দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে প্রবেশে বাধা দেয়ার কারনেই হামলা করা হয় দুই স্বেচ্ছাসেবক ছাত্রলীগ কর্মীর উপর। জানা গেছে গত রোববার হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ঢোকা নিয়ে এক রোগীর স্বজনের সঙ্গে কিছু স্বেচ্ছাসেবকের তর্কাতর্কি হয়।
জানা গেছে স্বেচ্চাসেবকের দায়িত্বে নিয়োজিত ছাত্রলীগের কর্মীরা বিভিন্ন গ্রæপে ভাগ হয়ে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে আসছে। ঐ দিন কয়েকজন বখাটে করোনা ইউনিটে তাদের রোগীর কাছে যেতে চায়। বাধা দেন স্বেচ্ছাসেবক ছাত্রলীগ কর্মীরা। এতে ক্ষুব্ধ হয় ঐ বখাটেরা। বাইরে বের হলে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে জানায় স্বেচ্ছাসেবক ছাত্রলীগ কর্মীরা।
সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে করোনা ডেডিকেডেট ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের পুরাতন গেটের সামনে এবং হাসপাতালের পাশে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের সামনে পৃথক হামলার ঘটনা ঘটে। তবে রাতে অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
আহত দুজন হলেন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ হৃদয় (২৩) ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্র সামিউল হক ওরফে সম্রাট (২২)। হৃদয়ের শরীরে শক্ত কিছু দিয়ে পেটানো হয়েছে। অন্য দিকে ছুরি দিয়ে সামিউলের মাথা, গাল, হাত ও পিঠ কেটে দেওয়া হয়েছে। মাথা ও গালে সেলাই দেওয়া হয়েছে। তাঁদের ২৫০ শয্যা করোনা ডেডিকেডেট হাসপাতালের অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।
জানতে চাইলে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকার বলেন, ‘দুজনেরই আঘাত গুরুতর। তবে তাঁরা শঙ্কামুক্ত। তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
হাসপাতাল ও জেলা ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, করোনাকালে ২৫০ শয্যা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ ওরফে চ্যালেঞ্জের নেতৃত্বে ৬৫ জন কর্মী রোগীদের সেবায় ২৪ ঘণ্টা সহযোগিতা করে আসছেন। তাঁদের প্রত্যেকের শরীরে নির্ধারিত গেঞ্জি ও আইডি কার্ড থাকে। গত এক মাসে এই হাসপাতালে রোগীর ব্যাপক চাপ বাড়তে থাকে। বর্তমানে সেখানে ৩০০ করোনা পজিটিভ রোগী ভর্তি আছেন। যদি কোনো রোগীর ওষুধ আনার প্রয়োজন হয়, তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বেচ্ছাসেবকেরা কিনে এনে দেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোহাম্মদ হৃদয়ের ভাষ্য, গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে এক রোগীর প্রয়োজনীয় জরুরি ওষুধ কেনার জন্য হাসপাতালের পুরাতন গেটের সামনে যান তিনি। সেখানে এক যুবক তাঁকে ওষুধের দোকানের পাশে ডেকে নিয়ে মারতে থাকেন। এ সময় আরও চার/পাঁচজন যুবক মারধরে যুক্ত হন। একই সময়ে সামিউল হাসপাতালের দিকে আসছিলেন। তাঁকে হাসপাতালের পাশে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের সামনে মারধর করা হয়। তাঁকে মারধরের সময় সেখানে ১০ থেকে ১৫ জন তরুণ ও যুবক অংশ নেন।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ বলেন, ‘ঘটনাটি পুলিশ সুপারকে জানানো হয়েছে। মানুষকে মাসের পর মাস সেবা দিতে গিয়ে এই প্রথম বিনিময়ে আঘাত পেলাম। এ ঘটনায় যাঁরা জড়িত, তাঁদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।’
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বিরুল আলম বলেন, কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। রাতে তাঁদের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে। তাঁরা পলাতক। তবে শিগগিরই তাঁদের আটক করা হবে। থানায় মামলা দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply