December 22, 2024, 7:08 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
কুষ্টিয়ায় লাহিনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। কুষ্টিয়া মডেল থানায় বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় মামলাটি করেন ওই শিক্ষক। শুক্রবার মামলাটি রেকর্ড হয়েছে। এতে প্রধান আসামি করা হয়েছে কুষ্টিয়ার পৌরসভার কাউন্সিলর সোহেল রানাকে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে মোচ চারজনকে। এর মধ্যে তাসের আলী নামের একজনকে রাতেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেন কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বিরুল আলম। তিনি বলেন, কাউন্সিলর সোহেলসহ অপর আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। তারা পলাতক রয়েছে।
কাউন্সিলর ও তাঁর লোকজনের হাতে গতকাল সকাল ১০টার দিকে শহরের লাহিনীপাড়ায় লাহিনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিজ কক্ষে মারধরের শিকার হন প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম। এ ঘটনার পর বিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রায় ৪০ মিনিট অবরোধ করে রেখেছিল। সোহেল কুষ্টিয়া পৌরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের পাশাপাশি কুষ্টিয়া সদর উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। পাশাপাশি ঠিকাদারির কাজ করেন তিনি।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক মাস ধরে কাউন্সিলর সোহেল বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বালু স্তূপ করে রেখেছেন। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের ডান পাশে ইট রেখেছেন। বালু উড়ে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ দূষিত ও ইট ভাঙার শব্দে লেখাপড়ার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছিল। এসব নির্মাণসামগ্রী রাখার ব্যাপারে প্রধান শিক্ষকের অনুমতিও নেওয়া হয়নি।
প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, প্রথমে ভেবেছিলেন কয়েক দিন পর এগুলো সরিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু না সরানোয় বিষয়টি কাউন্সিলর সোহেলকে জানান। তিনি এতে কর্ণপাত করেননি। বৃহস্পতিবার সকালে ইট ভাঙানোর যন্ত্র দিয়ে ইট ভাঙা হচ্ছিল। এ সময় স্কুলে জাতীয় সংগীত চলছিল। ইট ভাঙা বন্ধ রাখার কথা বললেও শ্রমিকেরা কোনো কথা শুনছিলেন না।
প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করেন, কাউন্সিলর তাঁর শ্রমিকদের দিয়ে বিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহার করে কাজ করাচ্ছিলেন। এতে বাধা দেওয়া হয়। এরপর কাউন্সিলর খেপে মুঠোফোনে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। পরে নিজে ছয় থেকে সাতজন সন্ত্রাসী নিয়ে বিদ্যালয়ে তাঁর কার্যালয়ে ঢোকেন। জামার কলার ধরে কিল–ঘুষি মারেন। গালে ও মাথায় আঘাত পেয়েছেন নজরুল ইসলাম। পরে তিনি কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সহকারী প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম দাবি করেন, কাউন্সিলর কার্যালয়ে ঢুকে প্রধান শিক্ষকের জামার কলার ধরে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। চেয়ার-টেবিল ফেলে দেন। বাধা দিতে গেলে ধাক্কা দিয়ে তাঁকে ফেলে দেওয়া হয়।
বিদ্যালয়ের ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি মতিয়ার রহমান মজনু যিনিও কুষ্টিয়া পৌরসভার বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান। তিনি জানান , কারোও অনুমতি না নিয়ে কাউন্সিলর আশা বিদ্যালয়ের মধ্যে সিডিসির রাস্তা নির্মানের সামগ্রী রেখে পরিবেশ নষ্ট করেছে এবং জোরপূর্বক বিদ্যালয়ের মোটর থেকে পাইপ দিয়ে পানি নেওয়া, বিদ্যুৎ ব্যবহার করে আসছিলো। ক্লাস চলাকালীন সময়ে খোয়া ভাঙ্গা,বালু ফেলা সহ শব্দ দুষনের কাজ করার সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিষেধ করলে তার উপরে হামলা চালিয়ে অফিস কক্ষের আসবাবপত্র ভাংচুর করেছে। এটা একটি জঘন্যতম অপরাধ।
তিনি জানান এসব বিষয়ে ঐ কাউন্সিলর এমনকি তাকেও অবহিত করার প্রয়োজন বোধ করেন নি। এজন্য তার বিচার হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। মামলা দায়েরের সময় তিনি থানাতে উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply