February 5, 2025, 3:54 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
গত বছর শহরে মোট দারিদ্রের ৫২ শতাংশই ছিল নতুন দরিদ্র। বিগত প্রায় দুই বছর ধরে চলা করোনা মহামারীকালে দেশের শহুরে এলাকাগুলোতে এই নতুন দরিদ্রের আবির্ভাব ঘটে। একই সাথে রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাব বাংলাদেশে ৩০ লাখ মানুষকে নতুন করে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
এক গবেষণায় এমন তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)।
প্রতিষ্ঠনাটি বলছে, গত বছর মোট দরিদ্রের প্রায় ৫০ শতাংশ নতুন দরিদ্র। যারা নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে দরিদ্রের কাতারে নেমে গেছে। বিআইডিএস ২ হাজার ৪৬টি খানার ওপর জরিপ করে গবেষণাটি করেছে। এতে উল্লেখ করা হয়, করোনার আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালে দরিদ্র মানুষের মধ্যে আত্মকর্মসংস্থানের হার ছিল ৩৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। করোনার পর অর্থাৎ গত বছর সেটি বেড়ে ৩৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ হয়েছে। অন্যদিকে অতিদরিদ্র মানুষের মধ্যে করোনার আগে আত্মকর্মসংস্থানের হার ছিল ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। করোনার পর সেটি বেড়ে ৩৩ দশমিক ২১ শতাংশে দাঁড়ায়।
এ ছাড়া ২০১৯ সালে দরিদ্র খানা বা পরিবারের মধ্যে ৩৯ দশমিক ২৯ শতাংশ এমএফএস ব্যবহার করত। করোনার পর অর্থাৎ ২০২২ সালে সেটি বেড়ে ৭৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ হয়েছে। যদিও তাদের ব্যাংক হিসাব খোলার পরিমাণ খুব একটা বাড়েনি। করোনার আগে ৩২ দশমিক ২২ শতাংশ পরিবারের ব্যাংক হিসাব ছিল। পরে সেটি বেড়ে হয়েছে ৩৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
গবেষণায় দেখ গেছে, সরকারি হিসাবে বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন প্রায় ১৭ কোটি। এর ৯ শতাংশ, অর্থাৎ দেড় কোটির বেশি মানুষ মহামারীর ধাক্কায় অধঃপতিত হয়েছে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, চরম দরিদ্র পরিবারের ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ জানিয়েছে, মহামারী চলার সময় তাদের সন্তানদের শিক্ষা বন্ধ করতে হয়েছে। শিক্ষা ও মানবিক পুঁজির বিকাশের ক্ষেত্রে শহরের দরিদ্র শ্রেণি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের শিক্ষায় ফেরাতে বিশেষ শিক্ষা পুনরুদ্ধার কর্মসূচি চালু করা প্রয়োজন।
করোনায় দেশে দারিদ্র্যের হার ৪২ শতাংশ হয়ে গিয়েছিল বলে সানেমের করা গবেষণার সমালোচনা করে বিনায়ক সেন বলেন, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ভুল করেছে তারা। আসল বিষয় হচ্ছে, সেই সময় বাড়লেও সেটা শুধু সাময়িক সময়ের জন্য। এটা ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত বেড়েছিল। জুনের পর থেকে এটা কমে আসা শুরু হয়েছিল। এরপর কভিডের ওমিক্রন, ডেল্টা (ধরনের বিস্তার) ইত্যাদি পার হয়ে ২০২২ সালের প্রথম দিক থেকেই দেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক প্রবণতায় ফিরে আসতে শুরু করে। ২০১৯ ও ২০২২-এর মধ্যে সামগ্রিক দারিদ্র্যের হার ৪ দশমিক ৩ শতাংশীয় পয়েন্ট কমেছে। একই সময়ে চরম দরিদ্র পরিবারের অনুপাতও ৩ দশমিক ২ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে গেছে।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চরম দরিদ্র পরিবারের ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ বলছে, তাদের করোনা মহামারী চলাকালে ছেলে বা মেয়ের পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়েছে। এ ছাড়া দরিদ্র পরিবারের জন্য ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ নিম্ন-মধ্যবিত্তের জন্য ১০ দশমিক ৩ শতাংশ এবং উচ্চমধ্যবিত্তের জন্য ৮ শতাংশের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। স্পষ্টতই, করোনার সময়ে শিক্ষামূলক মানবিক পুঁজির বিকাশের ক্ষেত্রে শহুরে দরিদ্রতম শ্রেণি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহুরে দরিদ্রদের শেখার ক্ষতি কমাতে এবং তাদের সন্তানদের শিক্ষাগত ধারায় পুনঃপ্রবেশের সুবিধার্থে একটি বিশেষ শিক্ষা পুনরুদ্ধার কর্মসূচি চালু করা দরকার।
ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ ৩০ লাখ মানুষকে নতুন করে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে : সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে ‘ইমপ্যাক্ট অব রাশিয়া ইউক্রেন ওয়্যার প্রাইস স্টোকস অন দ্য বাংলাদেশি ইকোনমি’ এ জেনারেল অ্যানালাইসিস। এ তথ্য তুলে ধরেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক তাহরিন তাহরিমা চৌধুরী ও গবেষক পউল এ প্রদ্দেশ। তাদের ওই গবেষণায় বলা হয়, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাব বাংলাদেশে ৩০ লাখ মানুষকে নতুন করে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এর প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে যেমন বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য, সার এবং অপরিশোধিত তেলের দাম। যার প্রভাব পড়েছে দেশে। এ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জাতীয় কল্যাণ ২ শতাংশ কম হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের কৃষি খাত। তুর্কিতে সার বিক্রি উৎপাদন বাড়িয়েছে। কিন্তু তার থেকে সঠিক পন্থা ছিল দারিদ্র্য কমানোর জন্য নগদ অর্থ প্রদান। ২০২২ সালের প্রথম দিকে পেট্রোলিয়ামের দাম বাড়তে থাকে। শুধু ২০২১ সালের জুলাই মাসে বাড়ানো হয়েছিল। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু হওয়ার কয়েক মাস পর ২০২২ সালে জুলাইয়ে এ হার আরও বৃদ্ধি পায়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২০ সালের মাঝামাঝিতে বিশ্ববাজারে ইউরিয়া এবং ডিএপি সারের বৈশ্বিক মূল্য বৃদ্ধির শর্তেও অভ্যন্তরীণ মূল্য স্থির ছিল। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুনে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি ইউরিয়ার দাম ২৭ দশমিক ৮ টাকা থেকে বেড়ে ৭৩ দশমিক ৭ টাকা হয়েছিল। দেশের অভ্যন্তরে মূল্য ছিল ১৬ টাকা। এটার মূল কারণ ছিল ভর্তুকি।
Leave a Reply