October 30, 2024, 8:03 pm

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
কুষ্টিয়া ও মেহেরপুরে ভারত থেকে আনা ৪৪ কেজি গাঁজা উদ্ধার, আটক ৫ চুয়াডাঙ্গায় জামায়াত আমির/কোনো বিভক্তি নয়, ঐক্যই হোক এ জাতির সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধি আ.লীগকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না: হানিফের বিৃবতি পদ্মায় পানি বৃদ্ধি, পানিবন্দি ৪০ গ্রাম, নিম্নাঞ্চলে মৌসুমী ডাল ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা ১২০০ টাকা কেজি দরে প্রথম চালানে ভারতে গেল ১২ টন ইলিশ, ৪৯টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির জন্য ২ সদস্যর আহ্বায়ক কমিটি, বিলুপ্ত মিরপুর উপজেলা কমিটি/ যা বললেন জাকির সরকার জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের রোহিঙ্গা সংকট অবহিত করলেন ড. ইউনূস, সমাধানে ৩ প্রস্তাব ইবিতে নব নিযুক্ত উপাচার্য/ শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলাই তার স্বপ্ন আট ঘন্টার ব্যবধানে মাগুরা ও ঝিনাইদহে সড়কে নিহত ৫ নিউইয়র্কে তৌহিদ-জয়শঙ্কর বৈঠক/বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের অজানা ইতিহাস ও আজকের প্রেক্ষাপট

অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু/
(লেখক: সিন্ডিকেট সদস্য ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়,বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি,সচিব,শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট,শিক্ষা মন্ত্রনালয়, সাধারণ সম্পাদক, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ)
ফেব্রুয়ারি বাঙালির গর্ব ও অহংকারের মাস। বায়ান্নের ২১ ফেব্রুয়ারিতেই বাঙালি জাতির মুক্তির প্রথম বীজ বপিত হয়েছিল। বাংলা ভাষা এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে সারা বিশ্বে সমাদৃত। যাদের বুকের তাজা রক্তে বাংলা আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাদের স্মরণে এখনো দেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি। আবার কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করতে যেয়ে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটেছে। আজ থেকে ৩৫ বছর পুর্বে ১৯৮৭ সালে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বাধা উপেক্ষা করে ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার নির্মাণ করায় আমাদের কয়েকজন ছাত্রনেতাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল। এ ঘটনায় মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের বছরের পর বছর হয়রানি করা হয়েছিল।
ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। ইসলামি সম্মেলন সংস্হা (ওআইসি)’র আর্থিক সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯৭৯ সালে প্রথমে কুষ্টিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল । এরশাদ সরকার ১৯৮৩ সালের ১৮ জুলাইয়ের এক আদেশে রাজধানী ঢাকার অদূরে গাজীপুরের বোর্ড বাজারে (বর্তমান জাতীয় ও উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস) বিশ্ববিদ্যালয়টি স্হানান্তর করে। ১৯৮৫-৮৬ শিক্ষা বর্ষে ৩০০ জন ছাত্র নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করে। সে সময়ে বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির নুন্যতম যোগ্যতা ছিল ৪ পয়েন্ট। শুধুমাত্র ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল ৫ (পাঁচ) পয়েন্ট । ফলে দেশের সর্বোচ্চ মেধাবী ছাত্ররাই এখানে ভর্তির সুযোগ পেতো। ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ছিলেন ড. এন এম মমতাজ উদ্দিন চৌধুরী।
অনেক স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বাঙালি সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধ চেতনা বিরোধী কর্মকান্ডে আমরা ব্যথিত হই। ক্যাম্পাসে তখন ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও মসজিদ ভিত্তিক একটি প্রতিক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনকে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের পৃষ্ঠপোষকতা আমাদের বিক্ষুব্ধ করে। এছাড়াও কোন অনুষ্ঠানে হাতে তালি দেওয়ার পরিবর্তে ‘মারহাবা’,স্বাগতম শুভেচ্ছার পরিবর্তে ‘আহলান ওয়া ছাহলান’ বলা,বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বাধ্যতামূলক ১০০ নম্বরের ইসলামী ও আরবী শিক্ষা গ্রহন, বিশ্ববিদ্যালয় সকল প্রকার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করা , ছাত্রী ও অমুসলিম শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ না দেওয়া, ভর্তি ক্ষেত্রে মাদ্রাসা ছাত্রদের জন্য ৭৫% আসন সংরক্ষিত রাখার নামে মুলত বিশ্ববিদ্যালয়টিকে একটি বড় আকারের মাদরাসায় পরিণত করার জন্য মহল বিশেষের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মত। ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড , ছাত্ররাজনীতি ও সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকায় এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করারও তখন সুযোগ ছিল না।
একটি বিশ্ববিদ্যালয় হবে মুক্ত জ্ঞান চর্চার তীর্থ স্হান। দেশের সর্বোচ্চ মেধাবী ছাত্ররা এসব কূপমন্ডুকতা মেনে নিতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কর্মকান্ড চালু হওয়ার কয়েক মাসর পরই আসে মহান বিজয় দিবস। ১৯৮৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বিজয় দিবসে কর্তৃপক্ষ কোন কর্মসূচি গ্রহণ না করাকে কেন্দ্র করে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বপ্রথম প্রকাশ্যে ছাত্র বিক্ষোভের সূচনা হয়। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানালে উপাচার্য মোমতাজ উদ্দিন চৌধুরী চরম ক্ষুব্ধ হন। স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনকে তিনি অনৈসলামিক ফতোয়া দেন। তিনি স্মৃতি সৌধে যারা ফুল দিতে যাবে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার হুমকি দেন । আমরা বহিষ্কারের হুমকি উপেক্ষা করে নিজেরাই একটি ট্রাকের ব্যবস্থা করে সাভারে স্মৃতিসৌধে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করি।
এর কয়েকদিন পর মহান শহীদ দিবস সামনে রেখে ১৯৮৭ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম শহীদ দিবসের পূর্বেই আমরা ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য উপাচার্য বরাবর একটি আবেদন করি। উক্ত আবেদন জমা দিতে গেলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং আমাদের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করেন। এ সময় তাঁর সাথে আমাদের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় এবং পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেন। তিনি আমাদের কয়েকজনের নাম ধরে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। তিনি ঘোষণা দেন ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ ও ফুল দেওয়ার নামে কোন অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড বরদাস্ত করা হবে না। উপাচার্য আমাদের সুস্পষ্ট জানিয়ে দেন শহীদ মিনার নির্মাণের নামে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা মুর্তি পুঁজা করবে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হবে। উপাচার্যের এই ঘোষণায় ধর্মান্ধ কতিপয় শিক্ষক ও উগ্র সাম্প্রদায়িক ছাত্র সংগঠনের নেতা কর্মীরা খুশি হলেও প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সুষ্পষ্ট জানিয়ে দেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ না নিলে আমরা ছাত্ররা নিজ উদ্যোগেই ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার নির্মাণ করব। এতে উদ্ভুত যে কোন পরিস্থিতির দায় দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই বহন করতে হবে।
আমরা ২০ ফেব্রুয়ারি,১৯৮৭ ইং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করি । ভাষা সৈনিক এডভোকেট গাজীউল হককে প্রধান অতিথি করে শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্হাপনের কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। অবস্হা বেগতিক দেখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আকস্মিকভাবে ১৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষনা করে এবং আবাসিক ছাত্রদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। কিন্তু আমরা সেই নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করে হলেই অবস্থান করি। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ২০ তারিখের পরিবর্তে ১৯ তারিখ রাতের মধ্যেই শহীদ মিনারের ভিত্তি প্রস্থরের পরিবর্তে ছোট খাটো করে হলেও শহীদ মিনারে একটি কাঠামো নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের পাশে শহীদ মিনারের স্থান নির্বাচন করা হয়। ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৭ ইং সন্ধায় আমরা নিজেরাই আওয়ামী লীগ সহ স্হানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় ইট, বালু, রড,সিমেন্ট সংগ্রহ করে শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ শুরু করি। উপাচার্যের নির্দেশে হল প্রভোস্ট তাহির আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মচারীকে সাথে নিয়ে বাধা প্রদান করতে এলে ছাত্রদের প্রতিরোধের মুখে তিনি পিছু হটেন। এ সময় উত্তেজিত ছাত্ররা তাহির আহমেদের বাসায় হামলা চালায় (উক্ত ঘটনায় পরবর্তীতে তাহির স্যার আমাকে প্রধান আসামী করে আমাদের ১২ জনের বিরুদ্ধে জয়দেবপুর থানায় একটি শ্লীলতাহানীর অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন)।
এহেন পরিস্হিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে চেষ্টা চালায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শহীদ মিনার নির্মাণকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপ ছাত্রের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের আশংকা ব্যক্ত করে শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ বন্ধে পুলিশের সহায়তা কামনা করে। ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক একটি ছাত্র সংগঠনের সন্ত্রাসীরা শহীদ মিনার নির্মাণে বাধা দেওয়ার পায়তারা করলেও পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পেরে তারা আর সামনে আসেনি। বিপুল সংখ্যক পুলিশ ক্যাম্পাসে উপস্হিত হলেও স্বতঃস্ফুর্ত ছাত্রদের অংশগ্রহণে শহীদ মিনার নির্মাণ করতে দেখে তারা নিরব ভূমিকা পালন করে। আমরা ছাত্ররা সারারাত জেগে যুদ্ধ জয়ের আনন্দে শহীদ মিনার নির্মাণ করতে থাকি। লাঠি হাতে একদল ছাত্র চারিপাশে পাহাড়া দিচ্ছে, কেউ ইট,কেউ বালি,কেউবা পানি এগিয়ে দিয়ে রাজমিস্ত্রীকে সহায়তা করছে,আরেক গ্রুপ হলের বাবুর্চির সহায়তায় খেজুরি রান্না করছে এ এক অভাবনীয় দৃশ্য। ভোর হতে হতেই শহীদ মিনারের তিনটি স্তম্বের উপর একটি কাঠামো আমরা তৈরি করি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের রক্ত চক্ষু ও শত বাধাবিঘ্ন উপেক্ষা করে শহীদ সালাম,বরকত, রফিক, জব্বার সহ নাম না জানা ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের এক ঝাক তারুণ্যদীপ্ত, প্রতিবাদী ছাত্ররা এক নব অধ্যায়ের সূচনা করে। সারারাত জেগে শহীদ মিনার নির্মাণ করতে যেয়ে ক্লান্ত নবপ্রজন্মের ভাষা সৈনিকরা আমরা এক সাথে সবজি ও ডিম খেচুরি দিয়ে ভোরে নাস্তা করি। নিজেদের রান্না করা সেই খিচুরির অসাধারণ স্বাদ এখনো জিহ্বায় লেগে আছে।
পরদিন ২০ ফেব্রুয়ারি প্রখ্যাত ভাষা সৈনিক এডভোকেট গাজীউল হক শহীদ মিনারটির উদ্ধোধন করেন। এ সময় কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরদিন জাতীয় সকল পত্রিকায় গুরুত্বের সাথে সংবাদটি প্রকাশিত হয়। একই সাথে উপাচার্য মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মিডিয়ায় এক সাক্ষাতকারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার নির্মাণ করায় আমাদের চারজন ছাত্রনেতাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কারের সিদ্ধান্তের কথা জানান।
শহীদ মিনার নির্মাণের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের বহিস্কারের ঘটনায় সারাদেশে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। জাতীয় সংসদের তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি’র চেয়ারম্যানপারসন বেগম খালেদা জিয়া সহ প্রগতিশীল বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন বহিস্কারের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে থাকে। এই আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে দেখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহিস্কারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। কিন্তু এর কিছুদিন পরই ভিন্ন ভিন্ন ইস্যুতে শহীদ মিনার নির্মাণের সাথে জড়িত আমাদের ২০ জনের প্রমোশন বাতিল এবং কয়েকজনকে বহিষ্কার করে।
এই ঘটনায় ছাত্র আন্দোলনে দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে। মাসের পর মাস ক্যাম্পাস বন্ধ থাকে। এ সময় ক্যাম্পাসে এক ভুতরে অবস্হা বিরাজ করতে থাকে। এমতাবস্থায় সরকার উপাচার্য মমতাজ উদ্দিন চৌধুরীকে অপসারন করতে বাধ্য হয়। নতুন উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হন দেশের বরেন্য শিক্ষাবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম। তিনি এসেই ব্যাপক আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি উদযাপন করেন। আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী,অমুসলিম শিক্ষার্থীদের ভর্তির ব্যবস্থা করেন। তিনি বাংলা,ইংরেজি,লোকপ্রশাসন সহ আধুনিক বিভাগ সমুহ চালু করেন।
উল্লেখ্য একদিন যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের অভিযোগে বহিস্কার হয়েছিলাম দীর্ঘদিন পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এক যুগ পর কুষ্টিয়ায় স্থানান্তরিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ২০০০ সালের ৫ ডিসেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ মিনার উদ্ধোধন করেছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে হেলিকপ্টারে তাঁর সফর সঙ্গী হয়ে সেই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের পরম সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। সে এক অন্য রকম আনন্দ,অন্যরকম অনুভূতি।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আজ শুধু শহীদ মিনারই নির্মাণ নয়, সংস্কৃতি চর্চারও চারণ ভূমিতে পরিনত হয়েছে। ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় সকল কুপমুন্ডকতার উর্ধ্বে থেকে মুক্ত জ্ঞান চর্চার তীর্থ ভূমিতে পরিণত করতে আশির দশকে যে লড়াই আমরা শুরু করেছিলাম আমাদের সেই স্বপ্ন পুরোপুরি সফল না হলেও অনেকটা কাছাকাছি পৌঁছেছে সেটাই আমাদের শান্তনা।ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আজ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। ২১ ফেব্রুয়ারি শাহাদাতবরণকারি সালাম,বরকত,রফিক,জব্বার,শফিউর সহ সকল শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

 

নিউজটি শেয়ার করুন..


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

MonTueWedThuFriSatSun
      1
30      
1234567
891011121314
15161718192021
293031    
       
     12
24252627282930
       
2930     
       
    123
       
   1234
26272829   
       
293031    
       
    123
25262728293031
       
  12345
27282930   
       
      1
9101112131415
3031     
    123
45678910
11121314151617
252627282930 
       
 123456
78910111213
28293031   
       
     12
3456789
24252627282930
31      
   1234
567891011
19202122232425
2627282930  
       
293031    
       
  12345
6789101112
       
  12345
2728     
       
      1
3031     
   1234
19202122232425
       
293031    
       
    123
45678910
       
  12345
27282930   
       
14151617181920
28      
       
       
       
    123
       
     12
31      
      1
2345678
16171819202122
23242526272829
3031     
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
242526272829 
       
© All rights reserved © 2021 dainikkushtia.net
Design & Developed BY Anamul Rasel