December 21, 2024, 9:51 pm
শুভব্রত আমান/
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে চালের বাজার একেবারে নিয়ন্ত্রনহীণ। বাজার পরিস্থিতি বলছে গত এক মাসে বিভিন্ন রকমের চালে ৬ দফায় প্রায় ১১ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে এই কুষ্টিয়াতেই। বোরো ধানের ভরা মৌসুমে এ ধরনের দাম বৃদ্ধি ভালবাবে নিতে নারাজ বিভিন্ন মহল। ওদিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে সব ধরনের চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব জায়গায় এর প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এর মাঝে একদল ব্যক্তি নিজেদেরকে তদন্ত কমিটি দাবি করে গত সোমবার খাজানগর পরিভ্রমণ করেছেন। একটি বিশেষ চাল মিলে তারা যান ; গিয়ে তারা দেখতে পান সেখানে কোন চাল বা ধান মজুত নেই। এ পরিভ্রমনে সরকারের কয়েকটি সংস্থার উর্ধ্বতন কয়েক কর্মকর্তা ছিলেন। তারা সেখানে ঐ চালকল মালিকের করা নসিয়ত শুনে তার অধীনের চালকলগুলো মৃদ পরিদর্শন করে ফিরে আসেন। পরিস্থিতি দেখে মনে হয়েছে ঐ মিল মালিক প্রচুর চাল-ধান তার মিলে থরে থরে সাজিয়ে রাখবেন ওনারা সেখানে গিয়ে সেগুলো ধরে ফেলবেন। পরে সাংবাদিকদের তারা জানিয়েছেন সেখানে কোন কিছু মজুদ নেই। এর আগেও তারা কখনো কিছু পায়নি ; কখনোও পাবেও না। তারমানে কানামাছি সত্যি, কানামাছি মিথ্যে; কানামাছি তুমি আমি যে যার মতো। এসব চালকল মালিকরা তাদের চালকলে ধানগুদামজাত করবেন এটা অনেকটা সেকেল ধারনা। তারা এসব সরকারী লোকেদেরে চেয়ে অনেক বেশী জ্ঞান-বুদ্ধির অধিকারী। কৌশল পাল্টে গেছে। তারা এখন নিজেদের কাছে কিছুই রাখেন না। তারা রাখান। বিভিন্ন জায়গায় নিজস্ব পকেট ব্যক্তি-গুদাম আছে। যেখানে প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ অথবা অপ্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ধরে ধান রেখে দেয়া হয় যোগসাজশ ফরমুলার মাধ্যমে। প্রয়োজন হলেই টান দেয়া হয়। আচ্ছা ধানের অভাবে খাজানগরে কোন চাল কল কখনোও বন্ধ হয়েছে এমন ঘটনা আছে ? বিশেষ করে বড় চাতালগুলো ? তারা বলে থাকেন ধানের অভাব কিন্তু চালকল কখনোনই থেমে থাকেনি। তারা মিনিটে উৎপাদন করে থাকেন। থেমে যাননা।
কুষ্টিয়া শহরের পৌর বাজার ও বড় বাজারে ব্যবসায়ীরা জানান ঈদের এক-দুদিন আগে থেকেই কুষ্টিয়ায় চালের দাম বৃদ্ধি শুরু হয়। সর্বশেষ শনিবার (২৮ মে) থেকে কুষ্টিয়ায় চালের দাম এক লাফে কেজিতে চার টাকা বেড়েছে।
আজ মঙ্গলবার কুষ্টিয়ায় মিনিকেট চাল ৬৬-৬৭ টাকা কেজি (২৩ মে ছিল ৬৪ টাকা), সাধারণ মিনিকেট ৬৪ টাকা, অটো রাইচ মিলে ভাঙানো কাজললতা ৫৭ টাকা, কাজললতা সাধারণ ৫২ টাকা, অটো রাইচ মিলে ভাঙানো বাসমতি ৭৬ টাকা থেকে কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ টাকায়, সাধারণ বাসমতি ৭৬ টাকা, অটো রাইচ মিলে ভাঙানো কাটারীভোগ ৭২ টাকা, নাজিরশাইল ৭৮ টাকা ও অটো রাইচ মিলে ভাঙানো পাইজাম ৪৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
কুষ্টিয়া পৌর বাজারের চাল ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান লাই জানান, মিল গেটে যে দামে তারা চাল কিনছেন, পরের দিন সে দামে আর চাল কিনতে পারছেন না। তিনি জানান মাস জুড়েই এই অরাজকতা চলছে।
চালের দাম বৃদ্ধির কারন হিসেবে চালকল মালিকরা যথারীতি ধানের দাম বৃদ্ধিকেই দায়ী করছেন। কিন্তু ধানের দাম বৃদ্ধির কোন প্রমাণ মিরছে না কৃষকদের কাছ থেকে।
খাজানগরের ফ্রেশ এগ্রো মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উমর ফারুক জানান ধানের বাজার চড়া। প্রতিনিয়ত ধানের দাম বাড়ছে। ফলে বাধ্য হয়েই তাদেরকেও চালের দাম বাড়াতে হচ্ছে। ধানের উৎপাদনও কম বলে তিনি মনে করেন।
তিনি জানান, মে মাসের শুরুতে মিনিকেট (সরু) ধানের বাজার ছিল ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা মণ। এখন সেই ধান বাজারে ১৫০০ টাকা মণ কিনতে হচ্ছে। একইভাবে কাজললতা ১৩০০, আঠাশ ১৩০০ থেকে সাড়ে ১৪০০ এবং বাসমতি ১৫৫০ থেকে ১৬০০ টাকা মণ কিনতে হচ্ছে।
এদিকে মিল মালিকদের ধানের এ দাম একেবারে মনগড়া বলছেন কৃষকরা।
কুষ্টিয়া সদরের খাজানগরেরই কৃষক জাকারিয়া হোসেন জানান সরু ধান তারা বিক্রি করছেন ১১শ থেকে ১২শ টাকা। কাজল লতা বিক্রি হচ্ছে ১২শ টাকা, আঠাশ ১১৫০ থেকে সাড়ে ১১২৫০০০ এবং বাসমতি ১৪০০ টাবা।
মিল মালিকদের ধানের দাম বৃদ্ধির দাবি মানতে নারাজ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ৩৫ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখানে আবাদ হয়েছে ৩৫ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৫৪ হাজার ৪৭৮ মেট্রিক টন।
এ বছর ফলন বেশ ভালো হয়েছে বলে জানান এ দফতরের একজন কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করে এ কর্মকর্তা জানান এ পেছনে অন্য কারন আছে। সেটা অনুসন্ধান করে দেখতে হবে।
Leave a Reply