February 5, 2025, 12:52 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
কুষ্টিয়া শহরের অনেক বেকারীতে পণ্যের দাম দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কিছু পণ্যে মুল্য কিছুটা বাড়ার ব্যাপারটি যৌক্তিক হলেও অনেক ক্ষেত্রেই দেখাদেখি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন এটা এদেশের ব্যবসায়ীদের সাধারণ স্বভাব।
করোনা পরবর্তী অর্থনীতি ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশে এক দফা বেড়েছিল প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের দাম। এবার আসন্ন বাজেটের আগেই আরেকদফা বেড়ে বেকারি পণ্যের দাম আরেক দফা বেড়েছে।
কুষ্টিয়ার একটি বড় বেকারীতে ভাল পণ্য উৎপাদনের দোহাই দিয়ে পণ্যের দাম এমনিতেই বেশী রাখে সেখানে উপরোক্ত দুটি বিষয় সামনে এনে সব পণ্যের দাম অটোমেটিক বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। গতরাতে ব্রয়লার মুরগীর চাপ কিনতে এই দাম বৃদ্ধির চাপ অনুভব করা যায়। দেড়শ বা দুইশর কাছাকাছি একটি ফ্রেইড ব্রয়লার চাপের দাম রাখা হ”েছ ১৫০ টাকা। বিসয়টি এক বিক্রয় কর্মীকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান এটা অটোমেটিক বেড়েছে। তিনি জানান সব পণ্যে বেড়েছে যেমন মিষ্টি, কেক পণ্য। তাই এটাও বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ঐ কর্মী জানান এই পণ্যটির দাম আগে ছিল ১০০টাকা। তাকে প্রশ্ন করা হলো বাজারে ব্রয়লার কেজিতে বেড়েছে কত। তিনি এবার বিষয়টি মালিক পক্ষের সাথে কথা বলে জেনে নিতে বলেন। মালিক পক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান কেজিতে ৩০/৪০ বেড়েছে। তাহলে পিসে ৫০ টাকা বাড়লো কেমন করে জানতে চাইলে তিনি জানান আরো আনুষঙ্গিক জিনিসের দাম বেড়েছে। তাকে জানতে চাওয়া হলো এক পিস ২০০গ্রামের ব্রয়লার চাপ তৈরি করতে কি কি আইটেম লাগে এবং সেগুলোর দাম কিরকম বেড়েছে। এবার তিনি ধানাই-পানাই আরম্ভ করলেন। বললেন আসেন সামনা-সামনি আলোচনা করে বুঝিয়ে দেয়া হবে।
এভাবে সব বেকারীতেই দাম বাড়ানো হয়েছে সব প্রায় পণ্যেই।
এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও সাবেক বাণিজ্য সচিব গোলাম রহমান বলেন, আমাদের ব্যবসায়ীদের কোনো নীতি-নৈতিকতা নেই। তারা যে কোনো অজুহাত পেলে সেটাকে ইস্যু বানিয়ে ভোক্তার পকেট কাটেন। তিনি বলেন, যে কোনো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি যৌক্তিক পর্যায়ে না হলে সেটা ভোক্তার পকেট কাটার সিদ্ধান্ত। তাদের নৈতিক করার জন্য অবশ্যই সরকারের কঠিন মনিটরিং করতে হবে।
সমিতির তথ্য অনুযায়ী,হস্তচালিত বেকারির সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। গত বুধবার (১ জুন) থেকে হস্তচালিত (নন ব্র্যান্ড) বেকারিপণ্যের দাম ২০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ র“টি, বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতি। কিš‘ দাম বেড়েছে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ। কোনো কোনো পণ্যে এর চেয়ে বেশি।
মালিকরা বলছেন, দ্রব্যমূল্য বাড়ায় দীর্ঘদিন তারা লোকসান দি”িছলেন। ভাংতি টাকা দেওয়া-নেওয়াকেও দাম বেশি বাড়ানোর কারণ বলছে সমিতি। ব্যবসায়ীদের নীতি-নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ র“টি, বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক রেজা বলেন, ‘সমিতি ২০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে। তবে অধিকাংশ বেকারি মালিক সে দাম মানেননি। একটা সমিতি তো সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এলাকাভেদে এ পরিস্থিতি হয়েছে।’
কুষ্টিয়াতে মিষ্টি পণ্যেও এরকম দাম বেড়েছে। এক মিষ্টি দোকানী বললেন বাজেটে যেসব জিনিসের দাম বাড়বে তা আগেই বেড়ে গেছে দোকান পর্যায়ে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো বাজেটে যে জিনিসগুলোর দাম কমবে সেগুলোর কোন কোনটি দাম কমেছে সে বলতে বলতে পারলো না।
স্থানীয় বেকারীগুলোর বাইরে জেলার বাইরে থেকে সরবরাহকৃত নানা বেকারী পণ্যেও দাম বৃদ্ধি হয়েছে। অলটাইম কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হাসান বসির আসকারী জানান এপ্রিল মাসে ৪ পিসের কেকের প্যাকেট পাইকারি ২৫ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। মে মাসে এটি ৩০ টাকা ও জুনের ২ তারিখ থেকে ৩৫ করে বিক্রি করতে কোম্পানি বলেছে। আগে ১০ পিচের প্যাকেট ছিল ৫০ টাকা, এখন সেটা ১২০ টাকায় কিনতে হ”েছ।
বেকারি মালিক সমিতির সভাপতি জালাল হোসেন বলেন, মে মাস থেকেই আটা, চিনি, গুঁড়া দুধসহ বেকারির সব কাঁচামালের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। সেজন্য আমাদের সব ধরণের পণ্যের মূল্য বাড়াতে বাধ্য হতে হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন অনেক ক্ষেত্রেই এসব দামের কোন যৌক্তিকতা নেই। কুষ্টিয়া নাগরিক কমিটির সভাপতি বিশিষ্ট সার্জন প্রফেসর ডা. এসএম মুস্তানজিদ জানান ব্যবসাতে মানবিকতার কোন ¯’ানই আজকাল দেখতে পাওয়া যায়না। পণ্যের দাম কারসাজি করাই যেন এখন ব্যবসা-বাণিজ্যের বৈশিষ্টে পরিণত হয়েছে। এটা আইন প্রয়োগকারী সং¯’া দেখতে পারে।
সম্মিলিত সামাজিক জোটের চেয়ারম্যান ড. আমানুর আমান বলছেন কঠোরভাবে আইন প্রয়োগের মাধ্যমেই সমাজ থেকে খারাপ প্রকৃতির ব্যবসাবাজী বন্ধ করতে হবে। সাজা প্রয়োগ করে খারাপ প্রকৃতির ব্যবসায়ীদের ব্যবসা থেকে উ”েছদ করে দিতে হবে। না হলে পরি¯ি’তির উন্নতি করা মুশকিল। কারন এসব খারাপ প্রকৃতির অবৈধ মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের কারনে সাধারণ ভাল ব্যবসায়ীরা নিরুপায় হয়ে যায়।
Leave a Reply