December 22, 2024, 8:50 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
আর্জেন্টিনা আবারও বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ; ৩৬ বছর পর। প্রচুর উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ শেষে তারা পেল সেই অধরা ট্রফিটি। এরজন্য কম বেগ পেতে হয়নি। এটা একেবারে খেলার শুরু থেকেই। অঘটন অনেক ছিল দলটির। যেমন প্রথম খেলাতেই সৌদির মতো একটি অ্যামেচার দলের কাছে হার। গতকালের খেলাতেও যথেষ্ট বাজে অবস্থা তৈরি হয় এক পর্যায়ে। বিজয়ের উপর সরাসরি ধাক্কা এসে লাগে। প্রথমার্ধের ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকেও এমবাপের দুই মিনিটের ম্যাজিকে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ২-২ এ সমতায় থেকে নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ করে ফ্রান্স৷ অতিরিক্ত সময়েও চলে নাটক। এবার মেসির গোলে আর্জেন্টিনা এগিয়ে গেলেও এমবাপে গোল করলে ৩-৩ সমতায় থেকে টাইব্রেকারে যায় ম্যাচ। সেখানেই জয় লাভ করে ফ্রান্স।
শুরুটা আর্জেন্টিনা করেছিল দুর্দান্ত। ম্যাচের ৪ মিনিটে ডি পল এবং আলভারেজের দারুণ বোঝাপড়ায় ডি পলের বাড়ানো বলে আলভারেজ শট নিলেও রেফারি অফসাইডের সিদ্ধান্ত দেন। ৬ মিনিটে ম্যাক এলিস্টারের দূরপাল্লার শট সোজা তালুবন্দি করেন ফ্রেঞ্চ গোলরক্ষক লরিস। এর ঠিক ২ মিনিট পর আবারও আক্রমণ করে আর্জেন্টিনা।
এবার ডি পল ডি বক্সের বাইরে থেকে জোড়ালো শট নিলে ফ্রেঞ্চ ডিফেন্ডার ভারানের পায়ে লেগে বল বাইরে চলে গেলে কর্নার পায় আর্জেন্টিনা। অবশ্য সেই কর্নার কাজে লাগাতে পারেননি আলবিসেলেস্তারা। ১৬ মিনিটে আবারও গোলের সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। এবার ডি পলের ডান পাশ থেকে বাড়ানো ক্রসে ডি মারিয়ার ডান পায়ের শট চলে যায় গোলবারের অনেক উপর দিয়ে।
ম্যাচের ২১ মিনিটের মাথায় ডি মারিয়াকে ডি বক্সের ভেতর ফাউল করে বসেন ডেম্বেলে। রেফারি সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন। স্পট কিক থেকে গোল করে দলকে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে দিলেন মেসি। বিশ্বকাপে এটি তার ৬ষ্ঠ গোল।
পুরো মাঝমাঠেই যেন ফ্রান্সকে আটকে রাখে আর্জেন্টিনা। বল দখলে আর্জেন্টিনার ধারে কাছেও ছিল না বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ৩৭ মিনিটে আর্জেন্টিনার দুর্দান্ত কাউন্টার এটাকে খেই হারিয়ে ফেলে ফ্রান্স। মাঝমাঠ থেকে মেসির পাস থেকে আলভারেজ বল পেলে সেটি বাড়ান ম্যাকএলিস্টারের উদ্দেশ্যে, দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে তিনি বল দেন ডি মারিয়াকে। তিনি আর মিস করলেন না।
কোপা আমেরিকার ফাইনাল, ফিনালিসিমার পর আরও একটি ফাইনালে গোল করলেন এই জুভেন্টাস তারকা। দুই গোলে পিছিয়ে থেকে প্রথমার্ধেই জিরু ও ডেম্বেলেকে পাল্টে ফেলেন ফ্রান্স কোচ। তবুও তাদের ভাগ্যের চাকা ফেরেনি। শেষ পর্যন্ত ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা।
ম্যাচের ৫১ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু ডি বলের ডিবক্সের ভেতর থেকে নেওয়া দুর্দান্ত ভলি সোজা লরিসের হাতে গিয়ে পড়ে। ৬০ মিনিটে আবারো সুযোগ পায় আর্জেন্টিনা। বাম পাশ থেকে আলভারেজের নেওয়া শট দারুণভাবে সেভ করেন লরিস।
ম্যাচ যখন শেষের দিকে যাচ্ছে ঠিক সে সময়েই যেন জ্বলে ওঠেন এমবাপে। মাত্র ৯৭ সেকেন্ডের ব্যবধানে আর্জেন্টিনার স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দেন এই পিএসজি তারকা। ৭৮ মিনিটে কুলো মুয়ানিকে ডি বক্সের ভেতর ফাউল করে বসেন ওতামেন্দি। রেফারি সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান।
স্পট কিক থেকে বিশ্বকাপে নিজের ৬ষ্ঠ গোলটি করেন এমবাপে। এই গোলের রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও গোল করে এমবাপে। ৮১ মিনিটে এমবাপের দুর্দান্ত ভলিতে গোল করে দলকে ২-২ এ সমতায় ফেরান এই পিএসজি তারকা। দুই গোল দিয়ে যেন আরো উজ্জীবিত হয়ে খেলতে থাকে ফ্রান্স।
৯৬ মিনিটে কামাভিঙ্গার শট দারুণভাবে সেভ করেন এমি মার্টিনেজ। এর ঠিক এক মিনিট পর ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে মেসির দূর পাল্লার বুলেট গতির শট হুগো লরিস ঝাপিয়ে পড়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন। এর কিছুক্ষণ পর রেফারি বাঁশি বাজালে ২-২ সমতায় থেকেই শেষ হয় নির্ধারিত সময়ের খেলা।
অতিরিক্ত সময়ের ম্যাচের ১০৮ মিনিটের মাথায় দুর্দান্ত এক কাউন্টার অ্যাটাক থেকে গোল করে দলকে ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে দেন মেসি। এটি বিশ্বকাপে তার ৭ম গোল। মেসির এই গোলের রেশ না কাটতে কাটতে এমবাপের আবার গোল। বিশ্বকাপের ফাইনালে হ্যাটট্রিক করে দলকে ৩-৩ সমতায় এনে টাইব্রেকারে নিয়ে যান এই তারকা।
ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। টাইব্রেকারে আবারও দলকে রক্ষা করলেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। এবার তিনি বিশ্বকাপ এনে দিলেন। স্পট কিক থেকে ফ্রান্সের কোম্যানের পেনাল্টি রুখে দেন মার্টিনেজ এবং চুয়ামেনি মারেন গোলবারের বাইরে দিয়ে। অন্যদিকে চারটি স্পট কিক থেকে চারটিতেই গোল করে ফ্রান্সকে ৪-২ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতলো আর্জেন্টিনা।
গোল্ডেন বুট এমবাপের/
বিশ্বকাপের ফাইনালে হ্যাটট্রিক করে গোল্ডেন বুট জয় করে নিলেন ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপে। ৭ গোল করেও মেসি জিততে পারলে না প্রেস্টিজিয়াস পুরস্কারটি।
মেসি এবং এমবাপে দু’জনই বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে নেমেছিলেন ৫টি করে গোল নিয়ে। ম্যাচের ২৩ মিনিটেই পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন মেসি। সে সঙ্গে নিজের গোলও বাড়িয়ে নেন ৬টিতে।
সে সঙ্গে এমবাপের গোল হয়ে যায় ৭টি। মেসির ৬টি। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। এই অর্ধে এসে লিওনেল মেসি এক দুর্দান্ত গোল করেন। সমান হয়ে যায় দু’জনের গোল।
গোল্ডেন বল মেসির, গোল্ডেন গ্লাভস মার্টিনেজের/
২০১৪ বিশ্বকাপেও টুর্নামেন্টের সেরা ফুটবলারের পুরস্কার গোল্ডেন বল জিতেছিলেন লিওনেল মেসি। কিন্তু সেবার থাকতে হয়েছে পরাজিতের দলে।
৮ বছর পর ২০২২ সালে এসে বিশ্বকাপটাই জিতে নিলেন তিনি। সে সঙ্গে আবারও জিতলেন গোল্ডেন বল। ইতিহাসের প্রথম ফুটবলার হিসেবে দ্বিতীয়বার গোল্ডেন বল উঠলো মেসির হাতে।
আরেকটি বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলেছেন আর্জেন্টিনাকে। এবার আর স্বপ্নভঙ্গ নয়। বিশ্বকাপ জিতেই সব আক্ষেপ ঘুচিয়েছেন লিওনেল মেসি।
স্মরণীয় কাতার বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘গোল্ডেন বল’ জিতেছেন সাতবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী এই ফুটবলার।
এবারের বিশ্বকাপে ৭ গোল করা ৩৫ বছর বয়সী মেসি এ নিয়ে দ্বিতীয়বার গোল্ডেন বল জিতলেন। ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে স্বপ্ন ভাঙলেও টুর্নামেন্টসেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন মেসি।
এ নিয়ে ইতিহাসে তৃতীয়বার আর্জেন্টিনার কোনো খেলোয়াড় গোল্ডেন বল জিতলেন। ১৯৮২ সালে এই পুরস্কার চালু হওয়ার পর ১৯৮৬ বিশ্বকাপজয়ের নায়ক ডিয়েগো ম্যারাডোনা জিতেছিলেন এই পুরস্কার।
অন্যদিকে আর্জেন্টিনার এমিলিয়ানো মার্টিনেজ টুর্নামেন্টের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার ‘গোল্ডেন গ্লাভস’ জিতেছেন। ফাইনালে পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত কিছু সেভসহ টাইব্রেকারে কোম্যানের শট ফিরিয়ে দেন তিনি।
এর আগে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালেও পেনাল্টি শ্যুটআউটে দুই শট ঠেকিয়ে নায়ক বনে গিয়েছিলেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।
Leave a Reply