December 23, 2024, 1:33 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/আল জাজিরা
আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগে দক্ষিণ আফ্রিকার করা মামলার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে বাংলাদেশ।
এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ‘গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের যে বিষয়টি উন্মোচিত হয়েছে তা অবসানের লক্ষ্যে সাময়িক ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধসহ দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া খুবই প্রয়োজন।’
সম্প্রতি ইসরায়েলের পক্ষে জার্মানির সমর্থন দেওয়ার বিষয়টিতে নামিবিয়ার তীব্র সমালোচনার মুখে বেশকিছু দেশ জানায় যে, তারা জাতীসংঘের শীর্ষ আদালতের এই মামলায় হস্তক্ষেপ করবে। গাজাবাসীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে অবস্থান নেওয়া এসব দেশের পাশে নতুন করে যুক্ত হলো বাংলাদেশের নাম।
এদিকে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে পাঁচজন ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পর প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) ওয়াসেল আবু ইউসেফ বলেছেন, গাজা উপত্যকার যুদ্ধের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পশ্চিম তীরেও বিস্তৃতি ঘটেছে সহিংসতার।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ?
হামাস পরিচালিত ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে, ইসরায়েল তাদের ২৩ হাজার নাগরিককে হত্যা করেছে, যার মধ্যে ১০ হাজার শিশু।
এই ঘটনাকে দক্ষিণ আফ্রিকা গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করেছে, কারণ তাদের ভাষ্য, ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, কোনো গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা করা বা শারীরিক-মানসিক ক্ষতিসাধন, আংশিক বা সম্পূর্ণ ধ্বংসযজ্ঞ চালানো, নতুন মানবশিশুর জন্মে বাধাদান ও উদ্বাস্তুতে পরিণত করার মতো ব্যাপারগুলোকে গণহত্যা চালানোর উপায় বলে মনে করা হয়।
গাজায় এসব ব্যাপারই ঘটিয়ে চলেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাই তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ এনেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
দক্ষিণ আফ্রিকার চাওয়া/
আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকে অনুরোধ জানিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, যেন যত দ্রুত সম্ভব ‘প্রোভিশনাল মেজারস’ ব্যবহার করে আদালত ইসরায়েলকে থামায়। মূলত ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে এই জরুরি আদেশ দিয়ে আগেভাগেই ধ্বংসলীলা থামিয়ে দেওয়া যায়৷ এক্ষেত্রে ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তার জন্য জেনোসাইড কনভেনশনের লঙ্ঘনকারী ইসরায়েল যেন দায়মুক্তি না পায়, সেটিও দক্ষিণ আফ্রিকার চাওয়া।
গাজায় গণহত্যা হচ্ছে না: যুক্তরাষ্ট্র/
দক্ষিণ আফ্রিকার অভিযোগ প্রত্যাখান করেছে ইসরায়েল। নেতানিয়াহু বলছেন, ‘না, দক্ষিণ আফ্রিকা, গণহত্যার জন্য আমরা দায়ী নই, দায়ী হামাস। তারা যদি পারত আমাদের (ইসরায়েল) সবাইকে হত্যা করত। বরং, আইডিএফ (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) যথাসম্ভব নৈতিকতার সঙ্গে কাজ করছে।’
প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারযোগও এই মামলাকে ‘অবান্তর’ ও এই অভিযোগকে ‘ব্লাড লাইবেল’ এর তুল্য মনে করছেন।
গাজায় ২৩ হাজার মানুষের মৃত্যুকে ইসরায়েল ‘আত্মরক্ষার্থে’ করতে হয়েছে বলে জানিয়েছে। গত মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনকে হারযোগ বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবতাবাদী আইন অনুযায়ীই নিজেদের রক্ষা করার অধিকার থেকেই আমাদের এই পদক্ষেপ।’
কেন এই মামলা করল দক্ষিণ আফ্রিকা?/
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিসংঘ গঠিত হলে নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) বা আন্তর্জাতিক আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে দ্বন্দ্বের নিষ্পত্তি ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে আইনি পরামর্শ দেওয়ার কাজ করে এই আদালত।
আফ্রিকার জাতীয় কংগ্রেসের ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংহতি জ্ঞাপনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকায় চলা দীর্ঘ সংগ্রামের সমান্তরালে চলেছে ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের প্রতি তাদের সংহতি জ্ঞাপন। ৭ অক্টোবরের আক্রমণের সমালোচনা করেছিল দেশটি, দাবি জানিয়েছিল জিম্মিদের মুক্তির।
‘গাজার জনগণের ওপর চালানো হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে আমরা, তাই আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়েছি,’ বলছেন রাষ্ট্রপতি সেরিল রামাফোসা। ‘একসময় বৈষম্য, বর্ণবাদ, জাতিভেদ ও রাষ্ট্রের মদদে ঘটা সহিংসতার তিক্তস্বাদ নিতে হয়েছে আমাদের; কাজেই আমরা পরিষ্কার জানি, ইতিহাসের সঠিক পক্ষেই আমরা দাঁড়িয়েছি।’
বিচারকাজ কতদিন চলবে?/
প্রাথমিক পদক্ষেপগুলো কয়েক সপ্তাহমাত্র স্থায়ী হবে, কাজেই দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষেই হোক, বা বিপক্ষে; কয়েক সপ্তাহের ভেতরেই আদালত রায় দেবে বলে মনে করা যায়। তবে মূল মামলার ক্ষেত্রে আরো অনেক সময় লাগবে। আইসিজে-র বিচারিক কার্যক্রম এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া। রাষ্ট্রগুলোর পক্ষে আইনি প্রতিনিধিদের মৌখিক তর্কাতর্কির পর বিস্তারিত লিখিত প্রতিবেদন দিতে হবে। ফলে মামলায় আদেশ পেতে তিন-চার বছর সময় লাগতে পারে।
Leave a Reply