December 22, 2024, 2:52 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
একটি সুন্দর প্রাপ্তি দিয়ে শুরু হলো কুষ্টিয়াবাসীর নতুন বছর। নতুন বছর এবং আগামী দিনগুলো এ প্রাপ্তির একটি প্রত্যক্ষ ফল ভোগ করবে সমগ্র দেশবাসী। সুন্দর প্রাপ্তিটি হলো কুষ্টিয়ার গর্বিত মাটির এক সন্তান বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়ের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। তিনি শপথ নিয়েছেন। তিনি হলেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। আজ শুক্রবার বঙ্গভবনে নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। তিনি দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি।
বিকেল ৪টায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাকে শপথবাক্য পাঠ করান।
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বাংলাদেশের আইন অঙ্গনে এক বিশেষ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তিনি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার রমানাথপুর গ্রামে তাঁদের জন্ম। তাঁরা বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তাঁদের পিতার নাম মরহুম আব্দুল গফুর মোল্লা ; মাতা মরহুমা নূরজাহান বেগম।
সেই সত্য যা রচিবে তুমি/
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকর উঠে আসা কোন বিস্ময়ের স্ফুলিঙ্গে সহসা জ্বলে উঠা কোন আকস্মিক ঘটনা নয়। যাদুর কাঠিতেও নয় ; তাঁর সাফল্যের সুর এক পরিশ্রান্ত সময়কে ছেদ করেই। যার পেছনে দীর্ঘ ইতিহাস। যে ইতিহাস সংগ্রামের ; অবিশাস্য সে সংগ্রাম; সেই কবে থেকে, একেবারে শুন্য থেকেই যে সংগ্রামের শুর“ ; অজ পাড়া গাঁয়ের এক মধ্যবিত্তের বেসাতী থেকে।
মধ্যবিত্তের সাধ-সাধ্যের বৈষম্যপূর্ণ লড়াই কে না জানে ! এখানে তো সেইসব দৃশ্যই অভিনীত হয় কেবল দৃশ্যপট যে দৃশ্যগুলো তৈরি করে ; দৃশ্য তৈরির প্রয়োজন পড়ে না। পিতার শুভ্ররন্ধ্রে সন্তানদের নিয়ে ঘিরে থাকা স্বপ্নের দৃশ্যপট, মায়ের আঁচল জুড়ে মায়াবী পর্দার দুলুনি ; সবই চির চেনা। এখানে লড়াইটাও চেনা ; একেবারে অষম ; সীমাবদ্ধতার সকল সুত্রও চেনা ; তাই প্রস্তুতি নিয়েই লড়াই।
খুব বেশী স্বচ্ছলতা নয় ; আবার অস্বচ্ছছলতায় স্থানচ্যুতির ঘোর নিয়তি এমনটিও নয়। তবে বাঁকে বাঁকে ছিল জটিল প্রদাহের স্ফোটিক অবিরাম। মরহুম আব্দুল গফুর মোল্লা তাঁর সন্তানদের নিয়ে এমনই এক সংগ্রামের সুচনা করেছিলেন ; অনেকটা কুন্ডুলীপাকানো কালো ধোঁয়ার আড়াল থেকে ; যা ছিল নিঃশব্দ ; একাকীত্বে ঠাসা ; । দিন থেকে রাত, রাত থেকে দিন ; পথ অফুরান্ত, কণ্টকাকীর্ণ; পাংশুটে আর্থিক প্রবাহ প্রতিনয়তই শাসিয়েছিল। কিন্তু কোন বাধ সাধতে পারেনি। ক্ষেত্র বিশেষে উল্টোই হয়েছিল বোধহয় ; শোক থেকে যেমন শক্তি উত্থিত হয়, বাধা থেকে যেমন স্রোত হয়ে উঠে আরো প্রবল।
এ যেন ———————-
—-ক্রুশ কাঁধে নিয়ে চলা টলষ্টয়
অথবা
শেকভের শোর্কাতরা তারপরও যেভাবে গেয়ে যায় জীবনের গান
উদ্যানে ভরে উঠে স্বপ্নের পাখিরা
হাঁ ঈশ্বর ! যে স্বপ্ন তুমি নিজেও কখোনও দেখনি \
মরহুম গফুর মোল্লা ছিলেন এক সংগ্রামী প্রাগ্রসর চিন্তা-চেতনার মানুষ। কোমলে-কঠোরে মেশানো এক দুরাভাসী বিবেকের কথক ; যা ছিল তার সন্তানদের জন্য ছিল প্রধান প্রেরণা। তাঁর অন্য আরেক মহান পরিচয় হলো তিনি ছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধের এক সংগ্রামী সংগঠক। দেশ মাতৃকার প্রতি যার দায় ছিল বৃক্ষের সাথে মাটির সম্পর্কের মতো।
অন্যদিকে এই পথকে যিনি আঁচল বিছিয়ে সহজ করেছিলেন তিনি হলেন মহীয়সি জননী মরহুমা নূরজাহান বেগম। দুঃখ-বেদনা, অভাব-অভিযোগ, রোগ-শোক যার কাছে ছিল তু”ছ। তাঁর স্নেহের পরশ, তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম, তাঁর কামনা-বাসনা এতই তীব্র ছিল যে অফুরন্ত, কণ্টকাকীর্ণ পথ হয়ে উঠত কুয়াশা কাটা লাল সুর্যের সন্মোহন ; রোদ চকচক ভোরের আলো। তাঁর বলিষ্ঠ চিন্তা-চেতনা, সন্তানদের ঘিরে তেজি সংকল্প খুবই সহজ করেছিল—–এক থেকে দুই, দুই থেকে চার। সফলতার ছকটি এখন আঁকতে গেলে এমনই হবে।
এও তো সেই ————-
আমাদের জননীরা আমাদের নদীর মতোই
আদিগন্ত স্নেহ আর প্রেমের অর্পণা
বাংলার মায়েরাও প্রকৃতি আর প্রেমের মতো
ত্যাগ-তিতিক্ষায় ঠিক যেন নদীর সন্ধি \
কিন্তু সত্যিই পুরো বিষয়টি সহজ ছিল না মোটেও। প্রতিটি ক্ষনই ছিল ঝুঁকির ; ছিল পিছলে যাওয়ার এক দার“ন ভয়। কিন্তু সবই এখন ইতিহাসের গহব্বরে কোথাও। সফলতার সাত সমুদ্র নয় ; মায়াবী স্বপ্নের এ এক বাস্তব ফসল। তাঁরা নেই ; তবে তাঁদের সাতটি সন্তানই এখন এক অনুকরণীয় আলোর পথ।
সামনে আরো সময় : তবে এটি সময়ের সাথে সেই কোন অষম সংগ্রাম নয় ; এটি হলো সময়ের উপর সওয়ার হয়ে চলা। সফলতাকে জীবনের সাথে আরো বেশী প্র্ফুটিত হতে দেয়া। জয় হোক স্বপ্নের।
Leave a Reply