December 22, 2024, 11:41 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
বাংলাদেশ আবার ফিরে আনলো মসলিন শাড়ি। কয়েকশ বছরের ঐতিহ্যের সাক্ষী এ শাড়ি আবার তৈরি হচ্ছে দেশে। সর্বশেষ উৎপাদনের সময় ধরে এটি ঘটতে যাচ্ছে গড়ে ১৭০ বছর পর। এ নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা প্রচুর দেখা দিয়েছে। তবে টাকায় ৮ মণ চাউলের যুগের ইতিহাস বাদ দিতে হবে। তখন একটি মসলিন শাড়ি কিনতে ৪শ থেকে ৮টাকা লাগলেও এখন লাগবে ৮ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত।
স্থানীয় অভিজাতদের চাহিদা পূরণ করে এক সময় তা বিদেশেও রফতানি হতো। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, কেবল ১৭৪৭ সালেই রফতানি করা হয়েছিল ২৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার ঢাকাই মসলিন।
বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড এমন কথা জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সরকারের উদ্যোগে মসলিনকে ফেরানোর চেষ্টা চালানো শুরু হয় ২০১৪ সাল থেকে। গবেষকরা নানাভাবে চেষ্ট করে দেখতে পান ফুটি কার্পাস তুলা দিয়ে এ শাড়ি তৈরি হতো। এই তুলা মূলত ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় উত্পন্ন তুলা থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সুতা তৈরি করে তা দিয়েই বোনা হতো মসলিন। মসলিনের কাঁচামাল ফুটি কার্পাস তুলা এক বিঘা জমিতে চাষ করে বছরে গড়ে ফলন পাওয়া যায় ৬০ কেজির মতো। আর বীজবিহীন এক কেজি তুলার মূল্য ১ হাজার টাকা। জমির ব্যবহার মূল্য, সার, সেচ, শ্রমিক, মাড়াইকরণ, জিনিং, ভূমি উন্নয়ন কর ইত্যাদি খরচ বাদে ফুটি কার্পাস তুলা চাষ করে বছরে বিঘাপ্রতি প্রায় ৩৩ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব। এদিকে দুজন তাঁতি দৈনিক নকশাহীন মসলিন কাপড় বুনন করতে পারেন চার ইঞ্চি, মধ্যম নকশার কাপড় দুই ইঞ্চি এবং ভারী নকশার মসলিন বুনন করতে পারেন দেড় ইঞ্চি। গবেষণায় উদ্ভাবিত ২১৫ গ্রাম ওজনের মধ্যম নকশার একটি মসলিন শাড়ি তৈরিতে সময় লেগেছে দীর্ঘ আট মাস। এতে উৎপাদন খরচ হয়েছে ৭ লাখ ৯২ হাজার। আর ২২৩ গ্রাম ওজনের ১৮ ফুট লম্বা মসলিনের উৎপাদন খরচ পড়েছে ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা। সময় লেগেছে প্রায় সাত মাস।
মসলিন কাপড়ের কারণেই বিশ্বব্যাপী বিশেষ পরিচিতি পায় ঢাকা। মোগল আমলে বাংলার রাজধানী স্থানান্তর করা হয় ঢাকায় এবং বাদশাহদের পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকাই মসলিনের স্বর্ণযুগের সৃষ্টি হয়। মোগল বাদশাহ, নওয়াব, সুবেদার, রাজা, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, ধনী ব্যবসায়ী ইত্যাদি শ্রেণীর লোকেরা ছিলেন মূল্যবান এ কাপড়ের বড় ক্রেতা।
ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকে ঢাকায় পা রাখা একাধিক পর্যটকের হাত ধরে মসলিনের খ্যাতি পৌঁছে যায় চীন থেকে রোম অবধি। সেখানকার সম্রাট আর রাজা-বাদশাদের উপঢৌকন হিসেবে সীমিত আকারে রফতানি হতে থাকে এ কাপড়। একইভাবে মসলিনের উন্নত ও অনুন্নত কিছু সংস্করণ সে সময় ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে স্থানীয় অধিবাসীদের কাছেও।
Leave a Reply