীর্ঘমেয়াদী কিছু গুরুতর কাঠামোগত সমস্যা রয়ে গেছে বলে মনে করে আইএমএফ। যেমন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হওয়া। তারা মনে করছে, সফলভাবে এলডিসি উত্তরণ নিশ্চিত করতে এবং ২০৩১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রে অতীতের সফলতার ওপর ভর করে এগোতে হবে এবং কাঠামোগত সমস্যাগুলো আমলে নিতে হবে। সেই সঙ্গে তাদের পরামর্শ, বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল গত ২৬ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর বাংলাদেশ সফরে আসে। সফরে বাংলাদেশ ব্যাংক, আন্তমন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করে তারা। আলোচনা শেষে আজ ঋণের বিষয়ে সমঝোতার কথা জানায় আইএমএফ।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আইএমএফের কাছ থেকে আমরা যেভাবে চেয়েছি, সেভাবেই সাড়ে চার বিলিয়ন (সাড়ে চারশ কোটি) ডলার ঋণ পাচ্ছি। আগামী ফেব্রুয়ারিতেই আমরা প্রথম কিস্তি পাবো।
এদিকে আইএমএফের কাছ থেকে সাড়ে চার বিলিয়ন বা ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ নিতে বাংলাদেশ সরকার আইএমএফের মিশনের সঙ্গে আলোচনা করে কিছু বিষয়ে সংস্কার করতে চেয়েছে। সফররত আইএমএফ মিশনের বিবৃতিতে এর উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় বলা হয়েছে। তবে বিবৃতিতে আইএমএফের ‘শর্ত’ হিসেবে কোনও কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারের এসব পদক্ষেপ বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাবে, অর্থনীতিতে ঝুঁকির মাত্রা কমাবে এবং অতি প্রয়োজনীয় সামাজিক, উন্নয়ন এবং জলবায়ু ব্যয় মেটানোর মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
আইএমএফের সঙ্গে ঋণ কর্মসূচির ক্ষেত্রে প্রধান পাঁচটি বিষয়ে সংস্কারে সম্মত হয়েছে সরকার। এগুলো হলো—বাড়তি আর্থিক সংস্থানের জায়গা তৈরি করা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও মুদ্রানীতি কাঠামোর আধুনিকায়ন, আর্থিক খাত শক্তিশালীকরণ, প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা ত্বরান্বিত করা এবং জলবায়ু সহনশীলতা গড়ে তোলা।
এতে বলা হয়েছে, বাড়তি আর্থিক সংস্থানের জন্য উচ্চ রাজস্ব আহরণ এবং ব্যয় যৌক্তিকীকরণ করা হবে, যা প্রবৃদ্ধি-সহায়ক খরচ বাড়াতে সহায়ক হবে। অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের ওপর প্রভাব মোকাবিলায় উচ্চ সামাজিক ব্যয় করা হবে এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি অধিকতর লক্ষ্য নির্দিষ্ট হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি মূল্যস্ফীতির দিকেই দৃষ্টি দিয়ে বাস্তবায়িত হবে। মুদ্রার বিনিময় হার অধিকতর উন্মুক্ত করলে বহিস্থ অভিঘাত মোকাবিলায় সহায়ক হবে মনে করছে আইএমএফ। এছাড়া আর্থিক খাতের দুর্বলতা কমাতে তদারকি, সুশাসন এবং রেগুলেটরি কাঠামো জোরদার করা হবে। ব্যবসা ও বিনিয়োগের জন্য সহায়ক পরিবেশের উন্নতি করা হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বড় ধরনের বিনিয়োগ এবং বাড়তি অর্থায়ন জোগাড় করা হবে।
Leave a Reply