October 30, 2024, 9:21 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
আজ ২২ নভেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্মপ্রকাশের ৪৩ বছর। ১৯৭৯ সালের এই দিনে প্রতিষ্ঠা পায় স্বাধীনতার পর প্রথম এবং দেশের সপ্তম পাবলিক এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। এই ধীর্ঘ সময়ে এই বিশ^বিদ্যালয়ের জন্য সফলতা ব্যর্থতা দুটিই আছে। অবকাঠামো ও একাডেমিক এ দুটি বিষয়ে এখনও এই বিশ^বিদ্যালয়ের রয়েছে প্রচুর সীমাবদ্ধতা।
১৯৭৭ সালের ১ জানুয়ারি প্রফেসর এম এ বারীকে সভাপতি করে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি স্কিম ৭৭ গঠন করা হয় যার সুপারিশে ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহের মাঝামাঝি শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে ১৭৫ একর জমির ওপর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল। ১৯৮০ সালে জাতীয় সংসদে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯৮০/৩৭ পাস হলে ১৯৮১ সালের ৩০ জানুয়ারি ড. মমতাজ উদ্দীন চৌধুরীকে এর প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগ দেয়া হয়।
তৎকালীন সেনাশাসক এরশাদ ১৯৮৩ সালের ১৮ জুলাইয়ের এক আদেশে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে গাজীপুরের বোর্ডবাজারে স্থানান্তর করার পর কুষ্টিয়ার আপামোর ছাত্রজনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন, প্রেসিডেন্ট এরশাদ কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে জনসভা করতে এসে কুষ্টিয়াবাসীর ভয়াবহ বিক্ষোভের মুখে পড়ে জুতা দর্শন করেই ফিরে যান। এরশাদ পতনের পূর্বাভাসে ১৯৯০ সালের ২ জানুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে বোর্ডবাজার থেকে কুষ্টিয়ায় স্থানান্তরের ঘোষণা আসে।
১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রথমবারের মতো ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ছাত্রছাত্রী ভর্তির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অস্থায়ীভাবে কুষ্টিয়ার ম্যাটস ও পিটিআইতে বিশ^দ্যিালয়টি কার্যক্রম চালু করে। ১৯৯২ সালের ১ নভেম্বর মূল ক্যাম্পাসে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কাজ শুরু হয়।
তার আগে ১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষে দুটি অনুষদের চারটি বিভাগে ৩ শত ছাত্র ভর্তির মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিশ^বিদ্যালয়টির একাডেমিক যাত্রা। ১৯৮৬ সালের ২৮ জুন বিশ^বিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়টির ৮টি অনুষদের ৩৪টি বিভাগে ১৫ হাজার ৩৮৪ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন, যাদের মধ্যে ছাত্র ১০ হাজার ২৯১ এবং ছাত্রী ৫ হাজার ৯৩ জন। বর্তমানে ৩৯০ জন শিক্ষক শিক্ষাদানে নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়াও ৪৬৮ জন কর্মকর্তা, ১৫২ জন সহায়ক কর্মচারী এবং ১৭১ জন সাধারণ কর্মচারী বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রেখে চলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি এ পর্যন্ত ৫১৪ জনকে পিএইচ.ডি এবং ৬৯৬ জনকে এম.ফিল ডিগ্রি প্রদান করেছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৯০ জন পিএইচ.ডি এবং ২১৯ জন এম.ফিল গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন। অ্যালপার ডগার (এডি) সায়েন্টিফিক ইনডেক্সের ওয়েবসাইটে সম্পতি প্রকাশিত বিশ্বসেরা গবেষকের তালিকায় বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ১৭ শিক্ষক স্থান পেয়েছেন।
এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪টি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম সমাবর্তন ২৭ এপ্রিল ১৯৯৩ সালে, দ্বিতীয় সমাবর্তন ৫ ডিসেম্বর ১৯৯৯ সালে, তৃতীয় সমাবর্তন ২৮ মার্চ ২০০২ সালে এবং সর্বশেষ ৪র্থ সমাবর্তন ৭ জানুয়ারি ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত হয়।
উন্নয়ন চিত্র/
আবাসন ও শ্রেণিকক্ষ সঙ্কট নিরসনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ৫শত ৩৭কোটি ৭ লক্ষ টাকার মেগাপ্রকল্পের অধীনে ক্যাম্পাসে ৯টি ১০তলা ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে, চুক্তিপত্রও সম্পন্ন হয়েছে। কিছু কিছু ভবনের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় গত ১৩ অক্টোবর ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ১০০০ সিটবিশিষ্ট ১০ তলা দুটি আবাসিক হলের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়েছে। ছাত্রহলের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুবুউল আলম হানিফ। একই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম ছাত্রীহলের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। পরমাণুবিজ্ঞানী ড. এম. এ. ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান ভবন, চিকিৎসা কেন্দ্র, ২য় ডরমেটরি ভবনের উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণকাজ প্রায় শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, শিক্ষক-ছাত্র সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, মীর মশাররফ হোসেন একাডেমিক ভবন, প্রভোস্ট কোয়ার্টার, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য ১০তলা আবাসিক ভবনসহ বিভিন্ন ভবনের উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। শিক্ষার্থীদের আবাসন সঙ্কট দূরীকরণে হলসংখ্যা ৮টিতে উন্নীত করা হয়েছে, যার মধ্যে ৫টি ছাত্রহল এবং ৩টি ছাত্রীহল।
শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য বর্তমানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলে ৪৩টি গাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি এসি কোস্টার গাড়িসহ বাস-মিনিবাস ২২টি, এ্যাম্বুলেন্স ২টি, পিক-আপ ২টি।
করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর ২৫৩তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তক্রমে গত ৫ অক্টোবর লাইব্রেরি এবং ৯ অক্টোবর আবাসিক হলসমূহ খুলে দেওয়া হয়। করোনার অন্তত এক ডোজ টিকা নিশ্চিত করে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলে তোলা হয়। ২৫ অক্টোবর থেকে সশরীরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হয়েছে।
বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে দিতে সুচিন্তিত পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম মহান মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতার আদর্শে মানসম্পন্ন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার কাজে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে বেশ কিছু অর্জন থাকলেও বিশ^বিদ্যালয়টির ললাটে রয়েছে অনেক ব্যর্থতাও। একটি ভাল মানের একাডেমিক পরিবেশের অব্যাহত অভাব এর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশের অন্য যে কোন বিশ^বিদ্যালয়ের তুলানায় এখানে উন্নত একাডেমিক পরিবেশ নেই। এই বিশ^বিদ্যালয়কে বলা হয়ে থাকে ‘তিন ঘন্টার একাডেমিক ক্যাম্পাসের বিশ^বিদ্যালয়’। এখানে বেশীরভাগ শিক্ষা কার্যত্রম ১১টার পর শুরু হয়ে দুইটার মধ্যে শেষ হয়ে যায়। বেশীরভাগ শিক্ষক ক্যাম্পাসে অবস্থান না করার কারনে এটি ঘটে থাকে বলে অভিজ্ঞমহল থেকে বলা হয়েছে। বিশ^বিদ্যালয় কতৃপক্ষ সম্প্রতি প্রশাসনিক কর্মঘন্টা বৃদ্ধি করলেও একাডেমিক কর্মঘন্টা বাড়াতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন।
Leave a Reply