December 22, 2024, 8:50 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
শুধু গানকে উপজীব্য করে একটি সমগ্র দর্শন-ভিত্তি নির্মাণের কৃতিত্ব লালনেরই সবথেকে বেশী। ভিন্ন ভিন্ন এ ধরনের ঘরানা থাকলেও লালন ছিলেন ব্যতিক্রম ; অতুলণীয়। কারন তার গান-দর্শন কয়েকটি ভিত্তি রচনা করেছিল। তারমধ্যে মানবতাবাদ, অসাম্প্রদায়িক মনোভাব, জাত-ধর্ম ভেদাভেদহীন কুসংস্কামুক্ত সমাজ চিন্তা অন্যতম।
মহাত্মা লালনের স্মরণোৎসব উপলক্ষে আয়োজিত তিনদিনের আনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেছেন।
তারা বলেন বাংলার ভাবের জমিনে দাঁড়িয়ে যিনি কর্তারূপে মানুষ অন্বেষণের ইশারা করেছিলেন তাকে নিছকই ভাবগত একটা ব্যাপার ভাবলে আমরা তাঁর কিছুই বুঝব না। বাউলধর্মে পরমার্থ এসে দেহের সীমায় মিশেছে বলেই বাউলদের সাধন-ভজনের মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে মানুষ। তাদের কাছে মানবের তুল্য কিছুই নাই। বিভক্ত সমাজে মানুষের জন্য এ কত অদ্ভূত হেঁয়ালি যে, মানুষ ভজলেই কেবল মানুষ পাওয়া যাবে। এর অন্যথা হলো তো মূলবস্তুটাই হারিয়ে গেল। বাউলদের এই মানুষ ভাবনা শাস্ত্রাচারী সমাজপতি ও ধর্মাধিপতিদের বিরুদ্ধে গভীর মর্মজাত এক প্রতিরোধ। লালনের অসংখ্য গানে মনের মানুষের প্রসঙ্গ উল্লিখিত হয়েছে। তিনি বিশ্বাস করতেন মনের মানুষ এর কোন ধর্ম, জাত, বর্ণ, লিঙ্গ, কূল নেই। সকল মানুষের মনে বাস করেন ঈশ্বর। সমাজের সকল নিপীড়ন, মানুষের প্রতিবাদহীনতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি-কুসংস্কার, লোভ, সামাজিক বিভেদ, আত্মকেন্দ্রিকতাকে তিনি তাঁর গানের মধ্যে তুলে এনে করেছেন প্রশ্নবিদ্ধ।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালি-খোকসা) আসনের সাংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনায় লালনের অহিংস মানব মুক্তির শিক্ষা ও আধ্যাত্মবাদ নিয়ে আলোচনা করেন লালন একাডেমির সাবেক সহ-সভাপতি আবদুর রশিদ চৌধুরী, লেখক, গবেষক, দৈনিক কুষ্টিয়া ও দ্য কুষ্টিয়া টাইমসের সম্পাদক ও প্রকাশক ড. আমানুর আমান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন,কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খায়রুল আলম, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) মুন্সী মো.মনিরুজ্জামান, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউল রহমান আতা, বিশিষ্ট লালন গবেষক গাজী মন্জুরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি আল-মামুন সাগর, জেলা শিল্পীকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম, কবি ও লেখক আলম আরা জুঁই।
মনে করা হয়ে থাকে সাধারণ কথ্য ভাষায় গানের মধ্য দিয়ে লক্ষ্য-ভেদী চিন্তা চেতনার যে সম্মিলন এটিই যুগে যুগে লালন বিষয়ে একটি সামগ্রিক আগ্রহ তৈরি করেছে ; লালনকে এককালীন প্রাসঙ্গিকতা থেকে সমকালীন প্রাসঙ্গিকতায় উত্তোরণ ঘটিয়েছে। এটি লালন দর্শনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দিক। লালনকে আমরা হয়তো এখনও পরিপূর্ণ আবিস্কার করতে সক্ষম হইনি। তবে যতটুকু বোঝা গেছে তাতে এটা নিশ্চিতই মনে হয়েছে লালন অপরিহার্য। ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ সমাজে, যেখানে সময়ে অসময়ে ধর্মের নামে উঠে আসে ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িকতা সেখানে লালন চর্চা পরম শান্তি এনে দিতে পারে।
Leave a Reply