দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
চুয়াডাঙ্গা জেলা খাদ্য গুদামে ট্রাক থেকে গমের বস্তা নামানোর সময় গমের পরিবর্তে কিছু বস্তায় বালু ও পাথর ভর্তি পাওয়া গেছে। ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করেছে খাদ্যগুদাম কতৃপক্ষ।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনার সরকার এন্টারপ্রাইজ, জোনাকি এন্টারপ্রাইজ ও সানরাইজ এন্টারপ্রাইজের পরিবহন ঠিকাদারের মাধ্যমে চুক্তি অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গা খাদ্যগুদামে মোট ৩০০ টন গম পাঠানোর কথা ছিল। গত শুক্রবার গমের প্রথম চালানে ১০০ মেট্রিক টন আসে। রোববার ভোরে দ্বিতীয় চালানের ১০০ মেট্রিক টন গম চুয়াডাঙ্গা খাদ্য গুদামে আসে। গমের বস্তা নামানোর সময় একটি ট্রাকে বালুভর্তি ৭টি বস্তা পাওয়া যায়। পরে একে একে সন্ধান মেলে বালুবোঝাই ২৮টি বস্তার।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চুয়াডাঙ্গা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, সরকারি বিভিন্ন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৩০০ টন গম চুয়াডাঙ্গায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই চালানে ১০০ টন গম নিয়ে খুলনা থেকে ভোর রাতে ৬টি ট্রাক এসে পৌঁছায় চুয়াডাঙ্গা খাদ্য গুদামে।
দুপুরে ট্রাক থেকে গমের বস্তা নামানোর সময় প্রথমে একটি ট্রাকে পাওয়া যায় ৬টি বালুর বস্তা। বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় প্রতিটি ট্রাক তল্লাশি করে খুঁজে বের করা হয় ২৮টি বালুর বস্তা। পাওয়া যায় ৪টি বড় পাথরের টুকরো।
তিনি জানান, ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাক থেকে গম চুরি করে ওজন ঠিক রাখতে বালু আর পাথর দিয়ে তা সমন্বয় করার চেষ্টা করা হয়েছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক একেএম শহীদুল ইসলাম জানান, খুলনার ৪ নম্বর ঘাট থেকে ট্রাকগুলোতে গম লোড হয়েছিল। সেখান থেকে বালুর বস্তা ট্রাকে তোলার কোনো সুযোগ নেই। রাস্তার মধ্যে এমন কোনো কারসাজি হতে পারে।
ঘটনাটি তদন্তে আলমডাঙ্গা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আব্দুল হামিদকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কর্ম দিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম এবং জেলা কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক সানজিদা বানু। যদি তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত হয় তাহলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে, বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ওই ৬ ট্রাকের চালক ও সহকারী। তাদের দাবি, রাস্তার মধ্যে কোথাও মালামাল নামানো-ওঠানোর ঘটনা ঘটেনি। খুলনা থেকে ট্রাক নিয়ে সরাসরি চুয়াডাঙ্গায় এসেছেন তারা।
ট্রাক চালক রাব্বী হোসেন ও সহকারী মেহেদী হাসান জানান, খুলনায় চালান অনুযায়ী গমের বস্তা ট্রাকে তোলা হয়। এরপর ট্রাক সরাসরি চুয়াডাঙ্গায় নিয়ে এসেছি। ইট-পাথর বা বালু কীভাবে ট্রাকে উঠেছে তা তারা জানে না।
এ বিষয়ে সরকার এন্টারপ্রইজের স্বত্তাধিকার কারো সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। কথা বলেছেন খুলনা বিভাগীয় খাদ্য ঠিকাদার পরিবহন সমিতির সভাপতি মাকসুদ আলম খাজা। তিনি জানান, তিনিই এই বিদেশ থেকে আসা এই গম পরিবহন করে চুয়াডাঙ্গা সরকারী খাদ্যগুদামে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি জানান সরকারী খাদ্য পরিবহনের নিদ্দিষ্ট নিয়ম মেনেই এই গম গন্তব্যে পাঠানো হয়েছিল। তার ভাষায় প্রতিটি বস্তা প্যাক ও সিল করে ট্রাকে তোলা হয়। মোট চারটি স্তরে সেগুলো মেপে ট্রাক ছাড়া হয়। গন্তব্যস্থলে পৌঁছনোর আগে কোন বস্তাতেই সামান্য ক্ষতিসাধন হবার সুযোগ নেই। যদি কোনক্ষেত্রে কোন বস্তায় এটি ঘটে তাহলে ঐ বস্তার পণ্যেও তিনগুণ পরিবহন ঠিকাদারদের বহন করতে হয়।
তিনি বলেন বিষয়টি ধরা পড়েছে চুয়াডাঙ্গা খাদ্যগুদামে ওজন মাপবার সময়। এর দায়িত্ব ঐ ট্রাকের ড্রাইভার ও হেলপারদের বলে তিনি মনে করেন। তিনি ব্েযলন ড্রাইভার ও হেলপার গম চুরি কওে বিক্রি কওে ওজন ঠিক রাখবার জন্য সেখানে বালি ও পাথর টুকরো ভরেছিল। তার দাবি তদন্ত করলেই বিষয়টি পরিস্কার হবে।
খুলনা বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) শহিদুল ইসলাম জানান ঘটনা তদন্তে জেলা পর্যায়ে নিদের্শ দেয়া হয়েছে সেখানে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি জানান ঢাকাতে খাদ্য অধিদফতরে আরও একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক একেএম শহীদুল ইসলাম বলেন যে ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপারকে পুলিশ হেফাজতে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন মামলা করা হবে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি মাহবুব হোসেন জানান এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত খাদ্যগুদামে সবকিছু যাচাই-বাছাই করা চলছিল। মামলা দায়ের করা হয়নি।
===========================
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি