শুভব্রত আমান/
এমনটি ঘটবে সে হিসাব চলছিল ঠিক যখন থেকে পদ্মাসেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বলা হয়েছিল পদ্মসেতু চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমের চিত্র যেমন পাল্টাবে, পাল্টে যাবে দৌলতদিয়া-আরিচা ফেরিঘাট ও লঞ্চঘাটের চিরচেনা চেহারা। ঠিক সেভাবেই পাল্টে গেছে এই ঘাটের চিত্র।
গত শুক্রবার সরেজমিনে ঐ ঘাট হয়ে ঢাকা থেকে ফেরার পথে এ প্রতিবেদক এমন চিত্র দেখতে পান হুবুহু। ফেরিঘাটে সরগরম থাকলেও লঞ্চঘাটের চিত্র একেবারে উল্টো। লঞ্চঘাটে সুনসান নীরবতা, নেই যাত্রীর চাপরাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ার এক সময়ের ব্যস্ততম লঞ্চঘাটে এখন সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। লঞ্চঘাটে নেই কোনো যাত্রীর চাপ। যাত্রী না থাকায় লঞ্চের ট্রিপ সংখ্যাও কমে গেছে। ফলে বেশিরভাগ সময়ই লঞ্চের চালক ও শ্রমিকেরা ঘাটে বসে অলস সময় পার করছেন। যাত্রী ও পর্যাপ্ত ট্রিপ না থাকায় লোকসানে পড়তে হচ্ছে লঞ্চ মালিকদের।
সরেজমিনে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি লঞ্চ ঘাটে পন্টুনের সঙ্গে বেঁধে রাখা। যাত্রী না থাকায় প্রত্যেকটি লঞ্চ স্বল্প সংখ্যক যাত্রী নিয়ে পৌনে এক ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা পর পর ঘাট থেকে ছেড়ে যাচ্ছে। ঠিক একইভাবে পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চগুলোও স্বল্প সংখ্যক যাত্রী নিয়ে গড়ে এক ঘণ্টা পর পর দৌলতদিয়া ঘাটে আসছে। আগে যেখানে উভয় ঘাট থেকেই ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর পর শতাধিক যাত্রী নিয়ে লঞ্চগুলো ছেড়ে যেত, সেখানে এখন প্রত্যেকটি লঞ্চই থাকে যাত্রী শূন্য। যাত্রী না থাকায় লঞ্চের চালক ও শ্রমিকরা ঘাটে বসে অলস সময় পার করছেন।
এদিকে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর থেকেই লঞ্চে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ৩০ টাকার ভাড়া ৪৫ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও আরিচা-নগরবাড়ী নৌপথে মোট ২৫টি লঞ্চ চলাচল করে। এর মধ্যে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ১৭টি লঞ্চ চলে। আর ৮টি লঞ্চ চলে আরিচা-নগরবাড়ী রুটে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার যাত্রী দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাট দিয়ে পারাপার হতো। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই সেই চাপ কমে যায়। এখন প্রতিদিনই যাত্রী শূন্য থাকে ঘাটগুলো। প্রতিদিন এখন ৫ থেকে ৮ হাজার যাত্রী পার হয়ে থাকে ঘাট দিয়ে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাসের সিরিয়াল না থাকায় লঞ্চ ঘাট এলাকায় যাত্রীর চাপ কমেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
কুষ্টিয়া থেকে আসা যাত্রী হারুন রশিদ আসকার জানান, তিনি লোকাল বাসে করে দৌলতদিয়া ঘাট পর্যন্ত এসেছেন। তারপর নদী পার হতে তিনি লঞ্চ ঘাটে আসেন। লঞ্চ ঘাটে তিনি তেমন ভিড় দেখতে পাননি। টিকিট কেটে সরাসরি তিনি লঞ্চে উঠেছেন। লঞ্চ ছাড়ার অপেক্ষায় ঘাটে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা বসে আছেন। যাত্রী না থাকায় ঘাট থেকে লঞ্চও ছাড়ছে না।
লঞ্চের চালক জাকারিয়া রহমান জানান পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই তাদের অলস সময় পার করতে হচ্ছে। ঘাটে যাত্রীর চাপ নেই। আগে যেখানে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর পর ঘাট থেকে শতাধিক যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ছেড়ে যেত, সেখানে এখন এক ঘণ্টা পর পর ৩০/৪০ জন যাত্রী নিয়ে ঘাট ছাড়তে হচ্ছে।
দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটের ম্যানেজার নরুল আলম মিলন বলেন, ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ না থাকার প্রভাব লঞ্চ ঘাটেও পড়েছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই ব্যস্ততম লঞ্চঘাট এখন সুনসান নীরব। আগে যেখানে যাত্রীরা লঞ্চের জন্য অপেক্ষা করত, সেখানে লঞ্চ এখন যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর লঞ্চ ঘাটের চিত্র পুরোটাই পাল্টে গেছে।
বিআইডব্লিউটিএর আরিচা কার্যালয়ের লঞ্চঘাটের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আফতাব হোসেন জানান,যাত্রী সংখ্যা কম থাকলেও দৌলতদিয়ায় লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। আগে ১০/১৫ মিনিট পর পর ঘাট থেকে লঞ্চগুলো ছেড়ে যেত, এখন যাত্রী কম থাকায় ৪০ মিনিট, এক ঘণ্টা পর পর ছেড়ে যায়। বর্তমানে ১৭টি লঞ্চ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে চলাচল করছে।
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি