December 22, 2024, 2:54 pm

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
কুষ্টিয়া ও মেহেরপুরে ভারত থেকে আনা ৪৪ কেজি গাঁজা উদ্ধার, আটক ৫ চুয়াডাঙ্গায় জামায়াত আমির/কোনো বিভক্তি নয়, ঐক্যই হোক এ জাতির সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধি আ.লীগকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না: হানিফের বিৃবতি পদ্মায় পানি বৃদ্ধি, পানিবন্দি ৪০ গ্রাম, নিম্নাঞ্চলে মৌসুমী ডাল ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা ১২০০ টাকা কেজি দরে প্রথম চালানে ভারতে গেল ১২ টন ইলিশ, ৪৯টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির জন্য ২ সদস্যর আহ্বায়ক কমিটি, বিলুপ্ত মিরপুর উপজেলা কমিটি/ যা বললেন জাকির সরকার জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের রোহিঙ্গা সংকট অবহিত করলেন ড. ইউনূস, সমাধানে ৩ প্রস্তাব ইবিতে নব নিযুক্ত উপাচার্য/ শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলাই তার স্বপ্ন আট ঘন্টার ব্যবধানে মাগুরা ও ঝিনাইদহে সড়কে নিহত ৫ নিউইয়র্কে তৌহিদ-জয়শঙ্কর বৈঠক/বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতি

নদীকৃত্য দিবসের প্রতিবেদন/ ফারাক্কার বিরুপ প্রভাব ও তিন হাজার দখলদার গিলে খেয়েছে কুষ্টিয়ার ৮ নদী

দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
এক সময়ের খরস্রোতা এখন প্রায় মৃত অথবা শীর্ণ খালে পরিণত হয়েছে কুষ্টিয়ার ৮টি নদী। কিছুদিন পর মানচিত্র থেকেই হয়তো উধাও হয়ে যাবে নদীগুলো। ভারতের ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাব, দখলবাজি আর সংস্কার না করার কারণে এই নদীগুলোর এমন পরিণতি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
দেশের প্রধান নদী পদ্মা। জেলার দৌলতপুর উপজেলার ভেতর দিয়ে এ নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পদ্মার অন্যতম শাখা গড়াই ও মাথাভাঙ্গা নদীর উত্পত্তিও এ জেলায়। ভারত পদ্মা নদীর উজানে ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করায় দেশের দীর্ঘ ও বৃহত্তম পদ্মা নদী আজ হুমকির মুখে। ঐতিহাসিক গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি হলেও নানা অজুহাতে ভারত পানির ন্যায্য হিস্সা দিচ্ছে না। এতে নদীর অবস্থা দিনকে দিন খারাপ হচ্ছে। নদীর কোথাও কোথাও এখন হাঁটু পানি। আর এরই প্রভাব পড়েছে গড়াই ও মাথাভাঙ্গা নদী এবং এর শাখা, উপশাখা নদী ও বিল হাওড়গুলোর ওপর।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ নদী দেশের উপকূলভাগে মিঠা পানির অন্যতম আধার। শুষ্ক মৌসুমে এ নদী শীর্ণকায় হয়ে পড়ে। ফলে উপকূলভাগ থেকে লোনা পানি উঠে আসে উজানের দিকে। এরই মধ্যে এ লবণাক্ততা মাগুরা জেলার মহাম্মদপুর পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রভ বন সুন্দরবনসহ উপকূলীয় জেলাগুলোর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ১৯৯৮ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়াই নদী খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। কিন্তু পরে ক্ষমতার পালাবদলের পর এ কাজের রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় বিগত বছরগুলোতে নদী আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। বর্তমান সরকার গত বছর থেকে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে গড়াই নদী পুনঃখনন প্রকল্প হাতে নিলেও তা কাজে আসছে না। শুষ্ক মৌসুম এলেই গড়াই পরিণত হচ্ছে মরা খালে। পদ্মা নদী থেকে মাথাভাঙ্গা নদীর উত্পত্তি জেলার দৌলতপুর উপজেলায়। শুষ্ক মৌসুমে পদ্মার পানিপ্রবাহ কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে মাথাভাঙ্গার উৎসমুখ শুকিয়ে যায়।
এদিকে পদ্মা, গড়াই ও মাথাভাঙ্গার মতো বড় নদীগুলোতে দিন দিন পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে এ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হিসনা, কালী, চন্দনা, সাগরখালী ও কুমারনদী। দৌলতপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হিসনা নদী আর শাখা নদী কুমার। এ নদী দুটির এখন করুণদশা। মাছ চাষের নামে স্থানীয় প্রভাবাশালীরা হিসনা নদীতে অসংখ্য বাঁধ দেওয়ায় এর পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
এ ছাড়া ওই উপজেলার মথুরাপুর, হোসেনাবাদ, আল্লার দরগা ও ভেড়ামারা শহরের কাছে ক্ষমতাধররা এ নদীর দুপাড় দখল করে বাড়ি ও দোকানপাট নির্মাণ করেছে। আর হিসনার শাখা কুমার নদীর পুরোটায় চলে গেছে দখলদারদের পেটে। ভেড়ামারা উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে চন্দনা। তবে পদ্মার শাখা এ নদীর অবস্থাও কুমার নদীর মতো। মিরপুর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সাগরখালি নদী। কয়েক বছর আগে খনন করে এর প্রাণ ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাতে কাজ হয়নি। প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছে এ নদীর দুপাড়।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে কুমার নদী (২)। গড়াইয়ের শাখা এ নদীটি বিলীন হওয়ার পথে। বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে নদীটিতে। ঝাউদিয়া ও বৈদ্যনাথপুর বাজারসংলগ্ন এলাকায় নদীর বড় অংশ দখল করে মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। নদীর অর্ধেক অংশ শুকিয়ে পানিপ্রবাহ থেমে গেছে। বর্ষায় এসব নদীতে পানি থাকলেও তলদেশ ভরাটের ফলে শুষ্ক মৌসুমে অধিকাংশ নদীতে পানি থাকে না। এসব নদীর বুকজুড়ে তখন চাষাবাদ হয়। এ অবস্থায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় নদীগুলো খনন করে পানিপ্রবাহ সচলের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, প্রশাসনের নজরদারির অভাবে অনেক স্থানে প্রভাবশারীরা নদীর বুকে পিলার দিয়ে বিভিন্ন পাকা স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। জলাধার সংরক্ষণ আইন থাকলেও কেউ এর তোয়াক্কা করছেন না। নদ-নদী ও খাল-বিল দখল করে একের পর এক অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে।
সরকারি এক হিসাব বলছে, কুষ্টিয়ায় নদ-নদী ও খাল-বিল দখলকারীর সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। আবার নদ-নদী দখলের পাশাপাশি সমানতালে চলছে নদী দূষণের পাল্লা। কল-কারাখানার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদ-নদীতে। কোথাও কোথাও ড্রেনের সংযোগ এমনকি মলমূত্রও গিয়ে মিশছে এসব নদীতে।
দৌলতপুর থেকে শুরু করে খোকসা উপজেলার মাঝপাড়া পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার বিস্তৃত পদ্মা নদী। এর প্রধান শাখা গড়াই নদী ৫০ কিলোমিটার, গড়াই নদীর শাখা কালী নদী ছেঁউড়িয়া থেকে ৩৫ কিলোমিটার, সাগরখালী নদী ভেড়ামারা থেকে ১৫ কিলোমিটার এবং হিসনা নদী ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এক যুগ আগেও জেলার এসব নদ-নদীগুলোর যৌবন ছিল। কিন্তু কালের পরিক্রমায় দখল এবং দূষণের কারণে নদীগুলো এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি নদীর এখন পানি প্রবাহ নেই।
দৌলতপুরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে পদ্মা থেকে উৎপন্ন মাথাভাঙ্গা ও হিসনা নদী। কিন্তু দখল ও দূষণের কারণে নদী দুটি এখন চরম অস্তিত্ব সংকটে। নদীর বেশিরভাগ জায়গাই এখন দখলদারদের কবলে। বর্ষা মৌসুমে নদী দুটির কোথাও কোথাও পানি দেখা গেলেও শুষ্ক মৌসুমে একেবারে মরা খালে পরিণত হয়। কোথাও কোথাও নদীর বুকে তামাক ও ধানচাষ করা হচ্ছে।
ভেড়ামারা উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে চন্দনা নদী। পদ্মা থেকে উৎপন্ন হওয়া এক সময়কার চন্দনা নদীর কোনো অস্তিত্ব এখন আর চোখে পড়ে না। প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে নদীর বেশিরভাগ।
মিরপুর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সাগরখালী নদী। নদীটি এখন মৃতপ্রায়। কয়েক বছর আগে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে খনন করে নদীটি আবার সচল করার উদ্যোগ নিলেও তাতে কোনো সুফল মেলেনি। নদীর দীর্ঘ এলাকা এখন পানিশূন্য।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা দিয়ে বয়ে গেছে কুমার নদ। গড়াইয়ের শাখা এ নদটি এখন বিলীন হওয়ার পথে। বাঁধ দিয়ে মাছচাষ করা হচ্ছে নদটিতে। ঝাউদিয়া ও বৈদ্যনাথপুর বাজার সংলগ্ন এলাকায় নদীর বড় অংশ দখল করে মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে।
কুমারখালীর ডাকুয়া ও কালী নদী শুকিয়ে এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। খোকসা উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সিরাজপুর হাওর নদী। গড়াইয়ের অন্যতম এ শাখা নদীটি শুকিয়ে গেছে বেশ কয়েক বছর আগেই। নদীর দুই অংশে দুটি কালভার্ট ও স্লুইস গেটে অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ নির্মাণের ফলে নদী তার স্বাভাবিক অবস্থা হারিয়ে ফেলেছে।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, কুষ্টিয়ার নদ-নদী ও খালের বিভিন্ন জায়গায় অন্তত তিন হাজার দখলদার রয়েছে। ফলে নদ-নদী ও খালের প্রবাহ এখন আর স্বাভাবিক নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসন পৃথকভাবে এসব দখলদারদের চিহ্নিত করেছে।
জেলার ছয়টি উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়া কার্যালয় সরেজমিন পরিদর্শন করে এ তালিকা তৈরি করেছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কার্যালয়ের একটি সূত্রের দাবি, কয়েক বছর আগের করা এ তালিকার বাইরে বর্তমানে দখলদারদের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পাওয়া দখলদারদের তালিকায় রয়েছে পদ্মা নদী, গড়াই নদী ও কয়েকটি বিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকায় এসব নদ-নদীর বাইরেও দখলে রয়েছে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের ছোট-বড় খালগুলো। তবে সবচেয়ে বেশি দখলদার রয়েছে ভেড়ামারার হিসনা নদীতে। সেখানে নদী দখল করে পাকা দালানও করা হয়েছে।
সরেজমিন হিসনা নদী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীর উভয় পাড়ে বাড়ি ও দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। নদীর বুকে পানি না থাকায় কোনো কোনো জায়গায় ধানচাষ করা হয়েছে। দেখে বোঝার উপায় নেই এটা একটা নদী।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এক সময় হিসনা নদীতে বড় বড় ট্রলার চলতো। তবে নদীর বর্তমান অবস্থা দেখে সে কথা কেউ বিশ্বাস করবে না
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকা অনুযায়ী, পদ্মা নদী, গড়াই নদী ও সেচ প্রকল্পের ছোট-বড় খাল দখল করে আছে অন্তত দুই হাজার ৯২১ জন দখলদার। বেশিরভাগই পাকা ও আধাপাকা টিনের বসতঘর। কোনো কোনো জায়গায় টিনের দোকান রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে অবৈধভাবে দখল করে বাস ও ব্যবসা করে আসছেন তারা।
জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলাম বলেন, নদ-নদী ও খাল দখলকারীদের তালিকা আমাদের কাছে রয়েছে। যেকোনো উপায়ে নদ-নদী ও খালের প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দিন জানান, করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে জেলায় উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রয়েছে। তবে খুব শিগগিরই এসব অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন..


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

MonTueWedThuFriSatSun
      1
30      
1234567
891011121314
15161718192021
293031    
       
     12
24252627282930
       
2930     
       
    123
       
   1234
26272829   
       
293031    
       
    123
25262728293031
       
  12345
27282930   
       
      1
9101112131415
3031     
    123
45678910
11121314151617
252627282930 
       
 123456
78910111213
28293031   
       
     12
3456789
24252627282930
31      
   1234
567891011
19202122232425
2627282930  
       
293031    
       
  12345
6789101112
       
  12345
2728     
       
      1
3031     
   1234
19202122232425
       
293031    
       
    123
45678910
       
  12345
27282930   
       
14151617181920
28      
       
       
       
    123
       
     12
31      
      1
2345678
16171819202122
23242526272829
3031     
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
242526272829 
       
© All rights reserved © 2021 dainikkushtia.net
Design & Developed BY Anamul Rasel