February 5, 2025, 6:01 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
যুক্তরাষ্ট্রের ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ পত্রিকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ প্রতিবেদনটি সাক্ষাৎকারভিত্তিক। যেখানে অনেক বিষয় উঠে এসেছে যার মধ্যে শাসনকাল, ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন প্রসঙ্গ। ভার্জিনিয়ার হোটেল রিজ-কার্লটনে পেটুলা ডভোরাক ব্যতিক্রমী সাক্ষাকারটি গ্রহন করেন। শেখ হাসিনা গত ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৭তম অধিবেশনে ভাষণ দেন। এর পাশাপাশি কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
সাক্ষাতকার বিষয়ে পেটুলা ডভোরাক বলেন, যখন তিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎকারটি শেষ করেন, ততক্ষণে হোটেলের লবিতে ভক্তদের ভিড় লেগে গিয়েছিল। শেষতক একটি পরিকল্পনা তৈরি হলো- শেখ হাসিনা জনতার উদ্দেশে কথা বলতে সম্মত হলেন। রিটজ-কার্লটন হোটেল কর্তৃপক্ষ চেয়ার-টেবিলগুলোকে তাদের ওল্ড ডোমিনিয়ন রুমের পাশে সরিয়ে নেন। নিরাপত্তা বাহিনী উপস্থিত অন্তত ২০০ জনকে বলরুমে ঢোকানোর আগে তল্লাশির জন্য একটি লাইন তৈরি করে। সাক্ষাতকারটির হেডলাইন করা হয় :
প্রতিবেদন প্রথমেই বলেছে, তিনি একজন মা এবং দাদি। তিনি নাতি-নাতনির জন্য রান্নাও করেন। বিশেষ করে তিনি তার ছেলের বাসায় গেলে তাদের জন্য ‘চিকেন বিরিয়ানি’ বা ‘মোরগ পোলাও’ রান্না করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও নেতৃত্বের গুণাবলীর কথা, বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হলেন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতাসীন ‘নারী প্রধানমন্ত্রী’। রাশিয়ার চাইতেও বেশি জনসংখ্যা অধ্যুষিত একটি দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। ২০ বার তাঁকে হত্যাচেষ্টা হয়েছে; তা সত্ত্বেও তিনি দমে যাননি। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের মন জয় করে ক্ষমতায় টিকে আছেন। এই সেদিন তিনি তাঁর ছেলে ও ১৬ বছর বয়সী নাতনিকে নিয়ে তাঁর ৭৬তম জন্মদিন উদযাপন করলেন।
ডভোরাক লিখেছেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শহীদ করে ঘাতকরা যখন তার আরও ১৭ আত্মীয়কে হত্যা করেন তখনো তিনি ভেঙে পড়েননি। তিনি তার পিতার স্মৃতি ও ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে আবারও দেশে ফিরে বাবার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল ও দেশের হাল ধরেন। এরপর তিনি পরপর কয়েকবার নির্বাচনে জয় লাভ করে দেশে তাৎপর্যপূর্ণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করেন।
ওয়াশিংটন পোস্ট বলেছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা শুধু দেশের মানুষের জন্যই কাজ করেননি, তিনি মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। রোহিঙ্গারা যখন নিজ দেশে নিপীড়ন ও হত্যার শিকার হয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে আসে, তখন জাতিসংঘের আবেদনে সাড়া দিয়ে তিনি তাদের আশ্রয় দেন। এরপরই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় পায়। এ বিষয়ে ওয়াশিংটন পোস্টকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘শরণার্থী ক্যাম্পের জীবন ভালো কোনো বিষয় না। এ কারণে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরতে চায়।’
এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অভিবাসী পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র একটি বিশাল দেশ। তাদের দেশে অনেক জমি, প্রচুর খালি জায়গা ও কাজ করার সুযোগ আছে।’ এ সময় শেখ হাসিনা প্রশ্ন তুলেন, ‘কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এমন সামান্য সংখ্যক শরণার্থীকে জায়গা দেওয়ার বিষয়ে চিন্তা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ছোট দেশ। জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের ৮ নম্বর দেশ। আকারে আমরা প্রায় যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনের রাজ্যের সমান।’ অর্থাৎ, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলতে চাচ্ছেন যে আমরা ছোট দেশ হয়েও রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয় দিয়েছি। তবে যুক্তরাষ্ট্র বিশাল দেশ হয়েও কেন এসব শরণার্থীকে স্থায়ীভাবে গ্রহণ করতে পারবে না। ওয়াশিংটন পোস্টের এ প্রতিবেদনে উগ্রবাদ দমনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির সফলতার কথাও বিবৃত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসাও পেয়েছেন। বিশেষ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।
নারী হয়েও তিনি দেশকে যেভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার প্রশংসা করেছে ওয়াশিংটন পোস্ট। এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন যে, নেতৃত্বে নারীরা পুরুষদের চেয়েও ভালো। কারণ তিনি একজন নারী হিসেবে এ বিষয়টা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। এ ছাড়া তিনি বলেন, বাংলাদেশের নারীরা দরিদ্র। তারা শিক্ষা অর্জন করার ক্ষেত্রে পিছিয়ে। এ কারণে তিনি বোঝেন নারীরা পিছিয়ে পড়লে জাতিও পিছিয়ে পড়বে। যে বিষয়টা অনেক পুরুষই বুঝতে পারতেন না।
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, নারীদের পেছনে বিনিয়োগ করলে দেশ আরও সামনে এগিয়ে যাবে। শেখ হাসিনার বর্তমান শাসনকালের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের বিষয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট বলেছে, ‘গত এক দশকে তিনি বাংলাদেশের বিদ্যমান দারিদ্র্য উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছেন। শিক্ষার সুযোগ প্রসারিত করেছেন এবং জনগণকে আবাসনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এখন বাংলাদেশের অনেক গরিব মানুষ পাকা ঘরে থাকে এবং বর্তমান সরকারই তাদের জন্য এ ব্যবস্থা করেছে।’
পেটুলা ডভোরাক লিখেছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতার সময় একটি গরিব দেশ ছিল। কিন্তু, ২০১৫ সালে দেশটি একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। এটা শেখ হাসিনার শাসনামলেই সম্ভব হয়েছে।
Leave a Reply