December 22, 2024, 3:57 pm
এসএম শামীম রানা/মোহাইমিনুর রহমান পলল//
দীর্ঘ প্রায় দেড় মাস বন্ধ থাকার পর প্রতিষ্ঠান চালু করছে কুষ্টিয়া শহরের বিপণিবিতান ও শপিংমলের ব্যবসায়ীরা। তবে এ নিয়ে ইচ্ছে ও ভয় দুটো নিয়েই সমান সংশয়ে রয়েছে ব্যবসায়ীরা। এ লক্ষ্যে কেউ কেউ ইতোমধ্যে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা শেষ করেছেন। ছুটিতে থাকা দোকানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও চলে এসেছে।
দোকান-পাটগুলো সকাল ১০টা থেকে ৪টা পর্যন্ত সীমিত আকারে চালুর ঘোষণা রয়েছে। রয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্ত। এই সীমিত পরিসর ও সামাজিক দূরত্ব ও করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে বিভিন্ন পদক্ষেপের নির্দেশনার যে কথা বলা হয়েছে বেচাকেনা শুরু হলে সামাজিক দূরত্ব কতটা বজায় রাখা যাবে তা নিয়ে সন্দিহান খোদ ব্যবসায়ীরাই। যদিও তারা বলছেন সব রকমের হ্যান্ড স্যানিটাইজার, জীবাণুনাশক ওষুধ ছিটানোসহ সব ধরনের পদক্ষেপ তারা নেবে।
কুষ্টিয়া শহরের অধিকাংশ দোকনই রয়েছে নবাব সিরাজু-দ্দৌলা সড়কে। দুইপাশ দিয়ে সাড়ি সাড়ি দোকান। প্রধান বেচা কেনা হয় এই সড়কটির মজমপুর গেইট থেকে বড়বাজার পর্যন্ত। প্রায় ২শতাধিক দোকান রয়েছে। রয়েছে দুটি শপিংমল।
সোমবার সকালে সরেজমিনে, দোকানমালিক ও কর্মচারীদের অনেককেই বিপণিবিতানে নিজেদের দোকানের সামনে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। তঁদের একজন পোশাক ও জুতা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইকবাল জানান তিনি দোকান খুলবেন। এর প্রস্তুতি নিতে দোকানে এসেছেন। কর্মচারীদেরও ফোন করেছেন চলে আসার জন্য। তারা এসেছেন।
ব্যবসায়ী নেতা ও কুষ্টিয়া চেম্বারের সহ-সভাপতি এসএম কাদেরী শাকিল জানান ঈদের কেনাকাটা করতে এই দোকানগুলোতে প্রচুর ক্রেতা সমাগম হয়ে থাকে। তাদের ভিঁড়ে সামাজিক দূরত্ব শতভাগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। তারপরও সর্বোচ্চ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সবগুলো প্রবেশপথে জীবাণুনাশক ওষুধ ছিটানো হবে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা হবে। এগুলোর তদারকির জন্য সমিতির পক্ষ থেকে লোক নিয়োগ দেওয়া হবে।
শহরের প্রধান ও অভিজাত বেকারী খাদ্য প্রস্তুতকারী মৌবনের সত্ত্বাধিকারী হাবিবুল আলম জানান দোকান খোলার খবর পেয়ে গ্রাম থেকে কর্মচারীরা আসতে শুরু করেছে। তিনি বলেন ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি জানান বিশেষ করে রমজানে তার ইফতার পণ্যের বড় ব্যবসা থাকে প্রতিবছর। এবার তা হয়নি। এখন যে কয়দিন ব্যবসা করতে পারবেন তা দিয়ে লোকসান পুশিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন।
তবে এই ব্যবসায়ী জানান সবকিছুর আগে জীবনের মুল্য। জীবন বাঁচলে ব্যবসা হবে। তিনি জনগন যাতে নিােপত্তার সাথে ব্যবসা করতে পারে সেদিকে জোর দেন।
অনেক ব্যবসায়ী ১০ মে মার্কেট খোলা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানান। তাদের ভাষায় এখন গাড়ি চলাচল বন্ধ। দোকানের স্টাফরা সবাই বাড়ি চলে গেছে। তারা কীভাবে আসবেন? তারা সময়ের কথা বলেন।
জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায় সরকারের পক্ষ থেকে সুষ্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিপণিবিতানগুলোতে ব্যবসায়ীরা তা মেনে চলছেন কি না তা তদারকির জন্য সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় অভিযান চালানো হবে। কেউ যদি তা না মানেন তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাা ও কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার তাপস কুমার সরকার জানান মার্কেট চালুর বিষয়টি সরকারের উ”চপর্যায়ের। এটা অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই সরকারকে করতে হয়েছে। তবে স্বা¯’্যবিধি, সামাজিক দূরত্বসহ নিয়ম মানতে হবে। যারা মানবেন তারা সুস্থ থাকবেন। না মানলে অসুস্থ্য হবেন।
তবে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিশেষজ্ঞদের। জনস্বাস্থ্যবিদবিদ ও আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন জানান, ‘বাংলাদেশের যে পরি¯ি’তি তাতে কোনোভাবেই দোকানপাট খোলা রেখে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব নয়। ব্যবসায়ীদের জনগণের কথা চিন্তা করে পিছিয়ে আসা সবার জন্য মঙ্গলজনক হবে। আমাদের দেশের মানুষ লকডাউনই মানতে চায় না। আর দোকানপাট হবে করোনা সংক্রমণের ভয়াবহ উৎসকেন্দ্র। সরকারকেও এই সিদ্ধান্ত বিবেচনার আহ্বান জানাই।’
এপফষপল কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেছেন নিয়ম মেনে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হবে। নিয়মের ব্যত্যয় করলেই দোকান কন্ধ করে দেয়া হবে। তিনি বলেন সাধারন মানুষকেও নিয়ম-বিধি মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের কেনাকাটা করতে হবেএ তিনি বলেন মুখে মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক। মাস্ক না থাকলেও বিধিনুযায়ী ব্যবস্থা প্রশাসনের কর্তব্য।
জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন সবকিছু নিয়ম মেনেই করতে হবে। যে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তার প্রতিটিই প্রতিপালন করতে হবে। ব্যত্যয় হলেই সমস্য সৃষ্টি হবে। তিনি সকল ব্যবসায়ীদের নিজ নিজ বিবেক বোধ থেকেই, দায় থেকেই বিষয়টি এগিয়ে নেয়ার আহবান জানান।
শনিবার (৯ মে) জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে রবিবার থেকে দোকান-শপিংমল খোলার বিষয় নিয়ে কার্যালয়ে এক জর“রি সভায় এ সিদ্ধান্তের কথা জানান জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন।
জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সভায় কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত, কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি রবিউল ইসলামসহ জেলার বড় বড় শপিং মল ও বিপণিবিতান সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, সকাল ১০টায় দোকান খুলে বিকেল ৪টার মধ্যে অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বড় বড় শপিং মলসহ বিপণিবিতানের সামনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের কড়া নজারদারী থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোনো দোকান খোলা রাখতে না পারলে সেই দোকান বন্ধ করে দেওয়া হবে। এখানে নিয়মকে বড় করে দেখা হবে, জীবনের মুল্যকে বড় করে দেখা হবে।
জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন হুঁশিয়ারি উ”চারণ করে বলেন, ঈদের শপিং সবার জন্য উন্মুক্ত। কোনো বাধা নেই। তবে মাস্ক ছাড়া কোনো ক্রেতা শপিং করতে পারবে না। দোকানদাররা নিজ দায়িত্বে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করবে। এর ব্যত্যয় করা যাবে না।
তিনি বলেন কোন ক্রেতা মাস্ক না পড়ে কোন দোকানে প্রবেশ করলে বিক্রেতাকে তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। অথবা মাস্ক পড়ে কেনাকাটার নিয়োজিত হতে হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন আমরা অনেক কঠোর হয়েছে। অনেকভাবে বুজিয়েছি। এখন সরাকরের সিদ্ধান্তে মার্কেট ওপেন করা হচ্ছে। এখএন সরকারী নিয়ম মেনেই সবকিছু করতে হবে।
Leave a Reply