দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগ এনে কুষ্টিয়ায় এক চিকিৎসককে লাঞ্ছিতের ঘটনায় প্রাইভেট হাসপাতাল গুলোতে সার্জারি ডাক্তারদের কর্মবিরতি চলছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চলা এ কর্মবিরতিতে চরম বিপাকে পড়েছে সার্জারী প্রত্যাশী রোগীরা।
সূত্র জানায়, এ ঘটনার ফলে কুষ্টিয়া জেলাজুড়ে ৩০টির বেশী প্রাইভেট হাসপতাল ও ক্লিনিকে প্রায় শ’য়ের কাছাকাছি সার্জারী আটকে গেছে। ফলে প্রাণহানীর শঙ্কায় ভুগছেন অসংখ্য রোগী।
ঘটনায় জানা গেছে, গত ১৯ জুন সোমবার কুষ্টিয়ার প্রাইভেট আদদ্বীন হাসপাতালে অপারেশন চলা কালে ফিরোজা খাতুন (৪৫) নামে এক নারীর মৃত্যুর অভিযোগ তুলে ডা: আব্দুর রহমানকে মারধর করে বসেন রোগীর স্বজনরা। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছ।
ঘটনার পরপরই আদদ্বীন হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার আব্দুল কাদের জনান, ভুল চিকিৎসা নয়, মূলত ফিরোজা খাতুন হার্ট অ্যাটাকে মারা যান।
রোগীর স্বজনরা থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা গ্রগন না করে ফিরিয়ে দেয়।
রোগীরা ফিরে গেলেও বেঁকে বসেন চিকিৎসকরা। তারা ঘটনার বিচার দাবি করেন, দাবি করেন করেন ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতারের। মঙ্গলবারের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরদির ঘোষণা দেন।
বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়ার অধিকাংশ প্রাইভেট হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায় সকাল থেকেই সার্জারি ডাক্তারদের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তারা অপারেশন করতে হাসপাতালে আসেন নি। সাজার্রী বন্ধ রয়েছে আদ্বদিন হাসপাতালে।
জেলার বৃহৎ প্রাইভেট হাসপাতাল সনো হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামসুল ওয়াসে জানান আগে থেকে অপারেশন এর নির্ধারিত সময় দেওয়া থাকলেও ডাক্তারদের অনুপস্থিতিতে অপারেশন করা সম্ভব হয়নি।
কুষ্টিয়ার আলো ক্লিনিকের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন দুইদিন হলো অপারেশনের ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছে না। অপারেশনের রোগী ছিল তাদেরকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে তারা।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে সকল ধরনের চিকিৎসা চলছে। অপারে,নও চলছে। অনেক রোগী সেখানে ভীঁড়ও করছেন। কিন্তু সেখানে সীমাবদ্ধতার কারনে সবাইকে চিকিৎসা দেয়া সম্ভ হচ্ছে না বলে জানান হাসপাতালের আর,এম,ও ডা: তাপস কুমার সরকার।
উল্কা খাতুন নামের এক রোগী জেলার খোকসা উপজেলা থেকে আদ্বদীন হাসপাতালে এসেছিলেন। তার পেটের আলসার অপারেশনের ডেট ছিল। কিন্তু ডাক্তার না আসায় তাকে বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে।
আরেকজন রোগী দবির (৫৫) টিউমার অপারেশনের জন্য ভর্তি থাকলেও ডাক্তার না থাকায় অপারেশন করাতে পারছেন না।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন এর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা: আমিনুল হক রতন বলেন ডাক্তার লাঞ্ছিতের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। ডাক্তাররা সব সময় রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করে থাকেন, আদদ্বীন হাসপাতালের ঘটনা ভুল বুঝতে পেরে রোগীর স্বজনেরা ডা: আব্দুর রহমানের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। তারপরও ডাক্তাররা তাদের নিরাপত্তা, প্রাইভেট হাসপাতাল গুলোর ভালো সরঞ্জাম না থাকায় এবং ভালো পরিবেশ না থাকায় অনেক হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন তারা চেষ্টা করছেন আজকের ভিতরেই বিষয়টা সমাধান করার।
কুষ্টিয়া ৫৪টি বেসরকারী সেচ্ছাসেবী সংস্থার প্লাটফরম সম্মিলিত সামাজিক জোটের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক ড.আমানুর আমান বলেন কুষ্টিয়াতে ডাক্তারকে লাঞ্চিতের ঘটনা অবশ্যই নিন্দনীয়, কোন রোগী বা তার স্বজনদের কাছ থেকে এই ধরনের আচরণ কোন ভাবেই কাম্য নয়। রোগীর স্বজনদের উচিত ছিল ঘটনার তদন্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করা।
অন্যদিকে ডাক্তারদের কর্ম বিরতিতে শত শত মানুষের ভোগান্তি এটাও ডাক্তারদের একেবারে অনুচিত বলে মনে করেন তিনি। ডাক্তারদের ধৈর্যের সীমা বৃহৎ হতে হয়, এজন্য এই কর্ম বিরতি থেকে ফিরে এসে ডাক্তারদের উচিত তাদের কর্মে ফেরা।
তিনি আরো বলেন শুক্রবার কুষ্টিয়ার বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে অপারেশন করতে ঢাকা রাজশাহী সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে কুষ্টিয়াতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা আসেন, এই কর্ম বিরতি প্রত্যাহার না হলে এটা যথেষ্ট ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে।
তিনি ডাক্তারদের নমনীয় হয়ে মানবিক দিক থেকে চিন্তা করে তাদের কর্ম বিরতি এখনই প্রত্যাহার করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি