December 21, 2024, 11:25 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
আজ পহেলা বৈশাখ। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হবে নতুন বাংলা বর্ষ ১৪৩১। আজ বাঙালীর নববর্ষ।
বাংলার চিরায়ত উৎসব চৈত্র সংক্রান্তি ছিলো শনিবার। চৈত্র মাসের শেষ দিন চৈত্র সংক্রান্তি। আবার বাংলা বর্ষের শেষ দিনও। আজ রবিবার পহেলা বৈশাখ-নতুন বাংলা বর্ষ। জীর্ণ পুরাতন সবকিছু ভেসে যাক, ‘মুছে যাক’ এভাবে বিদায়ী সূর্যের কাছে এ আহ্বান জানায় বাঙালি।
পয়লা বৈশাখ আমাদের সকল সঙ্কীর্ণতা, কুপম-ুকতা পরিহার করে উদারনৈতিক জীবন-ব্যবস্থা গড়তে উদ্বুদ্ধ করে। আমাদের মনের ভিতরের সকল ক্লেদ, জীর্ণতা দূর করে আমাদের নতুন উদ্যোমে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেয়। আমরা যে বাঙালি, বিশ্বের বুকে এক গর্বিত জাতি, পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণে আমাদের মধ্যে এই স্বাজাত্যবোধ এবং বাঙালিয়ানা নতুন করে প্রাণ পায়, উজ্জীবিত হয়। অন্য দিকে পহেলা বৈশাখ বাঙালির একটি সার্বজনীন লোকউৎসব।ভোরের প্রথম আলো রাঙিয়ে দেবে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। রাজধানী এবং সারাদেশ জুড়ে থাকবে বর্ষবরণের নানা আয়োজন। ‘বাংলা নববর্ষ ১৪৩১’ জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদ্যাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। দিনটি সরকারি ছুটির দিন।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীসহ বাঙালিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছে।
বাঙালীর হাজার বছরের অস্তিত্বের সাথে এ বৈশাখ মিশে থাকলেও সন গণনাটা ছিল অনেক আধুনিক। যার পিছনে ইতিহাস রয়েছে। বাংলা সন গণনার শুরু মোঘল স¤্রাট আকবরের সময়ে। হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌর সনের ওপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত হয় নতুন এই বাংলা সন।
মুঘল আমলে জমির খাজনা আদায় হতো হিজরি সন অনুযায়ী। হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল, কৃষির সাথে যার দূর সম্পর্ক। তাই ফসল উৎপাদনের সাথে খাজনা আদায়ের সময়ের মিল না থাকায় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এই বিড়ম্বনা দূর করতে সম্রাট আকবর বর্ষপঞ্জি সংষ্কারের আদেশ জারি করেন। সম্রাটের আদেশ অনুসারে বিখ্যাত পন্ডিত ও জ্যোতিশসাস্ত্রবিদ ফতেউল্লাউ সিরাজী চন্দ্র ও সৌর বর্ষপঞ্জির সমন্বয়ে নতুন একটি সন তৈরি করেন এবং যার নাম দেন, তারিক-ই-ইলাহী। এই ফসলী সন প্রবর্তন হয় ১০ মার্চ ১৫৫৬ সালে, কিন্তু তা কার্যকর দেখানো হয় সম্রাটের তক্তে আরোহনের দিন ১৬ মার্চ ১৫৮৫ থেকে। নতুন এই সন পরবর্তীতে ব্ঙ্গাব্দ বা বাংলা সন হিসেবে পরিচিত লাভ করে। অর্থাৎ প্রকৃত হিসেবে বাংলা সনের বয়স ৪৩৮ বছর আর কার্যকরের সময় ধরলে ৪৬৭ বছর।
অন্যদিকে বাংলা একাডেমির বাংলা অভিধান বলছে, আবহমান মানে চিরপ্রচলিত বা নিরবিচ্ছিন্ন। হিজরি সনের কৃষির সাথে কোন সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু বছর ৯৬৩ পর্যন্ত সাল এগোলো সেটা বাংলার মাটিতেই। তিন হাজর বছর ধরেই বাংলা ভূমিতে কৃষিকর্ম চলে আসছিল। সেখান থেকে ১ সাল শুরু করার বহু চিন্তা করা হয়ছিল। কিন্তু সেসময়ে সেটা করলে বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে সমস্যা হতো। ওই আমলে বিশ্ব জিডিপির প্রায় ৮% যেত সুবাহ বাংলা থেকে।
১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে। পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে। দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। যা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।
বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে নববর্ষ উদযাপন পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের সার্বজনীন উৎসবে।
Leave a Reply