December 22, 2024, 9:13 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অস্থায়ী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। তবে এই সরকারের মেয়াদ কত দিন, হবে তা চূড়ান্ত হয়নি। ওদিকে, সংবিধানে এ ধরনের সরকার ব্যবস্থার বিধান না থাকায় সরকার গঠনের পর নিতে হবে সাংবিধানিক বৈধতা।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। বঙ্গভবনে আজ রাতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কসহ সংশ্লিষ্টদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের বাকি সদস্যদের নাম চূড়ান্ত করা হবে। তবে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার কখন গঠিত হবে এ বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বাকি সদস্যদের বিষয়টি সুরাহা হলেই অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠন করা হবে।’
ড. ইউনূস বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন। বৃহস্পতিবার তিনি দেশে আসবেন। সেদিনই শপথ হতে পারে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘দেশ এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এ সংকট উত্তরণে যত দ্রুত সম্ভব অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠন করা জরুরি। উপদেষ্টামণ্ডলীর অন্যান্য সদস্য মনোনয়নের ক্ষেত্রে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করার পরামর্শ দেন। এ ছাড়া তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে মনোনয়ন দেওয়ার পরামর্শ দেন। রাষ্ট্রপতি সংকট উত্তরণে দেশবাসীকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।’
এ সময় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৩ জন সমন্বয়ক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, বাংলাদেশের সংবিধানে এ ধরনের সরকারের কোনও বিধান নেই। সংবিধানে কেবল নির্বাচিত সরকারের কথাই বলা আছে। নির্বাচিত সরকারের বিকল্প হিসেবে আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানটি থাকলেও উচ্চ আদালত তাকে অবৈধ ঘোষণা করেন। পরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ২০০৯-১৪ মেয়াদের সময় সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানটি বাতিল হয়। ফলে সংবিধানে অন্তর্ভুক্তিকালীন সরকারের বিধানটি না থাকায় এটি কীভাবে গঠিত হবে, তা নিয়ে নতুন প্রশ্ন জেগেছে। অবশ্য বিচারপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অস্থায়ী সরকারের প্রধান হওয়ার বিষয়টিকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রাষ্ট্রের ক্লান্তিকালে এ ধরনের একটি বিধান করা যেতেই পারে। তবে সংবিধানে ভবিষ্যতে এর বৈধতা দিতে হবে।
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান ও ক্ষমতা হস্তান্তরের লক্ষ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান-সংবলিত বাংলাদেশের সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধন আইন, ১৯৯৬ সালে পাস হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের চতুর্থ ভাগে ‘২ক পরিচ্ছদ: নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ নামে নতুন পরিচ্ছেদ যোগ হয়।
এতে ৫৮ক, ৫৮খ, ৫৮গ, ৫৮ঘ ও ৫৮ঙ নামে নতুন অনুচ্ছেদ সন্নিবেশিত হয়। এতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ এর অন্যান্য উপদেষ্টা নিয়োগ কার্যক্রম ও মেয়াদকালসহ বিস্তারিত বিষয়ে উল্লেখ ছিল। পরে এই পদ্ধতি অনুসরণ করেই তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে উচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অবৈধ ঘোষণা করার প্রেক্ষাপটে ২০১১ সালে ৩০ জুন এই ব্যবস্থা বাতিল করে সংবিধান সংশোধন করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ক্ষমতায় থাকা সরকারের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ওই সরকারই বিজয়ী রাজনৈতিক দল বা জোটের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।
কিন্তু নির্বাচন ছাড়াই হুট করে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটায় বর্তমানে দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেটি বিবেচনায় অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠনের দাবি উঠেছে। তবে এ ব্যাপারে সংবিধানে কিছুই বলা না থাকায় অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে ঘিরে আইনি একধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, বিশেষ সময়ে দেশ ও জনগণের স্বার্থে অনেক সময় অনেক কিছু করতে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে এ রকম একটি বিধান করা যেতেই পারে। তবে এ ব্যাপারে অবশ্যই ভবিষ্যতে এর সাংবিধানিক বৈধতা দিতে হবে। তিনি ১৯৯১ সালে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদকে অস্থায়ী সরকারের রাষ্ট্রপতি করার প্রসঙ্গটি টানেন।
উল্লেখ্য, গণ-অভ্যুত্থানে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর জেনারেল এরশাদ সরকারের পতনের পর পঞ্চম সংসদের নির্বাচন পরিচালনার জন্য তিন মাসের অন্তর্র্বতীকালীন বা অস্থায়ী একটি সরকার গঠন করা হয়েছিল। সে সময় আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিসহ সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়েছিল। সে জন্য বিচারপতি আহমদকে প্রথমে উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং এরপর তিনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। এই বিষয়টি বৈধতা দেওয়া হয়েছিল সংবিধানের একাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। ১৯৯১ সালে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত পঞ্চম সংসদে এই সংশোধনী পাস করা হয়।
Leave a Reply