December 22, 2024, 8:58 am
ড. আমানুর আমান, সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক কুষ্টিয়া ও দ্য কুষ্টিয়া টাইমস/
বর্তমান বাস্তবতায় অনেক আশাব্যঞ্জক একটি খবর। কিন্তু অনেক আশাব্যঞ্জক ঘটনা অতীতে অনেক ভাবে নিরাশ করেছে জনগনকে। এই নিরাশাটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রেই বেশী ঘটেছে। অভিজ্ঞতা এমনিটই বলেছে বারবার। অতীতেও কোন কারন ছাড়াই বেড়ে যাওয়া নিত্যপণ্যের দামে লাগাম দিতে ও অসৎ-অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম ঠেকাতে নানাবিধ উদ্যোগ সাধারণ জনগনের পক্ষে নেয়া হলেও কার্যকর হয়নি। ফলে যে আম সেই আঁটিই দেখেছে জনগন। এবারও একই অবস্থা সামনে এসেছে। সরকারও দ্রæত উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু কতটুকু সেটা সাধারণ জনগনের জন্য কাজে লাগবে তা নিয়ে একইরকম দোলাচলে রয়েছে সবাই।
সাম্প্রতিক সময়ে ভোজ্যতেলের দাম কয়েক দফা বেড়েছে। সর্বশেষ গত ৭ ফেব্রুয়ারি সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৭ টাকা বাড়িয়ে বোতলজাত সয়াবিনের এক লিটার বোতলের ১৬৮ টাকা, ৫ লিটারের বোতলের দাম ৭৯৫ টাকা এবং খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ১৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর পাম তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ১৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে বোতলজাত সয়াবিন তেল নির্ধারিত দরে বিক্রি হলেও খোলা সয়াবিন ও পাম তেল বিক্রি হচ্ছে বেশি দরে। আর খোলা সয়াবিন পাওয়া যাচ্ছে না। তবে সব ধরনের তেলের সরবরাহ কম। এর মধ্যে পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো গত ২৭ ফেব্রুয়ারি লিটারে আরও ১২ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে।
আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সরকার ভোজ্যতেল, চিনি ও ছোলার ওপর থেকে সরকারের আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। সরকারের পক্ষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। মূলত রমজান মাসে যেসব পণ্য বেশি প্রয়োজন, সেসব পণ্যের শুল্ক প্রত্যাহার হয়েছে। কারণ সবাই এগুলোর ভোক্তা। সয়াবিনের উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং ভোক্তাপর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। মোট ২০ শতাংশ। এর মধ্য দিয়ে এসব পণ্যের দাম অন্তত ২০ শতাংশ কমবে বলেও জানান তিনি।
এখন উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং ভোক্তাপর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করায় এসব পণ্যের দাম ২০ শতাংশ কমছে। এটা জনগনের জন্য খুবই সুখের খবর। জনগণের প্রত্যাশা – প্রতিটি পণ্যের দাম তাহলে শতকরা ২০ টাকা কমছে। এখন তাদের প্রশ্ন- কবে থেকে বিদ্যমান দামের তুলনায় ২০ শতাংশ কম দামে এসব পণ্য তারা কিনতে পারবেন। ক্রেতারা কবে থেকে সরকারের শুল্ক প্রত্যাহারের এই সুবিধা পাচ্ছেন? আদৌ পাবেন কিনা?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে এখন উচ্চদামে লাগামহীনভাবে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। প্রতিলিটার সয়াবিন তেল এখন কমবেশি ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় পিছিয়ে নেই চিনি এবং মসুর ডাল। শবে বরাত ১৮ মার্চ পালিত হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ দৌড়ে অংশ নেবে ছোলা। সব মিলিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।
কথা হলো সরকার ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে। এটি অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। তবে এর সুবিধা যদি সাধারণ মানুষ না পেয়ে গুটিকয়েক ব্যবসায়ী পায় তাহলে তো আর কিছু হলো না। ভ্যাট প্রত্যাহারের ফলে সরকার রাজস্ব হারাবে। একদিকে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি, অপরদিকে যদি সাধারণ মানুষ এর সুবিধা না পায় তাহলে এই ভ্যাট প্রত্যাহার করে লাভ কী? মানুষ যাতে এর সুবিধা পায়, উপকৃত হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, ব্যবসায়ীরা ভ্যাট মুক্ত পণ্য আমদানি করে এর সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে নানা ধরনের ছলচাতুরির আশ্রয় নেবে। এটি সরকারকে মনে রাখতে হবে।
ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীরা উল্টোসূর শোনাতে শুরু করে দিয়েছে। তার একই বচন বের করছে গলা থেকে। তাদের ভাষায় বর্তমানে যেসব পণ্য বাজারে বিক্রি হচ্ছে সেসব পণ্য তো ভ্যাটসহ বেশি দামে কেনা। সরকার ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে শুনেছি, তবে এখনই ক্রেতারা এ সুবিধা পাচ্ছেন না। আমদানিকারকরা ভ্যাটমুক্ত পণ্য বাজারজাত করার পর এই সুবিধা ক্রেতারা পাবেন। তার আগে নয়। কবে নাগাদ এ সুবিধা ক্রেতারা পাচ্ছেন- জানতে চাইলে তিনি জানান, সেটা নির্ভর করছে ভ্যাটমুক্ত পণ্য কবে আসছে তার ওপর।
কিন্তু দুঃখের কথা হলো আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশীয় বাজারে পণ্যের দাম বাড়তে তো সময় লাগে না।
ভোজ্যতেলের আগে গত সপ্তাহে অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক্ক ১০ শতাংশ কমিয়েছে সরকার। জনগন এখনও কি তার সুবিধা পেয়েছে ? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু ছাড় দিলেই হবে না, ছাড়ের সুবিধা যাতে ভোক্তারা পান সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। মনিটরিং কঠোর করতে হবে। সরকার যে পরিমাণ ভ্যাট ও শুল্ক্ক কমিয়েছে, সেই হারে পণ্যের মূল্য কমাতে হবে। কমানো হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। যেন ভ্যাট কমানোর সুফল ভোক্তারা পান তার জন্য নিবিড় তদারকির প্রয়োজন। কারণ বাজারে সিন্ডিকেট রয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে নানা ধরনের কারসাজি হয়। এসব সিন্ডিকেট, কৃত্রিম সংকটের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে।
যোগাযোগ করা হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জানার এ সিদ্ধান্তে জনসাধারণ কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন।
আনেক কর্মকর্তা জানান ভোজ্যতেলে আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট পরিশোধ হয় সবচেয়ে বেশি। এরপর উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ে আমদানি পর্যায়ের পরিশোধ করা ভ্যাট সমন্বয় করে বাকিটা দেওয়া হয়। উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ে সবমিলিয়ে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলে ৮ থেকে ৯ টাকা পর্যন্ত ভ্যাট হয়। খোলা সয়াবিন ও ভোজ্যতেলে এ ভ্যাট আরও কম। কারণ খোলা তেলের বিক্রি পর্যায়ে ভ্যাট আদায় হয় না।
Leave a Reply