December 21, 2024, 8:26 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলছে। মনে করা হচ্ছে সংক্রমণ আবারও ফুঁসে উঠতে শুরু করেছে। এটাকে বলা হচ্ছে করোনার চত‚র্থ ঢেও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউ প্রবেশ করেছে। এমনকি এই ঢেউয়ে সংক্রমণ দ্রুত গতিতে চূড়ার দিকে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও গত দুই সপ্তাহ ধরে আবারও ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ভাইরাস। সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে করোনা শনাক্তের হার বেড়েছে ৩৮৩ শতাংশ। দশমিক ৫ শতাংশ থেকে শনাক্তের হার ছাড়িয়েছে ১৩ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুধবার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ১৩৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনার নতুন ঢেউ শুরু হয়েছে।
এই অবস্থায় ব্যক্তি সচেতনতার পাশাপাশি জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে সরকারকেও ভূমিকা রাখার পরামর্শ তাদের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত ৬ থেকে ১২ জুন পর্যন্ত (এক সপ্তাহ) আগের সপ্তাহের তুলনায় নতুন করে শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়ায় ১১৮ দশমিক ১ শতাংশ। পরের সপ্তাহেই তা (১৩ থেকে ১৯ জুন) বাড়ে ৩৮৩ শতাংশ।
অধিদপ্তর বলছে, গত ২৩ থেকে ২৯ মে দেশে করোনা শনাক্ত নিম্নমুখী ছিল। ওই সপ্তাহে ২১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়, যা এর আগের সপ্তাহের তুলনায় ৩ দশমিক ২ শতাংশ কম ছিল। এর পরের সপ্তাহে সংক্রমণ আরও কমে আসে। ৩০ মে থেকে ৫ জুন পর্যন্ত ২১০ জনের করোনা শনাক্ত হয়। আগের সপ্তাহের তুলনায় শনাক্তের হার কমে দাঁড়ায় এক দশমিক ৯ শতাংশে। তবে এর পরের সপ্তাহ থেকে করোনার সংক্রমণ আবারও ঘুরে দাঁড়ায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত ৬ থেকে ১২ জুন পর্যন্ত (এক সপ্তাহ) আগের সপ্তাহের তুলনায় নতুন করে শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়ায় ১১৮ দশমিক ১ শতাংশ। পরের সপ্তাহেই তা (১৩ থেকে ১৯ জুন) বাড়ে ৩৮৩ শতাংশ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী, সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের বেশি থেকে এর নিচে নেমে এলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ধরা হয়। উল্টো পথে যাত্রা অর্থাৎ সংক্রমণের হার পাঁচের নিচ থেকে পাঁচ ছাড়ালে ‘পরবর্তী ঢেউ’ আঘাত হেনেছে ধরা হয়। সে হিসাবে গত ২০ জুন দেশে শনাক্তের হার ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ ।
সংক্রমণ বাড়লেই দেখা যায় নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাব হয়। এক্ষেত্রে এবারও কী তেমন কিছু হয়েছে কি না— জানতে চাইলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন ‘নতুন ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাব না হলেও বিএ- ৪, বিএ- ৫ নামের দুটি উপ-ভ্যারিয়েন্ট মিলে এখন সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। চীনের পর উত্তর কোরিয়া, ভারত, ইউরোপে ওমিক্রনের পর যে ঢেউটা এসেছে, সেটি ওমিক্রনেরই সাব-ভ্যারিয়েন্ট। আশঙ্কাজনক হলো, ওমিক্রনের মূল ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে এটি আরও দ্রুতগতিতে ছড়ায়। আশঙ্কা করছি আমাদের দেশেও এমনটি হচ্ছে। জিনোম সিকোয়েন্স করলেই বিষয়টি জানা যাবে।’
তারা বলছেন শনাক্তের হার পাঁচের ওপরে উঠেছে, কিন্তু আমাদের দৈনিক নমুনা পরীক্ষাই হচ্ছে কম। এই সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা দিয়ে শনাক্তের হার বিবেচনা করা যাবে না।
আশঙ্কা প্রকাশ করে আইইডিসিআর’র বলছে ‘সংক্রমণের গতিবিধি দেখে মনে হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহার পর সংক্রমণ চূড়ায় উঠতে পারে। এই সময়টাতে দেখা যাচ্ছে সংক্রমণ খুবই প্রবলভাবে ওপরের দিকে উঠছে। আবার আমরা আশা করছি খুব দ্রুত তা নেমেও (সংক্রমণের চূড়া) যাবে। সম্ভবত এই দুই সপ্তাহ এভাবে উঠতেই থাকবে, তারপর কিছুদিন স্থিতিশীল থাকবে। এরপর আবার দ্রুত নেমে যাবে।’
গত বছরের এই সময়ে সংক্রমণের চূড়া অনেক ওপরে অবস্থান করছিল। এই বছর সংক্রমণ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় এখনও তা বলা যাচ্ছে না। তবে, খুব বেশি আতঙ্ক ছড়াবে বলে মনে হয় না।
এদিকে, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবারও বাড়তে থাকায় মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক, ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নীতি প্রয়োগ, সামাজিক দূরত্ব বজায়সহ সকল প্রকার জনসমাগম বর্জনের পরামর্শ দিয়েছে কোভিড সংক্রান্ত সরকারের জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে এই সংক্রমণ আরও ব্যাপক আকার ধারণ করবে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
Leave a Reply