দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
বিশ^বিদালয় শিক্ষাজীবন থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হলো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত ৫ শিক্ষর্থীকে। আজ (সোমবার) বিকেলে অনুষ্ঠিত একটি বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। সিন্ডিকেট সভায় সভাপতিত্ব করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইসন চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম।
এ তথ্য নিশ্চিত করেন বিশ^বিদ্যালয়ের তথ্য, প্রকাশনা ও জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক ড. আমানুর আমান।
ঐ কর্মকর্তা জানান, এর আগে রবিবার অনুষ্ঠিত বিশ্ববিধ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটিতে ঐ ৫ ছাত্রীকে বহিস্কারের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। সিন্ডিকেট সভায় তা অনুমোদিত হয়েছে।
শারীরিক ও ডিজিটাল উপস্থিতির মাধ্যমে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সকল সদস্য বিষয়টিতে মহামান্য হাইকোর্টের নিদের্শনা যেভাবে এসেছে সেভাবেই প্রতিপালন করার বিষয়ে মত দেন।
গত ফেব্রুয়ারী মাসে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে এ ঘটনার মূল উদ্ঘাটনে বিভিন্ন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও বিশ^বিদ্যালয়ের গৃহীত পদক্ষেপসমুহ পর্যালোচনা করে হাইকোর্ট এক নির্দেশনায় পদক্ষেপসমুহ যথেষ্ট ও যথাযথ নয় বলে মন্তব্য করে পরবর্তী নির্দেশনা প্রদান করার প্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের স্থায়ীভাবে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বিশ^বিদ্যালয় কতৃপক্ষ।
ঐ কর্মকর্তা জানান মহামান্য আদালত সুনির্দ্দিষ্টভাবে বেশ কয়েকটি ধারা উল্লেখ করে দিয়ে সেই ধারানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করতে বলেছেন। উক্ত নির্দেশনা প্রতিপালিত হয়ে গেলে ঐ ৫ শিক্ষার্থী স্থায়ীভাবেই বিশ^বিদ্যালয় থেকে বহিস্কার হয়ে যাবেন।
আগামী, ২৩ আগস্ট এ বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আদালতে সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন প্রশাসক।
গত ১১ ও ১২ই ফেব্রæয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরতœ শেখ হাসিনা হলের গণরুমে শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে রাতভর নির্যাতন ও ভিডিও ধারণের অভিযোগ উঠে ঐ ৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী ওরফে অন্তরা, চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মি, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম ও একই বিভাগের মুয়াবিয়া জাহান।
তাদের মধ্যে সানজিদা চৌধুরী ওরফে অন্তরা বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও অন্যরা ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত।
এ ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ হলে দেশজুড়ে আলোচিত হয়ে উঠে। ইতোমধ্যে ফুলপরী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হলের প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন।
ঘটনা তুলে ধরে হাইকোর্টে রিচ করেন আইনজীবী গাজী মো. মহসিন। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট গ্রহন করে এ বিষয়ে ঐ আইনজীবীর কাছে লিখিত ব্যাখ্যা চান।
এ ঘটনায় রিট হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের পাশাপাশি কিছু নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। মোট তিনটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। যার দুটি করে বিশ^বিদ্যালয় কতৃপক্ষ ও একটি কমিটি গঠিত হয় হাইকোর্টের নিদের্শনা অরনুযায়ী।
তদন্ত প্রতিবেদন জমা হবার হাইকোর্ট ১ মার্চ নির্দেশনা দেন। সেই নির্দেশনা মেনে ৫ শিক্ষার্থীকে ১৫ জুলাই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটি ও মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির প্রেরিত প্রতিবেদনের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়েরর স্টুডেন্টস কোড অব কন্ডাক্ট-১৯৮৭ এর পার্ট-২ ধারা-৮ মোতাবেক ১২ মাসের জন্য তাদের ছাত্রত্ব বাতিল করে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি। এ শাস্তি চলাকালীন তারা ক্লাস-পরীক্ষাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
এর মধ্যে গত ১ মার্চ বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ঐ ৫ জনকে নিজেদের কর্মী উলে¬খ করে সংগঠন থেকে তাদের সাময়িক বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ।
বিষয়টি পূনরায় আদালতের দৃষ্টিতে আনেন রিটাকারী আইনজীবী গাজী মো: মহসিন। আইনজীবী আদালতকে জানান যে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি প্রাসঙ্গিক পদ্ধতি লঙ্ঘন করে ৫ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে। তিনি আদালতকে আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি নয়, বরং কোনো অপরাধের জন্য কোনো শিক্ষার্থীকে শাস্তি দিতে পারেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ফলে এই শাস্তির বৈধতা যদি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয় তবে তা বাতিল হয়ে যাবে।
এরপর হাইকোর্ট নির্যাতনের দায়ে ৫ শিক্ষার্থীকে কোন পদ্ধতিতে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে তা জানতে চান হাইকোর্ট।
এরপর ডিএজি বি এম আব্দুর রাফেল হাইকোর্টে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কমপ¬ায়ান্স রিপোর্ট জমা দিয়ে বলেন যে, ৫ শিক্ষার্থীকে 'ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি প্রাসঙ্গিক পদ্ধতি মেনেই সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়েছে।'
২৬ জুলাই হাইকোর্টে হলফনামার মাধ্যমে তার ব্যাখ্যা পেশ করবেন বলে তিনি জানান। তিনি হাইকোর্টে লিখিত বক্তব্য পেশ করার পর আদালত বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষকে নিদের্শনা দেন। সেখানে নির্যাতনের ধরন ও তার সম্ভাব্য শাস্তি উলে¬খ করে উচ্চ আদালত কয়েকটি ধারার স্পষ্ট উলে¬খ করে দেন। সেই ধারাগুলো অনুসরণ করেই তাদের আজীবন বহিস্তার করা হলো।
বর্তমানে ঐ পাঁচ শিক্ষার্থীর কেউই ক্যম্পাসে আসেন না।
বিশ্ববিধ্যালয়ের আইন সেল থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ২৩ আগস্ট হাইকোর্টে সিন্ডিকেটের এ সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করা হবে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বহিস্কৃতদের একজন জানান, তিনিও মহামান্য হাইকোর্টে যাবেন। সেখানে যাওয়ার তার অধিকার রয়েছে।
এদিকে, এ স্থায়ী বহিস্কারে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে ঘটনার শিকার ফুলপরী থাতুন। সিন্ডিকেটে যখন এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তিনি তখন ক্যম্পাসে ছিলেন। তিনি বলেন মহামান্য উচ্চ অঅদালতের নির্দেশের পর সর্বশেষ যে সিদ্ধান্ত এসেছে তাতে তিন খুশী। তিনি জানান, তিনি ও তার পরিবার এরকম একটি সিদ্ধান্তের অপেক্ষাতেই ছিলেন।
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি