দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
২৫ জুন উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতু। বহু ধরনের বদল ঘটাবে এই সেতু। নানা হিসেব চলছে। ঢাকার সঙ্গে সহজ যাতায়াত প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাড়বে শিল্প-কারখানায় বিনিয়োগ। গতি পাবে নগরায়ণ। কৃষিতে আসবে নতুন বিপ্লব। বাড়বে কর্মসংস্থান। বিকশিত হবে পর্যটন। পদ্মা সেতুর প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগী হবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের তিন কোটির বেশি মানুষ।
সমীক্ষার হিসাব বলছে, সব থেকে বড় কথা হলো এসবের ফলে দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ অবদান রাখবে এ সেতু। আর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।
পদ্মা সেতু তৈরির আগে করা সমীক্ষায় বলা হয়, সেতুর জন্য করা নদীশাসন কাজ এ অঞ্চলে পদ্মার ভাঙন প্রবণতা কমাতে ভূমিকা রাখবে। কর্মসংস্থান, দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং পিছিয়ে থাকা অঞ্চলগুলোর উন্নয়নের মধ্য দিয়ে গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দারিদ্র্য কমবে। শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন নয়, উৎপাদন, কর্মসংস্থান, আয় বৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচনের মধ্য দিয়ে জাতীয় ও আঞ্চলিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে পদ্মা সেতু।
সমীক্ষায় আরো বলা হয়, পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দেশের জাতীয় জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ। মানুষের আয়ে ১ দশমিক ৪ শতাংশ মূল্য সংযোজন করবে। ৭ লাখ ৪৩ হাজার ‘ম্যান-ইয়ার’ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। তবে এসব প্রভাব পড়তে নির্মাণ-পরবর্তী চার-পাঁচ বছর পর্যন্ত সময় লাগবে। আর পদ্মা করিডরে আন্তঃদেশীয় যোগাযোগ চালু হলে আরো গতিশীল হয়ে উঠবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতি।
পদ্মা সেতুর মাধ্যমে সড়ক ও রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও টেলিকম পরিষেবার লাইন সংযোগ গড়ে তোলা হয়েছে। এসব পরিষেবা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শিল্প-কারখানার বিকাশে বড় ভূমিকা রাখবে। অন্যদিকে সহজ ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবাদে আরো গতিশীল হয়ে উঠবে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর। সেতুটি চালু হলে স্বল্প সময়ে এ দুই বন্দর থেকে পণ্য খালাস হয়ে ঢাকাসহ দেশের অন্য বড় শহরে পৌঁছে যাবে।
বলা হচ্ছে পদ্মা সেতু চালু হলে যশোর থেকে আমি ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টায় ঢাকায় চলে যেতে পারা যাবে। বিমানে গেলেও কম-বেশি একই সময় লাগবে। এ তথ্য থেকেই বোঝা যায় মানুষের যোগাযোগ কতটা সহজ হতে চলেছে। এ সহজ যোগাযোগের ইতিবাচক প্রভাব পড়তে যাচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, পর্যটনসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে। সবকিছু মিলিয়ে এমন একটা পর্যায় আসবে যেটা ‘উইন-উইন সিচুয়েশন’ তৈরি করবে এবং অবশ্যই দেশের জিডিপি একটা বড় অংশে বৃদ্ধি পাবে।
৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পদ্মা বহুমুখী সেতুকে ঘিরে তৈরি করা হয়েছে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত মহাসড়ক (এক্সপ্রেস)। ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়েটি ২০২০ সালের মার্চে উদ্বোধন করা হয়। এটি তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। পদ্মা সেতুর জন্য গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন রেলপথ। দ্বিতল পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন। নিচে স্প্যানের ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। এজন্য ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে ১৬৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রড গেজ রেলপথ। এতে খরচ হচ্ছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। সেতুর সংযোগ সড়কের পাশাপাশি সার্ভিস এলাকায় তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো। সেতুতে রাখা হয়েছে গ্যাস সঞ্চালন লাইন, ফাইবার অপটিক্যাল ও টেলিফোন ডাক্ট। সেতুর ভাটিতে তৈরি করা হচ্ছে ‘হাই ভোল্টেজ’ বিদ্যুৎ লাইন। এসব অবকাঠামোকে ঘিরে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ সারা দেশের মানুষ।
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি