February 5, 2025, 9:58 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
মাগুরার শ্রীপুরে খন্দকার লাবণী (৪০) নামে এক অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনারের (এডিসি) আত্মহত্যার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর জেলা পুলিশ লাইন্সে মাহমুদুল হাসান (২৩) নামে এক কনস্টেবলের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। নিহত পুলিম কর্মকর্তার বাড়ি মাগৃরা এবং কনস্টেবলের বাড়ি কুষ্টিয়া।
নিহত পুলিশ কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান এর আগে খুলনা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার এডিসি খন্দকার লাবণীর দেহরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মাত্র দেড় মাস আগে মাহমুদুল মাগুরায় বদলি হয়ে আসেন।
ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসে গতকাল বুধবার (২০ জুলাই) রাতে ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন এডিসি খন্দকার লাবণী। তিনি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার ৬নং কাদিরপাড়া ইউনিয়নের বরালিদহ গ্রামের খন্দকার শফিকুল আজমের মেয়ে। তার স্বামী তারেক আবদুল্লাহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক। তাদের সংসারে দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
নিহত লাবণীর বাবা খন্দকার শফিকুল আজম জানান, গত ১৭ জুলাই এক সপ্তাহের ছুটিতে লাবণী গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। গতকাল বুধবার লাবণী শ্রীপুর ইউনিয়নের সারঙ্গ দিয়া গ্রামে নানার বাড়িতে অবস্থান করছিল। গভীর রাতে সে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করে।
আত্মহত্যার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে লাবণীর সঙ্গে তার স্বামীর কলহ চলে আসছিল। সংসারে তার মেয়ে সুখী ছিল না। মূলত সাংসারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্বামীর সঙ্গে লাবণীর বনিবনা হচ্ছিল না। এ কারণেই তার মেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে পুলিশ কর্মকর্তা খন্দকার লাবণীর আত্মহত্যার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মাগুরা পুলিশ লাইন্সের পুলিশ ব্যারাকের চার তলা ভবনের ছাদে আত্মহত্যা করেন কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান। ধারণা করা হচ্ছে- তিনি নিজের কাছে থাকা শর্টগানের গুলি চালিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। নিহত মাহমুদুল হাসান কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা সদরের এজাজুল হকের ছেলে।
আত্মহত্যাকারী পুলিশ কনস্টেবল মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে লাবণীর অন্য কোনো সম্পর্ক ছিল কিনা- জানতে চাইলে খন্দকার শফিকুল আজম বলেন, এ রকম কোনো বিষয় তারা আজ পর্যন্ত শুনেননি।
মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অপরাধ ও প্রশাসন কামরুল হাসান জানান দুটি আত্মহত্যার ঘটনার মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কিনা- সে বিষয়ে আমরা এখনো নিশ্চিত নই। তবে প্রাথমিকভাবে ঘটনা দুটি ভিন্ন ভিন্ন বলেই আমাদের কাছে মনে হচ্ছে।
খন্দকার লাবণী ৩০তম বিসিএসে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। তিনি খুলনা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান আগে তার দেহরক্ষী ছিলেন।
দুপুর দেড়টার দিকে মাগুরা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল মর্গের সামনে কথা হয় মাহমুদুল হাসানের দুলাভাই মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, মাহমুদুল মাঝে মাঝে বলতো খুলনায় তার চাকরি করতে ভালো লাগছে না। তার অন্যত্র বদলি হওয়া প্রয়োজন। সে কারণেই মাহমুদুল বদলি হয়ে মাস দেড়েক আগে মাগুরাতে আসে।
তবে পুলিশ কর্মকর্তা খন্দকার লাবণীর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল কিনা সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি। আত্মহত্যার কারণও নিশ্চিত করতে পারেননি সেলিম উদ্দিন।
শ্রীপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা খন্দকার লাবণীর আত্মহত্যার বিষয়ে এখনো কোনো পরিষ্কার কারণ আমরা জানতে পারিনি। তবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহের কারণেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
জানা গেছে, লাবনীর স্বামী দীর্ঘদিন ধরে দূরারোগ্য ক্যান্সারে ভুগছেন বলে জানা গেছে।
মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মাগুরা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
Leave a Reply