দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ থেকে পাবনার পাকশী চ্যানেল পর্যন্ত পদ্মা নদীর তলদেশ হতে বাল্কহেড বা ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে ওইসব এলাকার বালুমহালকে দেওয়া লিজ বাতিল করারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
জনস্বার্থে করা এ সংক্রান্ত এক রিটের শুনানি নিয়ে বুধবার (২৯ মার্চ) হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট হাবিব-উন নবী ও অ্যাডভোকেট মো. আশিকুর রহমান।
আইনজীবী হাবিব-উন নবী জানান, বিআইডব্লিউটিএর রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ টু পাকশী চ্যানেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ১৫টি সেগমেন্টে খননের বিপরীতে শতাধিক বাল্কহেড বা ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ফলে চ্যানেলটি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন হুমকির মুখে পড়েছে।
দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রিটটি করেন সুপ্রিম কোর্টের পাঁচজন আইনজীবী। ওই রিটের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন আদালত। রিটকারী আইনজীবীরা হলেন- ফরিদ হাসান মাহদী, মো. রাশেদুজ্জামান রানা, মো. ওয়াহিদুজ্জামান, মুরাদ মিয়া ও কাজী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।
উলেখ্য, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ থেকে কুষ্টিয়ার পাকশী ব্রিজ পর্যন্ত হাজার হাজার বাল্কহেড বা ড্রেজার বসিয়ে প্রতিািদন নদীর তলদেশ ছিদ্র করে বালি তুলে নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন মহল।
এই কুষ্টিয় তেই পদ্মা নদীর তলদেশ-পাড় কেটে বেআইনিভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু উত্তোলন ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে একটি প্রভাবশালী চক্র এ কাজ করছে বলে জানা গেছে। এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙনঝুঁকিতে পড়েছে নদী-তীরবর্তী দৌলতপুরের বৈরাগীরচর, ফিলিপনগর, ভুরকাপাড়া, হাটখোলাপাড়া ও ভেড়ামারার অন্তর্গত ফয়জুল্লাহপুর, হরিপুর গ্রাম ও রায়টা ঘাট। এভাবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হলেও এটি থামাতে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রশাসনিক তৎপরতা নেই বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তারা আরো বলেছেন, বালু উত্তোলন ও ড্রাম ট্রাকের বেপরোয়া চলাচলে অন্তত ছয়টি গ্রামে বসবাস করাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বৈরাগীরচর, ফিলিপনগর, রামকৃষ্ণপুর, মাজদিয়াড়, মহিষকুণ্ডি, আবেদের ঘাট, হাটখোলাপাড়া এবং ভেড়ামারার ফয়জুল্লাহপুর, হরিপুর ও রায়টা ঘাটের কোল ঘেঁষে প্রবাহিত প্রমত্তা পদ্মা। এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের সময় জানা যায়, পদ্মা-গড়াই নদী বিধৌত কুষ্টিয়া সদর উপজেলাসহ অন্যান্য পাঁচটি উপজেলার আওতাভুক্ত অন্তত ২১টি বালুমহাল ১৪২৯ বঙ্গাব্দের জন্য ইজারা দেয়নি জেলা প্রশাসন। কিন্তু তা সত্ত্বেও জেলা জুড়ে চলছে বেআইনিভাবে বালু উত্তোলন। কোনো ধরনের ইজারা ছাড়াই নদীর তলদেশ-পাড় নির্বিচারে কেটে বালু উত্তোলন করছে এ চক্র। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে চলে এই বালু উত্তোলন। চলতি বছর দৌলতপুরের বৈরাগীরচর মণ্ডলপাড়া গ্রাম-তীরবর্তী পদ্মায় এই চক্র মিনি ড্রেজার বসিয়ে পদ্মার তলদেশ কেটে নৌকা ভর্তি বালু নদী তীরে স্তূপ করছে।
এছাড়া নদীর পাড় কেটে পলি মাটি-বালু উত্তোলনও চলছে হরদম। এভাবে বালু তোলার কারণে প্রতি বছর ভাঙনে আবাদি জমিসহ বিলীন হচ্ছে বিস্তৃীর্ণ জনপদ। নদী ভাঙতে ভাঙতে ধেয়ে এসেছে প্রতিরক্ষা বাঁধের একেবারে কিনারে। নদী কেটে বালু উত্তোলন ও বালু ভর্তি ভারী ট্রাকের যাতায়াতে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে সিসি ব্লকে নির্মিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী প্রতিরক্ষা বাঁধও ভাঙন হুমকিতে পড়েছে।
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি