দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
দ্রব্যমূল্য দেশে অস্বাভাবিক। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশে উৎপাদন ও বাজার চাহিদার সাথে দ্রব্যের দাম একেবারেই মিলে না। বিশেষজ্ঞরা এটাকে কারসাজি বলছেন যা ঘটছে পণ্য সরবরাহের যে কোন স্তরে। বিগত নরকার জনগনের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে এই অজুহাতে দ্রব্যমূল্য কমাতে কার্যত কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি। যার ফলে দেশের সাধারণ মানুষের জীবন ধারণ কঠিন হয়ে পড়ে। বাজারের সেই দুঃসহ অবস্থা থেকে কীভাবে ক্রেতা-ভোক্তাকে স্বস্তি দেওয়া যায় তার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার। নিতে যাচ্ছে একগুচ্ছ পদক্ষেপ। একই সাথে বাজার অভিযান জোরদার করা হচ্ছে।
পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সবার আগে অতি প্রয়োজনীয় তিন পণ্য-আলু, পেঁয়াজ এবং ডিম আমদানির ওপর সব ধরনের শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ ছাড়া পণ্যমূল্য কমাতে সরকার আরও যেসব পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে তার মধ্যে আছেÑপর্যাপ্ত পণ্য আমদানি করা, পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখা, পণ্যবাহী পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, অভ্যন্তরীণ পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা, জাতীয় ভোক্তা অধিদফতর-বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মাধ্যমে বাজার তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করা, সর্বোপরি বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
গত সপ্তাহে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দ্রব্যমূল্য বিষয়ক বৈঠকেও এসব বিষয়ে জোর দিয়ে আলোচনা করা হয় এবং যেকোনো মূল্যে ভোগ্যপণ্যের উচ্চ মূল্য কমিয়ে এনে দেশের সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার বিষয়ের ওপরও জোর দেওয়া হয়। এ ছাড়া বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি বর্ণিত বাজার তদারকি কার্যক্রম জোরদার করার কথা বলা হয়। পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য হ্রাস না পাওয়ার কারণ উদঘাটন করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়। অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। আর আমদানিকৃত পণ্যের শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করেন ব্যবসায়ীরা।
এরপর পণ্যমূল্য কমাতে শুল্ক হ্রাসসহ দ্রুত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয় সরকার। তারই অংশ হিসাবে কোন পণ্যের কি ধরনের শুল্ক নির্ধারণ করা আছে এবং কোন পণ্যের শুল্ক কতটা কমানো যেতে পারে সেটি জানাতে বলা হয় বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনকে। ট্যারিফ কমিশন শুল্ক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আপাতত অতি প্রয়োজনীয় তিন পণ্য-আলু, পেঁয়াজ এবং ডিমের আমদানি শুল্ক কমানোর বিষয়ে মতামত গতকাল রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। তাতে প্রস্তাব করা হয়েছে, এই তিন পণ্যের সব ধরনের আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার।
ট্যারিফ কমিশনের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মূল্য কমিয়ে আনা এবং সম্প্রতি দেশে বন্যার কারণে সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়ায় ক্রেতাকে স্বস্তি দিতে পেঁয়াজ, আলু ও ডিম আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করে এসব পণ্যের আমদানি উন্মুক্ত করা হবে। এতে বলা হয়, পেঁয়াজের ওপর মোট ১০ শতাংশ, আলুর ওপর ৩৩ শতাংশ এবং ডিমের ওপর ৩৩ শতাংশ শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে ট্যারিফ কমিশনের পক্ষ থেকে শুল্ক কমানোর এই প্রস্তাব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য পাঠাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে। রাজস্ব বোর্ড এসআরও জারি করবে দ্রুত সময়ের মধ্যে। এসআরও জারির পর শুল্ক কমানোর হার বাস্তবায়ন হবে এবং এই তিন পণ্যের দাম কমে আসবে।
জানা যায়, বর্তমানে পেঁয়াজ আমদানিতে ৫ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি ও ৫ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি বিদ্যমান রয়েছে। ডিম ও আলু আমদানিতে কাস্টমস ডিউটি ২৫ শতাংশ ও রেগুলেটরি ডিউটি ৩ শতাংশ এবং এআইটি রয়েছে ৫ শতাংশ করে। যা পুরোপুরি প্রত্যাহার করে আমদানিতে উৎসাহিত করতে পারলে স্থানীয় বাজারমূল্য কমানো সম্ভব হবে। যা মূল্যস্ফীতিকেও হ্রাস করবে বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন পণ্য তিনটির আমদানি ও স্থানীয় উৎপাদন বিশ্লেষণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত সরকার পেঁয়াজের ন্যূনতম রফতানি মূল্য ৫৫০ ডলার নির্ধারণ করেছে এবং ৪০ শতাংশ বাড়তি রফতানি শুল্ক আরোপ করেছে। অন্যদিকে সবমিলিয়ে ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক দিতে হয় কাস্টমসকে।
প্রস্তাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ডিম, পেঁয়াজ ও আলুর আমদানি উন্মুক্ত করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক প্রত্যাহার করলে কম খরচে পণ্যগুলো আমদানি হবে। এতে দেশের বাজারকে স্থিতিশীল রাখা যাবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, প্রতি বছর দেশে ৬ থেকে ৭ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হলেও বিশেষ অনুমতি ছাড়া ডিম ও আলু আমদানি হয় না। দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৮ লাখ টন, আলুর চাহিদা রয়েছে ৯০ লাখ টন। প্রতি দিন সারা দেশে প্রায় ৪ কোটি ডিম উৎপাদন হয়। কিন্তু বন্যা আক্রান্ত ১১টি জেলায় ডিম ও মুরগির উৎপাদন অবকাঠামো ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি অনেক মুরগি মারা গেছে বলে জানায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, দেশে গত বছরের তুলনায় এবারে ১২ লাখ টন আলুর উৎপাদন কম হয়েছে, যার একটি নেতিবাচক প্রভাব কয়েক মাস ধরেই বাজারে রয়েছে এবং দীর্ঘ সময় ধরে রেকর্ড পরিমাণ দামে আলু কিনতে হচ্ছে ভোক্তাকে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, শর্ত সাপেক্ষে ডিম ও আলু আমদানিযোগ্য হলেও বর্তমানে এ দুটি পণ্য আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাই সুনির্দিষ্ট মেয়াদে পণ্য দুটি আমদানিতে শুল্ক রেয়াত সুবিধা দিলে সরকারের কাক্সিক্ষত রাজস্ব আহরণে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা নেই।
বাজার অভিযান জোরদার করা হচ্ছে/
এদিকে দ্রব্যমূল্য কমাতে বাজার অভিযান জোরদার করা হচ্ছে। রোববার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা বর্তমান সরকারের সামনে বড় অগ্রাধিকার বিষয়। এ জন্য বাজার তদারকি কার্যক্রম জোরদার করা হবে। পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য হ্রাস না পাওয়ার কারণ উদঘাটনও করা হবে।
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি