December 22, 2024, 1:22 pm
ড. আমানুর আমান/
আজ ২২শে শ্রাবণ। বাঙালীর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮০তম প্রয়াণ দিবস। একই অঙ্গে বহুমাত্রিক প্রতিভার এক অনন্য আপন সত্ত¡ার অধিকারী এই কবি সেই প্রতিভার আলো দিয়েই বিশে^র দরবারে উদ্ভাসিত করে গেছেন বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে। বাংলা সাহিত্যকে দিয়ে গেছেন এক উচ্চ মর্যাদা। তিনি পেয়েছেন বিশ^কবির সম্মান। তিনি বাঙালীর শ্রেষ্ঠতম কবি ; বিশে^র অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি।
বাংলা সাহিত্যের এই অসামান্য প্রতিভা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১২৬৮ বাংলা সালের ২৫ বৈশাখ (ইংরেজি ১৮৬১ সালের ৭ মে) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মাতা সারদাসুন্দরী দেবী। বাংলা ১৩৪৮ সালের ২২ শ্রাবণ (ইংরেজি ৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈতৃক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য প্রতিভার উন্মেষ ঘটে শৈশবেই। মাত্র আট বছর বয়সে তাঁর লেখালেখির হাতেখড়ি। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। এরপর এই লেখালেখি চলে বিরামহীন। ১৮৭৮ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কবিকাহিনী’ প্রকাশিত হয়। এ সময় থেকেই কবির বিভিন্ন ধরনের লেখা দেশ-বিদেশে পত্রপত্রিকায় প্রকাশ পেতে থাকে। উপন্যাস, নাট, সঙ্গীত, প্রবন্ধ, চিত্রকলা, দর্শন বাংলা সাহিত্যের এমন কোন শাখা নেই যেখানে বিচরণ করেননি রবীন্দ্রনাথ। অনণ্য অসাধারণ সৃজনশীলতা, নিবিড় জীবনবোধ ও ভাষার বাঙময় প্রকাশভঙ্গি দিয়ে সাহিত্যের সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। লিখেছেন বাংলা ও ইংরেজি ভাষায়। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের পাঠ্যসূচিতে তার লেখা সংযোজিত হয়েছে।
এর মধ্যে ১৯১০ সালে প্রকাশিত হয় তার ‘গীতাঞ্জলী’ কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। বলা হয়ে থাকে রবীন্দ্রনাথের লেখার প্রধান উপজীব্য ছিল জীবনানুভুতি যেখানে বাঙালীর জাতিসত্তা, আশা-আকঙ্খা-নিরাশার আবেদনগুলি স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। এটি প্রবলভাবে এসেছে যে তিনি হয়ে উঠেছেন বাঙালীর জাতিসত্তা ও বোধের এক অপার আধার।
জীবিতকালে তার প্রকাশিত মৌলিক কবিতাগ্রন্থ হচ্ছে ৫২টি, উপন্যাস ১৩, ছোটগল্পের বই ৯৫টি, প্রবন্ধ ও গদ্যগ্রন্থ ৩৬টি, নাটকের বই ৩৮টি। কবির মৃত্যুর পর ৩৬ খন্ডে ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ প্রকাশ পায়। এ ছাড়া ১৯ খণ্ডের রয়েছে ‘রবীন্দ্র চিঠিপত্র’।
এসব মৌলিক সৃজনশীলতার বাইরেও কবির প্রতিভা স্ফুরণ রয়েছে। জমিদার পরিবারের সদস্য হিসেবে তিনি জমিদারীও করেছেন। এই জমিদারী কারবারে তার প্রজা হিতৈষী মনোভাব সর্বজন বিদিত। তিনি ১৮৯১ সাল থেকে পিতার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোর ও ওড়িশায় জমিদারিগুলো তদারকি করেন। এখানকার পৈতৃক “কুঠিবাড়িতে’ তিনি বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। এখানে ছিল তাঁর ব্যবসায়ীক কার্যক্রমও। সেই স্মৃতি নিয়ে একানে এখনও জীবন্ত কুষ্টিয়া শহরের টেগর লজ।
পাশাপাশি তিনি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তি-নিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তি-নিকেতনে চলে যান। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করেন ‘বিশ্বভারতী’।
বিশ ভ্রমণেও কবি ছিলেন এক অনন্য। তিনি ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি।
জীবদ্দশাতে কবি দুই হাজার গান রচনা করেন। অধিকাংশ গানের সুরারোপর তারই। গীতবিতান হলো তার সমগ্র গানের গ্রন্থ।
কবির লেখা ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। ভারতের জাতীয় সংগীতটিও কবির লেখা। এ দুটি গান দিয়েই কবি চির স্মরণীয় হয়ে থাকতে পারেন শতকোটি মানুষের হৃদয়ে।
Leave a Reply