December 21, 2024, 11:48 pm
ইকরাম কবীর/
জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস পালন করছি, কিন্তু গ্রন্থাগারে কেউ পড়তে আসেন না এই বলে হাহাকার করছি, বই-পড়ুন বই-পড়ুন বলে গলা ফাটিয়ে ফেলছি, কিন্তু গ্রন্থাগারে কেমন করে জনমানুষকে আকর্ষিত করা যায় তা বোধহয় আমরা বুঝতে পারছি না।
গেল কয়েক’শ বছর ধরে যেভাবে আমরা পাঠাগার চালিয়েছি, তা এখন প্রযোজ্য নয়। নাহ, তবে সেই পাঠাগারগুলো অচল হয়ে যায়নি। প্রযুক্তি, প্রাচুর্য এবং ব্যস্ত জীবন যাপনের কারণে মানুষ এখন আর লাইব্রেরীতে আসতে চান না; বই বাড়িতে নিয়ে গিয়েও পড়তে চান না। বিশ্বের অনেক দেশ আছে যারা এই বাস্তবতা বুঝতে পেরেছে এবং পাঠাগারকে এমন একটি কেন্দ্রে রূপ দিয়েছে যেন মানুষ সেখানে আসতে উৎসাহী হয়। তারা বইয়ের সাথে আরও অনেক কিছু যুক্ত করেছে এবং করছে।
আসুন দেখি পাঠাগার নিয়ে কী কী করা যায়/
পাঠাগারের স্থাপত্য আমরা বদলে দিতে পারি। এটাকে একটা বহুমুখী কমিউনিটি সেন্টারে রূপ দিতে পারি যেখানে সভা হবে, দেখা-সাক্ষাৎ হবে, কেউ যদি একশ মানুষকে আমন্ত্রণ করে খাওয়াতে চান, তাও পারবেন।
একই সাথে, পাঠাগারে বইও থাকবে। বই থাকবে বইয়ের স্থানে। জনসাধারণ অন্যান্য কাজ করতে এসে বই দেখে উৎসাহিত হয়ে বইয়ের প্রতি আকর্ষিত হবেন।
পাঠাগারে ছবির গ্যালারী থাকতে পারে। আমাদের দেশে প্রায় অনেক জেলায়ই পাবলিক লাইব্রেরী আছে। সেখানে সেই জেলার চিত্রকরদের শিল্পকর্ম প্রদর্শনের জন্যে গ্যালারী স্থাপন করা যেতে পারে। কেউ যদি চারুকলার ক্লাস নিতে চান, তারও ব্যবস্থা হবে। যে কোন শিক্ষক একটা ঘর ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের শেখাবেন।
একটা মঞ্চ থাকতে পারে। সেই মঞ্চে জেলার নাট্যকর্মীরা নাটক পরিবেশন করবেন। শুধু তাই নয়, ঘর ভাড়া নিয়ে নাট্যকর্মীরা তাদের নাটকের অনুশীলনও করতে পারবেন। একই সাথে লাইব্রেরীতে সিনেমা দেখানোর ব্যবস্থা কর যায়। সিনেপ্লেএক্সের মত। বইয়ের পাশাপাশি পাঠাগার থেকে পেশাজীবীরা সিনেমা তৈরির যন্ত্রপাতি ধার নেয়ার ব্যবস্থাও থাকতে পারে।
পাঠাগারের ভেতরে একটা অঞ্চল থাকবে যেখানে ফ্রীল্যান্সাররা এসে কাজ করার সুযোগ পাবেন এবং ছাত্রছাত্রী ও ব্যবসায়ীরা গবেষণা করতে পারবেন।
এতকিছু থাকলে শিশুদের জন্যে ব্যবস্থা থাকবে না কেন? ওদের খেলার সুবিধা থাকবে। ওরা খেলাধুলা করে আনন্দ পেলে, ওদের বাবা-মায়েরাও আসবেন এই সেন্টারে। এতজন মানুষ থাকলে নিশ্চয়ই খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। পাঠাগার কমপ্লেক্সের কর্তৃপক্ষ একটা ফুড-কোর্ট বানাবেন যেখানে সব বয়সের মানুষের খাবারের আয়োজন থাকবে। আকর্ষণ না থাকলে মানুষ আসবে না।
পাঠাগারের একাংশে একটা সুস্থতা-কেন্দ্রও তৈরি করা সম্ভব। যাকে আমরা ব্যায়ামাগার বলি। পারলে একটা যোগ ব্যায়ামের স্থানও থাকতে পারে যেন মনোদৈহিক সুস্থতাও নিশ্চিত করা যায়। আর সবুজে ঘেরা স্থান-তো থাকবেই।
অনেক দেশেই পাঠাগারকে এমন বহুমুখী কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা হয়েছে। আমরা আমাদের চাহিদা অনুযায়ী তা করতে পারি।
আবারও বলি – আকর্ষণ না থাকলে মানুষ আসবে না।
ইকরাম কবীর – গল্পকার এবং যোগাযোগ পেশাজীবী।
Leave a Reply