October 30, 2024, 8:01 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
কুষ্টিয়াতে ‘ধানী গোল্ড’ হাইব্রিড জাতের ধানের বীজ কিনে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ করা হয়েছে যে, আন মৌসুমের এ বীজের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ থেকে কোনরকম চারাই গজায়নি। বায়ার কোম্পানী নামের এক বীজ উৎপাদনও বিপনন প্রতিষ্ঠান এ বীজ ডিলারদের মাধ্যমে জেলার ৬টি উপজেলাতেই বিক্রয় করেছে জানা গেছে।
তবে সরকারের কৃষি অধিদপ্তর এখন বিষয়টি অবগত নয় বলে জানিয়েছে।
গঙ্গাকপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের আওতায় থাকা কুষ্টিয়া জেলা ধান ও চাল উৎপাদনে দেশে অন্যতম। চলতি আমন মৌসুমে জেলাতে প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার হেক্টর জমি ধান চাষের আওতায় রয়েছে। তাই জেলাতে ধানের বীজের বিপুল চাহিদা রয়েছে। এ জেলাতে প্রায় ১৬টি প্রজাতির ধানের বীজ দুটি রোপণ মৌসুমে ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে।
বিভিন্ন উপজেলার কৃষকদের কাছ থেকে জানা গেছে, বায়ার কোম্পানীর ধানের বীজের ধরণ ছিল তিনটি। এগুলো হলো হাইব্রিড আ্যারাইজড এজেড ৬৪৫৩ এসটি, আইএনইচ ১৬০১৯ এবং ৭০০৯ আ্যরাইজড ধানী গোল্ড।
কুষ্ট্য়িাতে ৭০০৯ আ্যরাইজড ধানী গোল্ড ব্রান্ডটি প্রচুর বিক্রয় হয়। কুষ্টিয়া কলেজ মোড় জেলার বীজ বিক্রয়ের প্রধান কেন্দ্র। সেখানে খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে, বায়ারের ‘ধানী গোল্ড’ ধানের বীজ প্রতি কেজি দাম ছিল ৪৩৫ টাকা। জেলার ৬টি উপজেলাতেই এই বীজ প্রচুর বিক্রয় হয়।
ইতেমাধ্যে, যেসকর কৃষক এই বীজ বপন করেছিল তারাই ঠকেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন। তারা বলছেন, বীজের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ চারা গজায়নি।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বাঁধবাজার এলাকার বীজ ব্যবসায়ী রুহুল কুদ্দুস সালেহ জানান, কোমপানীর এজেন্টেদের মাধ্যমেই তিনি বীজ তার দোকানে তুলেছিলেন। কিন্তু প্রায় অর্ধেক ধান থেকে চারা উঠেনি। অনেক কৃষক তার কাছে এসে অভিযোগ করেছেন বলে তিনি জানান।
সালেহ বলেন, তিনি কিজে সাঁওতা মাঠে গিয়ে বিষয়টি দেখেছেন। সত্যতা পেয়েছেন।
একই এলাকার কৃষক আসকারী জানান, এ জাতের বীজে ১৫ দিনের মধ্যে জাগ থেকে তুলে ভ‚মিতে বপণ করার নিয়ম রয়েছে। তিনি তাই-ই করেছেন। কিন্তু জমিতে বপণের পর প্রায় আরও ১০ দিন অতিবাহিত হবার পরও তিনি দেখতে পাচ্ছেন প্রায় অর্ধেকটা বীজ থেকে চারা উঠেনি। এই কৃষকের ধারনা, ধান বীজ নষ্ট ছিল।
মিরপুর উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তা মতিউর রহমান লাল্টু জানান, তিনি ২০ কেজি ‘ধানী গোল্ড’ বীজ কিনেছিলেন। তার বপণকৃত বীজের প্রায় ৩০ শতাংশ বীজ থেকে চারা হয়নি। তিনি আরও বলেন, যে ধানের চারাগুলো গজিয়েছে সেগুলোও খুব দুর্বল দেখতে হয়েছে। প্রায় ১০ বিঘার জমির খামারের মালিক এই কৃষক জানান তিনি বিপদে পড়ে গেছেন। কারন ধান চারা রোপনের সময় দ্রত বয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, যদি তাকে এখন নতুন করে ধানচারা ক্রয় করে মৌসুম ঠেকাতে হয় তাহরে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
বীজ ব্যবসায়ী রুহুল কুদ্দুস সালেহ জানান, তিনি ইতোমধ্যে এ ধানের বীজ বিক্রয় বন্ধ করে দিয়েছেন।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি অফিসার সৌতম কুমার শীল এ বিষয়ে তিনি শুনেছেন বলে জানান। আগামী রবিবার তিনি সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান।
কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। কারন এখনও কোনো কৃষক অভিযোগ দেয়নি। তিনি বলেন, তিনি সব উপজেলা কৃষি অফিসারকে বিষয়টি জানাবেন।
জেলা বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা কামরুজ্জামান মনির জানান, বিষয়টি তিনি জেনেছেন। রবিবার ওই বীজ সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে, বিষয়টি তিনি শুনেছেন বলে জানান বায়ার কোম্পানীর এরিয়া ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন। বিষয়টি তিনি উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছেন এবং বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ দিরে, ক্রয়ের সমপরিমাণ বীজ আবারও দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
Leave a Reply