দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
বাজারে সয়াবিন ও পাম তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকটের কারনেই বাজারে বেড়েছে তেলের দাম। বেশি মুনাফার আশায় ব্যবসায়ীরা সয়াবিন ও পাম তেল মজুত করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে আরেক দফা বাড়ানোর সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। নির্ধারিত দর অনুযায়ী এখন থেকে প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৬০ টাকা, খোলা সয়াবিন তেলের দাম হয়েছে ১৩৬ টাকা। আগামীকাল ২০ অক্টোবর বুধবার থেকেই নতুন দর বাজারে কার্যকর হবে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। এর আগে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৫৩ টাকা। আর খোলা সয়াবিন প্রতিলিটারের দাম ছিল ১২৯ টাকা।
এ দাম বাড়ানো হবে এটা তেল বিক্রেতাদের সংগঠন জানতো। তারা সরকারের সাথে এ ধরনের আলাপ আলোচনা আগে থেকেই চালিয়ে আসছিল। জানা গেছে, বেশ কিছু দিন ধরেই আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে বাজারে আবারও সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী মিল মালিকরা। তারা বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৭ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে। ১৭ অক্টোবর সভাশেষে অতিরিক্ত সচিব সফিকুজ্জামান জানিয়েছিলেন, সভায় মিল মালিকরা প্রতিলিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৬৮ টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছিলেন। আলোচনা শেষে খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৩৬ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতিলিটার ১৬০ টাকা, বোতলজাত ৫ লিটার তেলের দাম ৭৬০ টাকা, আর পাম অয়েল প্রতি লিটার ১১৯ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। বাণিজ্যমন্ত্রী ও বাণিজ্য সচিবের অনুমোদন পেলেই এই দর কার্যকর হবে।
এমন সংবাদের পর থেকেই ব্যবসায়ীরা নিশ্চিত হন যে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে। তাই তারা আপাতত সয়াবিন ও পাম তেল বিক্রি করা কমিয়ে দিয়ে মজুত করছেন। বেশি মুনাফার আশায় ব্যবসায়ীরা এ কাজটি করছেন বলে জানিয়েছেন ভোক্তারা।
নতুন দামে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল মিলগেটে দাম ১৩৪ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১৩৫ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ১৩৬ টাকা। বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেল মিলগেটে ১৫০ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১৫৪ টাকা ও খুচরা পর্যায়ে ১৬০ টাকায় বিক্রি হবে। ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল মিলগেটে ৭২০ টাকা, পরিবেশক মূল্য ৭৪০ টাকা ও খুচরা পর্যায়ে ৭৬০ টাকা। আর পাম তেল প্রতি লিটার মিলগেটে ১১৬ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১১৭ ও খুচরা পর্যায়ে ১১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এ দাম পরিবেশক ও খুচরা পর্যায়ে পুরনো মজুতকৃত তেলের ওপর কার্যকর হবে না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, গত এক বছরের আন্তর্জাতিক বাজার দর পর্যালোচনায় দেখা যায়, এক বছর আগে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম যেখানে কেজি প্রতি ৫২ দশমিক ১১ টাকা ছিল, বর্তমানে তার মূল্য ১৩৫ দশমিক ৮৪ টাকা। অর্থাৎ এই সময়ে সয়াবিন তেলের আন্তর্জাতিক মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১৬০ শতাংশ। একই সময়ে স্থানীয় বাজার দর পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এক বছর আগে খোলা সয়াবিন তেলের বাজার দর ছিল ৮৮ থেকে ৯৩ টাকা, কিন্তু বর্তমানে তা ১২০ থেকে ১২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রয় হচ্ছে। অর্থাৎ এই সময়ে স্থানীয় বা দেশীয় বাজারে মূল্য বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় ৩৫ শতাংশ।
স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজার দর পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে যেখানে ১৬০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, একই সময়ে দেশীয় বাজারে এই মূল্য বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় ৩৫ শতাংশ। পাশাপাশি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং টিম সার্বক্ষণিক বাজার মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং পর্যালোচনার ফলশ্রুতিতে আন্তর্জাতিক বাজার দর যে পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, স্থানীয় বাজার দর সেই তুলনায় অনেক কম বৃদ্ধি পেয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের পারস্পরিক সহযোগিতামূলক মনোভাবের কারণে বাজার দর এতটা কম রাখা সম্ভব হয়েছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতি জটিলতার মধ্যেও বিশ্বে সয়াবিন তেলের উৎপাদন বেড়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে বেড়েছে দাম। বিশ্লেষকরা বলছেন, উৎপাদক দেশগুলো রফতানি বাড়িয়েছে, একই সঙ্গে ডলারের বিপরীতে সয়াবিন তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর মুদ্রা ডলারের তুলনায় শক্তিশালী হওয়ায় নাকি তেলের দাম বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী সয়াবিন তেলের উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৮০ লাখ টন। ২০২০ সালে এসে সয়াবিন তেল উৎপাদনকারী বিভিন্ন দেশে সয়াবিন উৎপাদিত হয়েছে ৬ কোটি ১০ লাখ টন। উৎপাদনকারী দেশগুলো সয়াবিনের রফতানি শুল্ক বাড়ানোর কারণেই আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম বেড়েছে। করোনার কারণে সয়াবিন তেলের উপজাত পণ্য সয়ামিলের (সয়াবিন থেকে তৈরি খাবার) চাহিদা কমে যাওয়ার কারণেও বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম।
উল্লেখ্য, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সয়াবিন তেল উৎপাদন করে চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিল। ২০১৯ সালে চীন ১ কোটি ৮০ লাখ টন ও যুক্তরাষ্ট্র ৮০ লাখ টন সয়াবিন তেল উৎপাদন করে, যা বিশ্বের মোট উৎপাদনের প্রায় ৪৫ শতাংশ। বাকিটা উৎপাদন করে ব্রাজিল। মার্কিন বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনডেক্সবক্সের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর থেকেই সয়াবিন থেকে তৈরি প্রাকৃতিক জ্বালানি বায়োডিজেলের উৎপাদন কমে গেছে। এতে বেড়েছে সয়াবিন তেলের উৎপাদন।
জানা গেছে, উৎপাদনকারী দেশগুলোর চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বে উৎপাদিত সয়াবিন তেলের মাত্র ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ বা ১ কোটি ২৬ লাখ টন তেল আসে আন্তর্জাতিক বাজারে। বিশ্বে সয়াবিন তেল আমদানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। সবচেয়ে বেশি তেল আমদানি করে ভারত। এরপরই আছে আলজেরিয়া। এ বছর চীনও আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সয়াবিন তেল কিনছে।
এদিকে ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে বর্তমান দামে সয়াবিন তেল বিক্রি করা সম্ভব নয়। তাই আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি, যাতে বিদ্যমান দর পুনর্র্নিধারণ করে।
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি