December 22, 2024, 9:16 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
প্রায় মুখ থুবড়ে পড়ে যাওয়া দেশের ৬৪ রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল সংস্কারে বিনিয়োগ নিয়ে আসার প্রস্তাব দিয়েছে বিদেশী তিন কোম্পানির কনসোর্টিয়াম ‘সুগার ইন্টারন্যাশনাল’। সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), জাপান ও থাইল্যান্ডের তিনটি কোম্পানি নিয়ে কনসোর্টিয়ামটি গড়ে তোলা হবে এ কনসোর্টিয়াম। বিনিয়োগ করা হবে ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার (সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি)। বিনিয়োগকৃত অর্থের প্রধান উৎস জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জেবিআইসি) ও থাইল্যান্ডের এক্সিম ব্যাংক। বিনিয়োগের অর্থের ৭০ শতাংশ কনসোর্টিয়ামকে ঋণ হিসেবে জোগান দেবে ব্যাংক দুটি। বাকি ৩০ শতাংশ বিনিয়োগ হচ্ছে কনসোর্টিয়ামের মূলধন হিসেবে।
যৌথ এ ব্যবস্থাপনায় চিনিকলগুলো মুনাফার ধারায় ফিরবে বলে প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কয়েক দশক ধরেই লোকসানে চলছে চিনিকলগুলো। এর মধ্যে শুধু গত পাঁচ বছরেই প্রায় ৪ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে সংস্থাটি। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সংস্থাটির ২০২০-২১ অর্থবছরে লোকসান হয়েছে ৯৭২ কোটি টাকা। তার আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৯৭০ কোটি টাকা। বর্তমানে সব মিলিয়ে সংস্থাটির ওপর ব্যাংকঋণের দায় বর্তেছে ৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
বর্তমানে দেশে ১৫টি চিনিকল, একটি ইঞ্জিনিয়ারিং, একটি ডিস্টিলারি ও একটি জৈব সার কারখানা আছে।
দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোর বয়স অনেক বেশি। প্রায় পাঁচ থেকে নয় দশকের পুরনো এসব চিনিকলের যন্ত্রপাতি এখন পুরোপুরি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ১৫টি চিনিকলের মধ্যে ছয়টি বন্ধ রয়েছে ২০২০ সাল থেকে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শুধু চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনির পাশাপাশি আখের উপজাত দিয়ে জৈব সার, অ্যালকোহল, স্পিরিট, ভিনেগার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন করে মুনাফা করছে। বাকি সব প্রতিষ্ঠানই লোকসানি। কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনি উৎপাদন করে লোকসান করলেও উপজাত পণ্যের বদৌলতে কয়েক বছর ধরেই বার্ষিক ১০-১৫ কোটি টাকা মুনাফা করছে।
বর্তমান অবস্থায় এসব চিনিকলগুলোকে লাভজনক করা অসম্ভব। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন চিনিকলগুলোর উৎপাদিত পণ্যের বহুমুখীকরণই এগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। এ প্রেক্ষাপটে সরকারের কাছে বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে এসেছে সুগার ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম।
বিনিয়োগ প্রস্তাবটি নিয়ে করণীয় ঠিক করতে এরই মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এসএম আলমকে সভাপতি করে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কমিটির প্রথম বৈঠকে সুগার ইন্টারন্যাশনালের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। ইউএই, জাপান ও থাইল্যান্ডের তিন কোম্পানি নিয়ে গঠিত সুগার ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম এ অর্থ বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। মোট ব্যয়ের ৭০ শতাংশ কনসোর্টিয়ামকে ঋণ হিসেবে জোগান দেবে জেবিআইসি ও থাইল্যান্ডের এক্সিম ব্যাংক। বাকি ৩০ শতাংশ কনসোর্টিয়াম মূলধন হিসেবে বিনিয়োগ করবে। সভায় কনসোর্টিয়াম এবং এটিকে অর্থায়নকারী ব্যাংকগুলোর প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বিডার পক্ষ থেকে অর্থায়নকারী ব্যাংকগুলোর গ্যারান্টি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এর জবাবে কনসোর্টিয়ামের পক্ষ থেকে বলা হয়, জেবিআইসি ও থাই এক্সিম ব্যাংকের পলিসি অনুযায়ী ঋণের জন্য সরকারের সভরিন গ্যারান্টি প্রয়োজন। তবে এক্ষেত্রে প্রকল্পে সুগার ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়ামের বিনিয়োগের পুরোটাই (৭০ শতাংশ ঋণ ও ৩০ শতাংশ মূলধন) সরকারকে জামানত হিসেবে দেয়া হবে। তবে এ সময় বলা হয়, বিনিয়োগ চুক্তিটি জিটুজি না হওয়ায় এতে সভরিন গ্যারান্টি দেয়ার সুযোগ নেই। সুগার ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়ামের প্রতিনিধিরা এ প্রস্তাবে সম্মতি জানান। এ অবস্থায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খুব একটা বাধা নেই বলে মনে করছে শিল্প মন্ত্রণালয়।
জানা গিয়েছে, বিনিয়োগ চূড়ান্ত হলে বিএসএফআইসির সঙ্গে সুগার ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়ামের একটি চুক্তি হবে। চুক্তিতে কনসোর্টিয়াম ও বিএসএফআইসির মধ্যে শেয়ার বণ্টনের কথাও উল্লেখ থাকবে। উভয় পক্ষের মধ্যে মুনাফা বা লোকসান ভাগাভাগিও সে অনুযায়ী হবে। এছাড়া জেবিআইসি ও থাই এক্সিম ব্যাংকের ঋণের দায়ভারও থাকবে সুগার ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়ামের ওপর।
Leave a Reply