দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিয্গো নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরে এগুলোতে নানা অনিয়ম চলে আসছে। এগুলোর মধ্যে সবথেকে বড় অভিযোগ হলো সরকারী নিয়ম না মানা। খেয়ালখুশীমতো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা। হালে বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে একধরনের কমন অন্তত ২০ ধরনের আর্থিক অনিয়ম চলছে। এ অবস্থায় নড়েচড়ে বসেছে বিশ^বিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রকারী প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ওইসব অনিয়ম বন্ধে ৫০ বিশ্ববিদ্যালয়কে আর্থিক ব্যয় সংক্রান্ত গাইডলাইন দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এ লক্ষ্যে শিগগির ইউজিসি থেকে একটি সর্তকতা পরিপত্র জারি করা হবে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আর্থিক সুবিধা গ্রহণ, উন্নয়ন কাজে অর্থ ব্যয়, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম চলছে। এ ক্ষেত্রে কিছু উপাচার্য অনেকটাই বেপরোয়া। তারা সরকারি আইনকানুন মানছেন না। এ কারণে গতবছর থেকে নিজেদের বাজেট পাশের আগে ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সতর্ক করে পরিপত্র দিয়ে আসছে। এর আগে সাধারণ নির্দেশনা পাঠানো হতো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, গত কয়েক বছর থেকে বাজেট পাশের আগে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একটি গাইডলাইন দেওয়া হচ্ছে। কোন কোন খাতে বাজেটের অর্থ ব্যয় করা যাবে সেসব বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। তার আলোকে এবারো সেটি দেওয়া হবে। আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যে এ সংক্রন্ত পরিপত্র জারি করা হবে।
জানা গেছে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিদর্শনে গিয়ে ইউজিসির কর্মকর্তারা আর্থিক অনিয়মের চিত্র তুলে আনেন। তাতে দেখা গেছে, উপাচার্য থেকে শুরু করে ড্রাইভার পর্যন্ত বিধিবহির্ভূতভাবে অর্থ গ্রহণ করছেন তহবিল থেকে। যেমন- ড্রাইভারদের ‘টেকনিক্যাল অফিসার’ দেখিয়ে পঞ্চম গ্রেডে বেতনভাতা দেওয়া হয়। উপাচার্যরা কেউ বিশেষ ভাতা আবার কেউ দায়িত্ব ভাতার নামে বেতনের অতিরিক্ত ২০ শতাংশ পর্যন্ত হারে অর্থ নিচ্ছেন। শিক্ষক-কর্মচারীদেরকে পূর্ণ বাড়ি দেওয়ার পর বর্গফুট হিসেবে ভাড়া আদায় করা। সহকারী রেজিস্ট্রাররা ৫ম বা ষষ্ঠ গ্রেডে আর উপ-রেজিস্ট্রার চতুর্থ ও পঞ্চম গ্রেডে বেতন নিচ্ছেন। নিয়োগের দিন থেকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নয়ন বা উচ্চতর স্কেল নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। এ পরিস্থিতিতে সতর্ক করে পরিপত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।
ইউজিসির প্রস্তবিত পরিপত্রে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টার বা ডরমেটরিতে বসবাসরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাসাভাড়া, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ইত্যাদি বিলের ব্যাপারে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পর্যবেক্ষণ আছে। কমিটির অষ্টম বৈঠকে এ নিয়ে আপত্তি দেওয়া হয়েছে। উল্লেখিত জনবলকে ইতিপূর্বে দেওয়া বর্গফুট হিসেবে বা নির্দিষ্ট হারে বা সাব-স্টান্ডার্ড (নিম্নমানের) দেখিয়ে বা দৈনিক ভিত্তিতে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের সুবিধা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই এ ক্ষেত্রে সরকারের প্রচলিত নিয়মে বাড়ি ভাড়া আদায় করতে হবে। আর সুবিধাভোগীর কাছ থেকে অন্যান্য (পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস) প্রকৃত বিল আদায় করতে হবে। কোনো রূপ ভর্তুকি দেওয়া যাবে না।
ইউজিসির কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকার বাইরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকায় রেস্ট হাউজ বা লিয়াঁজো অফিস আছে। উপাচার্যরা ঢাকার বাইরে না যাওয়ার লক্ষ্যে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে এগুলো স্থাপন করে থাকেন। অবশ্য পরিপত্রে ইউজিসি রেস্ট হাউজের ব্যাপারে নমনীয়তা প্রকাশ করেছে।
বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে আরও বলা হয়, এক খাতের অর্থ অন্য খাতে কিংবা মূল খাতের অর্থ অভ্যন্তরীণ কোনো খাতেই সমন্বয় করা যাবে না। কমিশনের অনুমতি ছাড়া কোনো খাতে বরাদ্দের অতিরিক্ত ব্যয় করা যাবে না। কোনো খাতে বাড়তি অর্থের দরকার হলে ইউজিসিকে অবহিত করতে হবে। অনুমোদিত জনবলের বাইরে কোনোপ্রকার নিয়োগ করা যাবে না। বিধিবহির্ভূত নিয়োগে ব্যয়ের অর্থ জন্য বরাদ্দ রাখা হয়নি। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তরা অবসরপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান থেকেই উৎসব ও নববর্ষভাতা গ্রহণ করবেন।
বলা হয়েছে, চুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করতে হলে তাকে অঙ্গীকারনামা দিতে হবে যে, তিনি অবসরপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান থেকে এসব ভাতা নেন না। এ ধরনের জনবলকে চুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে কনসোলিডেট পেমেন্ট ফিক্সেশনের সময়ে কোনোভাবেই উল্লেখিত ভাতা অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। ইউজিসির অনুমোন ছাড়া এডহক, দৈনিকভিত্তিক বা আউটসোর্সিং করা যাবে না। আর শূন্যপদে অনুমোদনের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ অনুমোদন সাপেক্ষে নিয়োগ করা যাবে।
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি