শুভব্রত আমান, কুষ্টিয়া/
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ঝাউদিয়া ইউনিয়নের আস্থানগর গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষে চার জন নিহতের ঘটনায় এখনও কোন মামলা হয়নি। কোন গ্রেফতারও নেই।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুস্তাফিজুর রহমান রতন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান পুলিশ ঘটনায় তদন্তে নেমেছে জড়িতদের খুঁজে বের করতে। সংঘর্ষের পেছনের বিভিন্ন সূত্রগুলো যাচাই করা হচ্ছে।
ওসি জানান এটা বিচ্ছিন্ন কোন সংঘর্ষ ছিল না। ঐ এলাকার বিবাদমান পক্ষগুলোর ধারাবাহিক গোলযোগই সংঘর্ষ অনিবার্য করে তুলেছিল। আগেও সংর্ঘষ হয়েছে এবং হত্যাকান্ডের ঘটনা সেখানে ছিল।
এদিকে, ঘটনায় কোন গ্রেফতার কেন নেই জানতে চাইলে ওসি জানান কোন কারন নেই। পুলিশ দোষীদের চিন্থিত করতে একটু সময় নিচ্ছে। দোষীরা গ্রেফতার হবে, আইনের আওতায় আসবে।
তবে আওয়ামী লীগ বলছে দ্বন্দ্ব রাজনৈতিক নয়। তবে নিহতরা আওয়ামী লগি কর্মী।
সোমবার সন্ধ্যায় সংঘটতি সংঘর্ষটি ছিল এলাকায় র্দীঘ সময় ধরে চলে আসা কয়েক ব্যক্তির আধিপত্য বিস্তার প্রচেষ্টার ফল। এসব ব্যক্তিরা কখনও এলাকার প্রভাব, কখনও রাজনৈতিক প্রভাব এবং কখনও অর্থ ঢেলে প্রভাব তৈরির মাধ্যমে বিভিন্ন পক্ষ সৃষ্টি করে এলাকায় মুখোমুখি অবস্থান তৈরি করে রেখেছে। এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত যাদের নাম এসেছে তারা হলেন ঝাউদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ঝাউদিয়া ইউনিয়ন ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি কেরামত আলী, একই ইউনিট আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সদস্য ও ঝাউদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য ফজলুল হক, আব্দুল মজিদ ও মেহেদী। এরা সবাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। এদের মধ্যে আব্দুল মজিদ দীর্ঘদিন ঐ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি দলের মধ্যে অনেকটা কোনঠাসা।
পুলিশ জানিয়েছে, এই দ্ব›দ্ব-সংঘাত এই লোকগুলোকে ঘিরেই আবর্তিত হয়ে আসছে। এলাবাসী সূত্রে জানা গেছে, এই মুহুর্তে মুল দ্ব›দ্ব চলছে কেরামত ও একই ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার ফজলুর রহমানের মধ্যে।
ছোট-খাট বিভিন্ন বিষয়ে সাধারণ জনগনের মধ্যে কোন মতদ্বৈততা সৃষ্টি হলেই এসব ব্যক্তিরা পক্ষ-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নেয়। এক পর্যায়ে সুবিধামতো সংর্ঘষ লাগিয়ে দেয়।
পুলিশের তথ্য মতে এই লোকগুলোর সৃষ্ট পক্ষ-বিপক্ষের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ ঘটলেও বড় একটি সংঘর্ষ ঘটেছিল ২০১৬ সালের ২৪ সে্েপ্টম্বর। এই সংর্ঘষ ছিল কেরামত ও মেহেদীর মধ্যে। এতে তিনজন নিহত হন। নিহতরা সবাই কেরামত পক্ষের লোক। নিহতরা ছিলেন শাহাজ উদ্দীন (৫৯) ইমন আলী (৩৪) ও আকালি (৫৫)। এ হত্যাকান্ড’র ঘটনায় নিহতের স্বজনরা মামলা করে। পরে ৩১ অক্টোবর ২০১৬ মামলার এজাহার নামীয় আসামী আব্দুল মজিদ ও মেহেদীকে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার আলাউদ্দিন নগর এলাকা থেকে ২টি বিদেশী পিস্তল, ২টি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ৫ রাউন্ড পিস্তলের গুলি ও ১০ গ্রাম হিরোইন সহ গ্রেফতার করে। পরে তারা জামিনে ছাড়া পান। মামলা চলমান।
চলতি ঘটনার ইতিবৃত্ত/
এবারের ঘটনার সূত্রপাত হিসেবে জানা যায় ঐ গ্রামের জনৈক রহিমের সাথে জমি সংক্রান্ত দ্ব›দ্ব চলছিল রশিদুল নামের এক ব্যক্তির। রশিদুল ফজলুর রহমানের লোক আর রহিম ছিল কেরামতের। রহিম উজানগ্রাম বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে বটতলা নামক স্থানে রাশিদুলের সাথে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়ে। সেখানে বেলা সাড়ে ৫টার দিকে রশিদুলের সাথে থাকা আনিস, মতিয়ার, সাবু সহ কয়েকজন মিলে রহিমকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে।
এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর সন্ধ্যার ইফতারের পর কেরামতের লোকজন রহিম হত্যায় জড়িত মতিয়ারের বাড়িতে হামলা চালায়। এতে নিহত হন তিনজন। এরা হলেন মতিয়ার (৪০), লাল্টু (৩০) ও কাশেম (৫০)।
এরপর সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে উভয় পক্ষের আরো ১৫ থেকে ২০ জন আহত হন।
নিহতদের লাশ এখনও কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে রয়েছে। ময়না তদন্ত চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এদিকে এ সংঘর্ষকে রাজনৈতিক ঘটনা বলতে রাজি নন কুষ্টিয়া আওয়ামী লীগের নেতারা।
কুষ্টিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুষ্টিয়া জজ আদালতের জিপি এডভোকেট আসম আক্তারুজ্জামান মাসুম বলেন এলাকাগত আধিপত্য বিস্তারের জন্য এরা দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয়। এদের মধ্যে কারো কারো দলের পদ-পদবি আছে। তবে এ কোলাহল রাজনৈতিক নয়। তিনি বলেন নিহতরা অনেকেই আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খায়রুল আলম জানান মামলা হোক বা না হোক দুস্কৃতিদের ধরতে বাধা নেই। পুলিশ দ্রæত পদক্ষেপ নিয়েছে। আশা করা যায়। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের দ্রæত গ্রেফতার করা যাবে।
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি