দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
শেষ নিঃশ্বাস ফেলে চির বিদায় নিযেছেন ফুটবল কিংবদন্তি পেলে। বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাতে সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ সহ বেশ কিছু রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২৯ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হন পেলে। তিনবার বিশ্বকাপ জয়ী পেলে হার্ট ও কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। এ ছাড়া গত বছর সেপ্টেম্বরে তার কোলন থেকে টিউমার সরানো হয়।
যখনই ফুটবলের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পর্কে কথা উঠবে তখনই গ্রট পেলের নাম চলে আসতে বাধ্য। ব্রাজিলের এই আইকনিক সুপারস্টার একজন সত্যিকারে মাস্টার এবং সুন্দর খেলার স্রষ্টা। ২১ বছরের ফুটবল ক্যারিয়ারে সৃজনশীল শৈল্পিকতা দিয়ে হয়েছেন কিংবদন্তি।
ক্লাব ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে ট্রফির দীর্ঘ তালিকা ফুটবল বিশ্বে তার অসাধারণ উচ্চতাকে প্রতিফলিত করে আর প্রমাণ করে একজন ফুটবলার হিসেবে তিনি কতটা বিশেষ।
পেলে ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সান্তোসের জার্সিতে। ১৯৫৬ থেকে ১৯৭৪ সালে ৬৬০ ম্যাচে করেছেন ৬৪৩ গোল।
এই আইকন সান্তোসের জার্সিতে ৬টি ব্রাজিলিয়ান সিরি আ'র শিরোপা জিতেছেন। ১০ বার ক্যাম্পিওনাতো পাওলিস্তা (সাও পাওলো অঞ্চলের দলগুলির দ্বারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা একটি প্রতিযোগিতা) জিতেছেন, দুবার কোপা লিবার্তোদোরস ট্রফি এবং দুটি ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ জিতেছেন। ১৯৭৫ সালে পেলে নিউ ইয়র্ক কসমস-এ চলে যান। সেখানে তিনি উত্তর আমেরিকান সকার লিগে তিন মৌসুম কাটিয়েছেন। জিতেছেন আটলান্টিক কনফারেন্স চ্যাম্পিয়নশিপ এবং সকার বল।
আন্তর্জাতিক অর্জনগুলো পেলেকে সর্বশ্রেষ্ঠ-এর কাতারে নিয়ে গেছে। বিশ্বকাপ আর পেলে যেন সমার্থক। কিংবদন্তি স্ট্রাইকার, তিনবার বিশ্বকাপ জিতেছেন। এই কীর্তি নেই আর কারও। সর্বমোট পেলে চারটি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন তিনি। বিশ্বকাপে ১২টি গোল এবং ১০টি অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি। তবে কোপা আমেরিকার শিরোপা জিততে না পারা ছিলো তার ক্যারিয়ারের আক্ষেপ।
অবিশ্বাস্যভাবে এবং অন্যায়ভাবে, পেলে কখনোই ব্যালন ডি'অর জিতেনি। আর মূল কারণ ছিল এটি সম্পূর্ণরূপে ভৌগলিক দ্বারা নির্ধারিত হতো। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত একচেটিয়াভাবে ইউরোপীয় খেলোয়াড়দের দেওয়া হয়েছিল। ১৯৯৫ সালে ব্যালন ডি'অরের ৬০তম বার্ষিকীতে ফ্রান্স ফুটবল আগের প্রদান করা পুরষ্কারগুলোর পুনঃমূল্যায়ন প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায় ৩৯টি ব্যালন ডি'অরের মধ্যে ১২টি দক্ষিণ আমেরিকান খেলোয়াড়দের প্রাপ্ত ছিলো। এর মধ্যে অন্তত ৭টি পেত পেলে।
পেলের প্রস্থানে রোনালদো-মেসি-নেইমারের শোক/
পৃথিবী ছাড়ার সময় বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা কী পেয়েছিলেন ফুটবল সম্রাট পেলে। হয়তো পেয়েছিলেন, না হলে কাতার বিশ্বকাপ চলাকালে চাউর উঠে মারা গেছেন পেলে। কিন্তু ঈশ্বর চেয়েছিলেন ভিন্ন কিছু। ফুটবলের রাজার বিদায় হোক, ফুটবলের বিশ্ব আসরের পরেই। হলেও তাই। শেষ হলো বিশ্বকাপ। এর কিছু দিন পরই ৮২ বছর বয়সে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পেলের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন তার মেয়ে কেলি নাসিমেন্তো। পরে ফুটবল সম্রাটের অফিশিয়াল অ্যাকাউন্ট থেকেও জানানো হয় খবরটি।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো লিখেন, তিনি গতকাল, আজ এবং চিরকালের জন্য একটি রেফারেন্স। অনেক দূরে থাকার পরও, আপনি সবসময় আমাকে যে ভালবাসা দেখিয়েছেন তার ভাগ আমি প্রত মুহূর্তে পেয়েছি।'
এ সময় রোনালদো আরও যোগ করেন, তাকে কখনই ভোলা যাবে না এবং তার স্মৃতি চিরকাল বেঁচে থাকবে আমাদের প্রত্যেক ফুটবলপ্রেমীর মধ্যে। রাজা পেলে শান্তিতে থাকুন।
ইনস্টাগ্রামে আর্জেন্টিনার অধিনায়ক লিওনেল মেসি লিখে, পেলে, আপনি শান্তিতে বিশ্রাম নিন। তার মতো ১০ নম্বর কখনো ছিল না।
১৯৯৮ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ফিফার প্রেসিডেন্ট ছিলেন সেপ ব্লাটার পেলের মৃত্যুর খবর তিনি লেখেন, খুবই দুঃখজনক খবর, পেলে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন৷ বিশ্ব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলার এবং একজন বিস্ময়কর ব্যক্তিত্বকে শোক করে। তিনি খেলাটি অন্য কারও মতো উদযাপন করেছিলেন।
ব্রাজিলের নেইমারও শোক জানান। ব্রাজিলের সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রীড়া আইকনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পিএসজি তারকা লেখেন, পেলের আগে, ১০ নম্বর ছিল শুধু একটা সংখ্যা..৷ সেই সুন্দর বাক্যটি অসম্পূর্ণ। আমি বলব যে পেলের আগে ফুটবল ছিল শুধুই একটি খেলা। তিনি ফুটবলকে একটি শিল্পে, বিনোদনে রূপান্তরিত করেছিলেন... ফুটবল এবং ব্রাজিল রাজার জন্য মর্যাদা পেয়েছে। তিনি চলে গেছেন, কিন্তু তার জাদু থাকবেই। পেলে চিরন্তন!'
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি