December 21, 2024, 8:02 pm
শুভব্রত আমান, কুষ্টিয়া, দৌলতদিয়া থেকে ফিরে/
অবশেষে শিক্ষার্থীদের হস্তক্ষেপে রাজবাড়ির দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ও পন্টুন এলাকা জবরদখল করে রাখা অটোরিকশাওয়ালাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ১১ আগষ্ট শিক্ষার্থীরা ফেরিঘাটে গিয়ে লঞ্চঘাট ও ফেরিঘাটে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অনিয়ম এবং অব্যাবস্থাপনা নিয়ে প্রতিবাদ করেন।
তারা অতিরিক্ত টাকায় ফেরির টিকিট বিক্রি করার অভিযোগ করেন এবং ফেরিঘাটের পন্টুন অটোরিকশার দখলে থাকার কারণে ফেরি থেকে যানবাহন উঠা নামায় সমস্যার কথা তুলে আনেন। এসময় সেখানে উপজেলার দায়িত্বরত সেনাবাহিনীর একটা টিম পৌঁছায়। তাদের সহায়তায় তাৎক্ষনিক আটোরিকশা উচ্ছেদ করা হয়।
দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটে কর্মরত বিআইডব্লিউটিএ এর ট্রাফিক সাব ইন্সপেক্টর শিমুল ইসলাম জানান, তারাও দীর্ঘদিন ধরে এব্যাপারে কথা বলেছেন। কিন্তু কার্যকর হয়নি। এবার ফলপ্রসু হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে যা ঘটছিল সেখানে/
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম প্রবেশদ্বার রাজবাড়ির দৌলতদিয়া ফেরিঘাট। ওপাড়ে পাটুরিয়া ঘাট। পদ্মাসেতু চালু হবার পর এ ফেরিঘাটে যানবাহন পারাপার কিছুটা কমে গেলেও ফেরি সার্ভিস যথারীতি চালু রয়েছে। প্রতিদিন প্রায় হাজারের বেশী যানবাহন দৌলতদিয়া ফেরিঘাট দিয়ে রাজধানী ও দক্ষিণাঞ্চলের পথে চলাচল করে।
এই ফেরিঘাটে সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছিল ঘাট ও এমনকি পন্টুন জুড়ে অটোরিকশার জবরদখল। পাটুরিয়া ঘাট থেকে ফেরি দৌলতদিয়া ঘাটে এসে পৌঁছানোর সাথে সাথেই পাল্লাদিয়ে বিপুল সংখ্যক অটোরিকশা ঘাট জুড়ে ফেলছিল। এই ব্যাটারি চালিত যানগুলোর লক্ষ্য ফেরি থেকে নামা সাধারণ যাত্রী। এগুলো এমনকি ঝুঁকি নিয়ে পন্টুন ব্রিজেও ঢুকে সাড়ি বেঁধে দাড়িয়ে থাকছিল। ফলে ফেরি থেকে বড় যানবাহন নামতে প্রচুর ভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছিল। দুর্ঘটনাও ঘটছিল। ফেরিতে যানবাহন লোড-আনলোডে বাড়তি লাগছিল সময় ।
দৌলতদিয়া ঘাট সূত্রে জানা গেছে, সেখানে ৭টি ফেরিঘাট রয়েছে। যেখানে জাহাজ রয়েছে ২১টি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এই ঘাটে যানবাহনের পরিমাণ বাড়া-কমার কারনে বর্তমানে তিনটি ঘাট চালু রয়েছে। যেখানে ছোটবড় ৯/১০টি জাহাজ নিয়মিত যানবাহন পারাপার করছে।
নিয়মিত এ ঘাটে চলাচল করেন এমন অনেকেই জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিটি ঘাটেই অটোরিকশার দৌরাত্ম চলে আসছিল। অথচ ফেরিঘাটের পন্টুনে কোনো ধরনের যানবাহন অবস্থান করার নিয়ম নেই। দায়িত্বরত আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী এ অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হন।
বিষয়টি স্বীকার করেছেন বিআইডবিøউটিসির দায়িত্বরত কর্মকর্তারা। তারা জানান, একটি ফেরি যানবাহন নিয়ে ঘাটে ভিঁড়ছে মানে সেখানে আনলোড-লোড দুটি বিষয়ই যুগপৎ ঘটে থাকে। যেখানে ফেরিতে লোড করা যানবাহন নামাতে হয় এবং পারাপারের জন্য অপেক্ষমান যানগুলিকে লোড করতে হয়।
“কিন্তু ঘাট ও পন্টুন জুড়ে অটো রিকশা অবস্থান করায় ফেরিতে যানবাহন লোড-আনলোডে চরম অসুবিধা হচ্ছিল। সেই সঙ্গে পন্টুনের শৃঙ্খলা রক্ষা করাও কঠিন হয়ে পড়ছিল। ক্ষেত্র বিশেষে, তাদেরকে অনেকসময় পন্টুন থেকে অটোরিকশা অপসারণে কাজ করতে হচ্ছিল। এটা সুখকর ছিল না। এটা কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছিল,” জানান, ফেরি কর্মচারী বাকি বিল্লাহ বিকুল।
এই কর্মচারী জানান, ফেরিতে প্রায় সময়ই প্রচুর যাত্রী পার হয়ে থাকেন। তাদের কারো কাছে ভারী লাগেজ থাকে। অটোরিকশাওয়ালাদের টার্গেট থাকে ঐসব যাত্রী। তিনি জানান, এজন্য ফেরি পৌঁছানোর আগেই তারা পন্টুন ব্রিজ পর্যন্ত চলে আসেন। তখন পন্টনে নজীরবিহীন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
“এগুলো থেকে পন্টুন পরিস্কার হতে কখনো প্রায় ১০/১৫ মিনিট লেগে যাচ্ছিল। যাত্রী বাহন করা দুরপাল্লার গাড়িগুলোকে সময় নষ্ট করতে হয় বলে তারা প্রতিনিয়তই অভিযোগ করছিলেন।
কুষ্টিয়া-ঢাকা চলাচলকারী এসবি পরিবহনের সুপাভাইজার জাহাঙ্গীর হোসেন মিলন বলেন, পন্টুন পরিস্কার না থাকায় প্রায় ৮/১০ মিনিট নিস্ক্রিয় থাকতে হতো। ঐ অবস্থায় নামার চেষ্টা করে প্রায় কমবেশী দুর্ঘটনা ঘটছিল বলে তিনি জানান।
জাহাঙ্গীর অভিযোগ করেন, ঘাট কেন্দ্রীক একটি চক্র এই বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করছিল। এ বিষয়ে কিছু বললে স্থানীয়দের হাতে লাঞ্ছিত হতো বলে জানান তিনি।
ট্রাক চালক রশিদুজ্জামান তিনি ঢাকা থেকে মালপত্র নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে থাকেন। তিনি জানান, ট্রাকে অনেক ভারী মালামাল লোড থাকে। যে কারণে ইচ্ছা করলেই গাড়ির গতি কম-বেশী করার সুযোগ থাকে না। ট্রাকগুলোকে হাইগিয়ার দিয়ে দ্রæত সড়কে উঠতে হয়। সংযোগ সড়কে গাড়ির গতি কমালে ওই গাড়ি নিয়ে সড়কে উঠতে অনেক বেগ পেতে হয়। অনেক সময় উল্টেও যায়।
তিনি আরও জানান, অনেসময় তিনি দেখেছেন, রাস্তজুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা অটোরিকশায় একটু ছোঁয়া লাগলেও বাস-ট্রাক চালকদের কাছ থেকে একটি চক্র বড় অঙ্কের জরিমানা আদায় করে থাকে।
কথা হয় অটোরিকশাচালক ইউনুস আলরি সঙ্গে। তিনি দাবি করেন, পন্টুন পর্যন্ত না গেলে লাগেজওয়ালা যাত্রী পাওয়া যায় না। তার দাবি তিনি গেলেও কেউ না কেউ কোনভাবে কাউকে ম্যানেজ করে ঠিকই পন্টুনে যাবেন। তাই এখানে প্রতিযোগতীর মতো পরিস্থিতি হয়ে যায়।
বিআইডবিøউটিসি’র দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জানান, এসব একেবারেই কাম্য ছিল না। তারা তাদের সীমিত লোকবল দিয়ে সবকিছু ম্যানেজ করার চেষ্টা করে আসছিলেন। তিনি জানান, এই মুহুর্তে এই সমস্যা দুর হয়েছে।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র শুক্রবার সকালে জানান, ২২ জন আনসার সদস্য ফেরিঘাটে কর্মরত। তারা এটি তদারকি করছেন। তাদের সাথে পুলিশ ছাড়াও বর্তমানে কিছু শিক্ষার্থী কাজ করছেন। তিনি জানান, বিআইডবিøউটিসি’র চাহিদার প্রেক্ষিতে প্রয়োজনে আরও পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।
Leave a Reply