December 22, 2024, 4:06 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, জিয়াউর রহমানের হাতেই পাহাড়ে অশান্তির বীজ বপন হয়েছিলো। তার হাত ধরে পাহাড়ি বাঙালিদের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে, এই পাহাড় এলাকায় অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিলো। তারই ধারাবাহিকতায় তারা (বিএনপি) এখনো চক্রান্ত করে যাচ্ছে, এখনো সক্রিয় আছে। অস্ত্রের মাধ্যমে কখনো শান্তি আসে না। যারা এখনো বিপথে রয়েছেন, তারা শান্তির পথে আসুন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শান্তিচুক্তির সুফল ঘরে তুলুন।
রবিবার (২০ মার্চ) খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ মাঠে জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার জন্য লড়াই, সংগ্রাম করেছেন। সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ নিয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলেছিলেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে স্বাধীনতার চেতানার উপর আঘাত করেছেন। মানুষের মাঝে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়েছেন। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম কথায় কথায় গণতন্ত্রের কথা বলেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে নাকি গণতন্ত্র যায় না। গণতন্ত্র কার সঙ্গে যায়? ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। অথচ তাদের সাথে নাকি গণতন্ত্র যায়। বেগম খালেদা জিয়ার হাত আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতাকর্মীর রক্তে রঞ্জিত। সেই বিএনপি নেতারা রাজাকার-আলবদরদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুঁজে পান। ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর বেগম খালেদা জিয়া কুখ্যাত রাজাকার-আলবদর বাহিনীর প্রধান মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়ে ৩০ লাখ শহীদের আত্মাকে পদদলিত করেছেন। তারেক জিয়া হাওয়া ভবন বানিয়ে সরকারের মধ্যে সরকার গঠন করেছিল। পাঁচ বছরে এ দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। ১৯৭৭ সাল থেকেই জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করেছিলেন। একইভাবে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছেন।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রক্ষমতাকে ধ্বংস করে অন্ধকারে নিমজ্জিত করেছে। অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ ছিলো না। আধা ঘন্টা পরপর লোডশেডিং হয়েছে। ব্যবসা বাণিজ্য ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই অন্ধকার থেকে আলোয় উদ্ভাসিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সঠিক নেতৃত্ব পেলে দেশ উন্নত হতে পারে এটি আজ প্রমাণ হয়েছে। ২০০৮ সালের দেশে খাদ্য ঘাটতি ছিল ৪০ লাখ মেট্রিক টন। আজ বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার সময় দেশে সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ছিল। আজ ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা হবে। আজ দেশের মানুষ লোডশেডিং ভুলে গেছে। অথচ একসময় মানুষ কখন বিদ্যুৎ আসে সেটার দিকে তাকিয়ে থাকতো। ডাক্তারদের মোমবাতি জ্বালিয়ে অপারেশন করতে হয়েছে। সেই দুর্বিষহ অবস্থার কথা আজ মানুষ ভুলে গেছে।
আওয়ামী লীগের এ সিনিয়র নেতা বলেন, যারা জামায়াতে ইসলামী করে তারা এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিশ্বাস করে না। যখন কাদের মোল্লার ফাঁসি হলো পাকিস্তানের পার্লামেন্টে নিন্দা প্রস্তাব পাস হয়েছে। তার ফাঁসি কার্যকরের পর পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খান বলেছেন, কাদের মোল্লার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাদের সৈনিক ছিলেন। আমরা অবাক হলাম। ৭১ সালে রাজাকার ছিল কিন্তু সে ৪৩ বছর পরও পাকিস্তানের কিভাবে সৈনিক থাকে। তার মানে তারা এখনো পাকিস্তানের সৈনিক একইভাবে মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ তাদের যখন রায় কার্যকর হলো পাকিস্তানের পার্লামেন্টে নিন্দা প্রস্তাব পাস হয়েছে। নিজামীকে বেসামরিক খেতাব দেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে বাংলাদেশে যারা জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি করে, তারা এখনো পাকিস্তানের সৈনিক হিসেবে কাজ করছে। এসমস্ত রাজাকার-আলবদর পাকিস্তানের প্রেতাত্মাদের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে। আর এদের দোসর বিএনপি।
হানিফ বলেন, আমরা যখন ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু করেছিলাম ফরেন রেমিট্যান্স ছিলো মাত্র ৬ বিলিয়ন ডলার এর কাছাকাছি। আমাদের এই অদক্ষ শ্রমিক যাওয়ার কারণে অন্য দেশের শ্রমিকদের থেকে অর্ধেক বেতন পেতো আমাদের দেশের শ্রমিকরা। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এজন্য দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করেছেন। এর মাধ্যমে দক্ষ শ্রমিক বিদেশে যাচ্ছে। যার কারণে এই সরকারের আমলে রেমিট্যান্স বেড়ে ৬ বিলিয়ন থেকে এখন ৩২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে ছিল রফতানি আয়, আজ তা ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২৫০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এসবের জন্য একজন কৃতিত্বের দাবিদার। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর নেতৃত্বে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। যার কারণে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ সীমিত সম্পদ নিয়েও উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পৃথিবীর অন্য কোন দেশ এতো স্বল্পসময়ে এগোতে পারেনি। যা শেখ হাসিনা সরকার করে দেখিয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ অর্থনৈতিক মুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিনিধি সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা এমপি, অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক বেগম ওয়াসিকা আয়েশা খানম এমপি, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দীপংকর তালুকদার এমপি এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। প্রতিনিধি সভায় সভাপতিত্ব করেন খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি।
Leave a Reply