December 22, 2024, 9:58 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
বাংলাদেশ রেলওয়ের খুলনা-দর্শনা সেকশনে নতুন ব্রডগেজ লাইন ও পার্বতীপুর থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত মিটার গেজ রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর নির্মাণ প্রকল্পের কনসালটেন্সি সার্ভিসের চুক্তি সই হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) রেলভবনে এ চুক্তি সই হয়।
খুলনা-দর্শনা সেকশনে চুক্তিতে সই করেন প্রকল্প পরিচালক মনিরুল ইসলাম ফিরোজী এবং কনসালটেন্ট সার্ভিস ভারতীয় স্টুপ কনসালটেন্ট ও আরভি এসোসিয়েটস জয়েন্ট ভেঞ্চারের পক্ষে মো. আসাদ।
এ প্রকল্পের আওতায় খুলনা দর্শনের মধ্যে পুরনো লাইনের পাশাপাশি নতুন ১২৬ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মিত হবে। কনসালটেন্সি সার্ভিসের চুক্তিমূল্য ৮৭ কোটি ৩৭ লাখ ৩ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা।
এদেিক এই প্রকল্পরে আওতায় ১৬টি স্টশেন পুর্ননর্মিাণ/ সংস্কার করা হবে। ৩৭টি প্ল্যাটর্ফমরে মধ্যে ৫টি নতুন এবং ১২টি পুর্ননর্মিাণ করা হবে। ১৭টি নতুন এবং ৩টি পুর্ননর্মিাণ প্ল্যাটর্ফম সেড নির্মাণ করা হবে। চারটি র্গাডার ও ১৪৩টি আরসিসি বক্স কালর্ভাট নির্মাণ করা হবে। ১৮টি স্টেশনে এসবিআই সিগনালিং সিস্টেম প্রর্বতন করা হবে। ১৭টি ফুটওভার ব্রীজ নির্মাণ করা হবে।
স্টিয়ারিং কমিটির সূত্র জানায়, খুলনা-দর্শনা সেকশনে ১২৬.২৫ কিলোমিটার ডাবললাইন রেলপথ নির্মান হলে লাইনের সক্ষমতা বৃৃদ্ধির মাধ্যমে ট্রেন পরিচালনা আরও উন্নত হবে। স্বল্প সময়ে অধিক সংখ্যক যাত্রীবাহী এবং মালবাহী ট্রেন পরিচালনা করা যাবে। পাওয়ার স্টেশনগুেেলাতে জ্বালানি তেল পরিবহন করা যাবে দ্রæত। একই সঙ্গে বাংলাদশে রেলওয়ের রাজস্ব বৃদ্ধি হবে।
এটি একটি ঝুলে থাকা প্রকল্প। অনুমোদতি ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পরে মেয়াদ ধরা হয় ২০১৮ সালরে জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২০১৮ সালের ২৭ ফব্রেুয়ারি প্রকল্পটি একনকে অনুমোদতি হয়। এরপর প্রকল্পের কাজ এগোয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখন পর্যন্ত প্রকল্পের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। মূল রেললাইন নির্মাণ শুরুর আগে প্রকল্পের অনেক কাজ বাকি আছে। প্রকল্পের প্রথম পার্ট হলো পরামর্শক নিয়োগ। তারপর আপডেটেড ফিজিবিলিটি স্টাডি এবং ডিটেল ডিজাইন করা। এই কাজগুলোর জন্য ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে দর–কষাকষি চূড়ান্ত হয়েছে কেবল। আগামী সপ্তাহের মধ্যে ক্রয়প্রস্তাব দেওয়া হবে।
এখনো পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা-দর্শনা জংশন সেকশনের ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণের প্রকল্প পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম ফিরোজী বলেন, ‘যেহেতু এটা এলওসি (লাইন অব ক্রেডিট) প্রজেক্ট, ফলে প্রসিডিউরাল টাইমটা অনেক বেশি লাগে। খুলনা দর্শনা প্রকল্পটিও তার ব্যতিক্রম না।
এখন পর্যন্ত তিনবার পরামর্শক নিয়োগে বা অন্যান্য কাজের জন্য এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তৃতীয়বারে বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেছে। পরামর্শক নিয়োগসহ অন্যান্য কাজ গুলো শুরু হলেই, প্রকল্পের ফিজিক্যাল কাজ শুরু হবে।
খুলনা-দর্শনা ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পটি এলওসির আওতায় ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের ঋণে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তিন হাজার ৫০৬ কোটি ৭৫ লাখ ৪৮ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর মধ্যে প্রকল্প ব্যয়ের দুই হাজার ৬৮৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা দেবে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক এবং ৮১৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। আগামী ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। অর্থের অভাবে প্রকল্পের কোন কাজ না হওয়াই, প্রকল্পের মেয়াদও বাড়াবে বলে জানা গেছে।
চুক্তি স্বাক্ষরের সময় রেলপথ মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের রেল ব্যবস্থা ব্রডগেজ এবং মিটারগেজ দিয়ে দুই অঞ্চলে বিভক্ত। আমরা পর্যায়ক্রমে সব রেল ব্যবস্থাকে ব্রডগেজে রূপান্তর করছি। ভারতের সব রেললাইন ব্রডগেজে। আমরাও দেশের গেজ ব্যবস্থাকে একরকম ব্রড গেজে রূপান্তর করছি। এছাড়া রেললাইন সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে যে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে সবগুলোকেই আমরা ব্রডগেজ আকারে করছি।
মন্ত্রী বলেন, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ সহজ হবে। এছাড়া ঈশ্বরদী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ডাবল লাইনের প্রকল্প আমরা হাতে নিয়েছি।
মন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যে আটটি ইন্টার সেকশন বন্ধ হয়েছিল এরই মধ্যে পাঁচটি চালু হয়েছে। বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে চালু হবে।
ভারতীয় অর্থায়নে এ প্রকল্প দুটি নির্মাণ করা হচ্ছে জানিয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। এ সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। পার্বতীপুর কাউনিয়া ডুয়েল গেজ নির্মিত হলে ভবিষ্যতে ভারত ছাড়াও নেপাল, ভুটানের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো যাবে। এর ফলে আমাদের যাত্রীসহ মালামাল পরিবহনের সুযোগ বাড়বে।
পার্বতীপুর থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত মিটারগেজ লাইনকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর প্রকল্পের চুক্তিতে সই করেন প্রকল্প পরিচালক লিয়াকত শরীফ খান এবং ভারতীয় কনসালটেন্সি সার্ভিস আরভি এসোসিয়েট এবং স্টুপ কনসালট্যান্টস লিমিটেড জয়েন্ট ভেঞ্চারের পক্ষে অভিক ভট্টাচার্য। কনসালটেন্সি সার্ভিসের চুক্তিমূল্য ৭৫ কোটি ৮৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৯০ টাকা। এ প্রকল্পে ৫৭ কিলোমিটার মিটারগেজ লাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হবে। উভয় প্রকল্পই ভারতীয় এলওসির অর্থায়নে হবে।
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন কবীর, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার, ভারতীয় হাই কমিশনের প্রথম সচিব সালোনি সাহাইসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply