জহির রায়হান সোহাগ, চুয়াডাঙা/
চুয়াডাঙ্গায় দোকানে চুরির অপবাদ দিয়ে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন করার ঘটনায় নির্যাতনকারী দোকানী আলী আহমেদ ও তার কন্যা রোমানা আক্তার রুমাকে জেলে পাঠিয়েছে আদালত। সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে চুয়াডাঙার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জোহরা খাতুন এই আদেশ দেন।
এর আগে সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে বাদী হয়ে দর্শনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন নির্যাতনের শিকার শিশুটির মা ফাতেমা খাতুন। পরে অভিযান চালিয়ে দোকান মালিক ও তার মেয়েকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ঐ দোকান মালিক প্রায তিনঘন্টা ধরে প্রকাশ্য দিবালোকে শিশুটির উপর নির্যাতন চালায়। এসময় শিশুটির চিৎকারে অনেক লোকজন হাজির হলেও ছেলেটির স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
ঘটনাটি ঘটে চুয়াডাঙা সদর উপজেলার দোস্ত গ্রামে রোববার দুপুরে।
রাতে নির্যাতনের একটি ভিডিও ও খুঁটিতে বেঁধে রাখার কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আজ সোমবার সকালে বিষয়টি জানাজানি হয়।নির্যাতনের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে পুরো এলাকাজুড়ে। ঘটনায় জড়িত ব্যাক্তির শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। নির্যাতনের শিকার ১০ বছর বয়সী শিশু আব্দুর রহমান দোস্ত গ্রামের মনোয়ার হোসেনের ছেলে। সে দোস্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।
নির্যাতনের শিকার শিশু আব্দুর রহমান জানায়, দুপুরে স্কুলে টিফিনের সময় সে ঐ দোকানে খাবার কিনতে যায়। ওটি একটি গার্মেন্টস’র দোকান হরেও সেখানে কনফেকশনারীর আইটেম বিক্রি হয়। ঐ সময় দোকান মালিক আলী আহমেদ দোকানে ছিলেন না। দোকানে বসেছিলেন তার দোকানীর ২৬ বছর বয়সী মেয়ে রোমানা খাতুন।
আব্দুর রহমান জানায় সে পাঁচ টাকার একটি ক্রিমরোল কিনতে করতে গিয়েছিল। কিন্তু ক্রিমরোল দেখে পুরোন মনে হওয়ায় সে সেটা না কিনে চলে আসতে উদ্যত হলে দোকানের মধ্যে বসে থাকা রোমানা তাকে টাকা চুরির অপবাদ দেয়। আশেপাশের দোকানদের সহায়তায় তাকে ধরে দোকানের খুঁটির সাথে দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়। দোকানী আলী আহমেদ দোকানে এলে শিশুটিকে কিল, চড় ও একটি লাঠি দিয়ে পেটানো হয়।
শিশুটি জানায় “দোকানে থাকা রোমনার ধারনা হয়েছিল তার কাছে কোন টাকা নেই এবং সে টাকা দেখাতে বলে। যখন শিশুটি পাঁচ টাকার কয়েনটি রোমানাকে দেখায় তখন সে চেঁচাতে শুরু করে আমি নাকি ঐ টাকা তাদের দোকান থেকে চুরি করেছি।”
খবর পেয়ে দোস্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোমিন হোসেন ঘটনাস্থলে যান এবং রহমানকে উদ্ধার করেন।
যোগাযোগ করা হলে মোমিন জানান আশেপাশের লোকদের সাথে নিয়ে তিনি শিশুটিকে চেক করে তার কাছ থেকে তার দাবি মতো পাঁচ টাকা পাওয়া যায়।
মোমিন জানান স্কুলে টিফিনের জন্য স্কুল বাচ্চাদের কাছে পাঁচ টাকা থাকা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। তার অর্থ এই নয় যে সে চুরি করেছে।
দোকান মালিক আলী আহমেদ জানান তিনি দোকানে ছিলেন না। যেহেতু তার মেয়ে রোমানা দেকেছে আব্দুর রহমানকে টাকা চুরি করতে সেই অনুযায়ী তাকে শাস্তি দেয়া হয়।
দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএইচএম লুৎফুল কবীর বলেন, নির্যাতনের ঘটনা ভিডিওতে দেখেই পুলিশ অপরাধীদের সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। তাদের গ্রেফতারের পর তারা নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছে।
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি